রহস্যের শুরু তার নাম দিয়েই।
কেউ বলেন মেহেদী, কেউ বলেন মাহাদী। ইংরেজী বানানটা অনুসর করলে উচ্চারণ দাড়ায় – মাহেদী হাসান। এতোরকম ভ্রান্তির কথা শুনে তিনি একটু হেসে বললেন, ‘আসলে মেহেদী হাসানই হবে উচ্চারণটা। কিন্তু পাসপোর্টে বানান ভুল হওয়ায় এরকম হয়ে গেছে।’
নামেই অবশ্য রহস্য শেষ নয়। এর পরের প্রশ্ন, মেহেদী আসলে কী বোলার, নাকি ব্যাটসম্যান? ব্যাটসম্যান হলে তিনি কী টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, নাকি লোয়ার অর্ডার? আরও প্রশ্ন আছে – তিনি কী মারকুটে ব্যাটসম্যান, নাকি ধীরস্থির?
এসব প্রশ্নের জবাব খুজতে গিয়ে মেহেদীকেই একটু বিভ্রান্ত মনে হলো। শেষমেশ হাল ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গি করে বললেন, ‘আসলে দলের যখন যা দরকার, সেভাবে খেলতে যাই। যা করলে দল জিতবে, তাই আমার পরিচয়!’
মেহেদী কিন্তু এটা কথার কথা বলেননি। এই প্রেসিডেন্টস কাপের ম্যাচটার কথাই ধরুন। তামিম ইকবাল একাদশ যখন রানের সংকটে ভুগছিলো, বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যান যখন কুল পাচ্ছিলেন না; তখন নয় নম্বরে নেমে ৫৭ বলে ৮২ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেললেন। এ দেখে অনেকেই ভাবছেন, তিনি মারকুটে ব্যাটসম্যান। কিন্তু এটা মেহেদীর একটা বিজ্ঞাপন মাত্র।
মেহেদী ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন টপ অর্ডারে। এক, দুই, তিনেই ব্যাট করতেন। সেখানে ব্যাট করে ৬টা প্রথম শ্রেনীর সেঞ্চুরিও আছে তার। ১৭৭ রানের ইনিংসও খেলেছেন দু’বার। সে সময় খুবই মাথা ঠান্ডা এবং ধীর-স্থির একজন ব্যাটসম্যান বলে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের দিকে বিপ্লব হয়ে গেলো।
সেবার কুমিল্লার হয়ে আইপিএল খেলতে গিয়ে মুলত অফ স্পিনার হিসেবে সামনে এলেন। পাশাপাশি লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করতেন। পরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটেও মূলত স্পিনার হয়ে গেলেন; লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং শুরু করলেন। আবার পরের আইপিএলে ঢাকায় ইনিংস শুরু করলেন এবং কয়েকটা ঝড়ো ফিফটি করলেন।
এই বারবার ভূমিকা বদল নিয়ে বলতে গিয়ে মেহেদী বললেন, আসলে তিনি বোলার হিসেবেই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, ‘আমি এজ লেভেলে মূলত বোলিং অলরাউন্ডার ছিলাম। তখন স্পিনটাই করতাম। পরে ব্যাটিংয়ে একটু নজর দিলে টপ অর্ডারে চলে যাই। আবার বিপিএলে কুমিল্লার হয়ে বোলিং বেশি করেছি, টপ অর্ডারে চান্স পাচ্ছিলাম না। এখন লোয়ার অর্ডারেই ব্যাট করতে হচ্ছে।’
এ নিয়ে মেহেদীর কোনো আফসোস নেই। তার কথা, ‘আমি আসলে দলের জন্য খেলতে চাই। দল যদি নয় নম্বরে পাঠায়, ওখানে যেভাবে খেলা দরকার, সেভাবে খেলবো। আমি সব ভাবেই ব্যাটিং করতে পারি। আমাকে আপনি এক থেকে ১১ যে কোনো জায়গায় পাঠাতে পারেন।’
এসব তথ্য ও কথা বলে দেয় যে, মেহেদীর যোগ্যতা আছে খাটি একজন অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার। সাকিবের পাশে একটা জায়গা তো ফাকাই আছে। ইতোমধ্যে চারটি আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা মেহেদীরও চোখটা আসলে সেখানে, ‘সবার মতো আমিও স্বপ্ন দেখি। জাতীয় দলে নিজেকে নিয়মিত করতে চাই। অলরাউন্ডার হিসেবে সার্ভিসটা দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো লাগবে।’
মেহেদী হাসানের ব্যক্তিগত সময় বিচার করলে, সেটা ভালোই কাটছে।
প্রেসিডেন্টস কাপ ও বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ভালোই করেছেন বলা যায়। বলে খুব বেশি সুযোগ পাননি। ব্যাটে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। অন্তত নিয়মিত মিডল অর্ডারে নেমে নিজের কাজটা করেছেন। টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের শুরুতে একটা ফিফটিও করে ফেলেছেন।
আর ধারাবাহিক এই পারফরম্যান্সের পুরষ্কার হিসেবে এবার ওয়ানডে দলেও ডাক পেয়ে গেছেন। খুব অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে এবার ওয়ানডে অভিষেকটাও তার সম্ভবত হয়ে যাবে। আর সেখানে তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকার কথা অলরাউন্ডারের জন্য জায়গাটা।
সাকিব আল হাসানের উত্তরসুরী তৈরী করতে এর চেয়ে ভালো শুরুর সময় তো আর হতে পারে না!