বিরাটের পদাঙ্কে শুভমান

এইতো সেদিন বিরাট কোহলি নিজেকে একটু আড়াল করতে চাইলেন। মাথায় থাকা ক্যাপটা একটু নিচের দিকে টেনে মুখ লুকিয়ে ফেললেন। বিষাদের বিশ্রী রুপ তিনি দেখাতে চাইলেন না। তবে মনের ভেতরে থাকা ঝড়টা নিশ্চয়ই সবাই দেখে ফেলেছে ততক্ষণে।

গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে জিতলেই তো মিলে যেতো প্লে-অফের টিকিট। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ‘কিং কোহলি’ জ্বলে উঠলেন। দুরন্ত গতির এক ইনিংস খেললেন। করে ফেলেন শতক। এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) আসরে, এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।

তবে সেই সেঞ্চুরি ম্লান হয়ে গেল। বিলীন হয়ে গেল রয়েল চ্যালেঞ্জার্সের শিরোপা জয়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ। ২৪ বছরের শুভমান গিল নিছক এক ইনিংস বানিয়ে রাখলেন বিরাট কোহলির দারুণ সেই ইনিংসে। নিজের ইনিংসটির পাশে শুভমান বসিয়ে নিলেন দূর্দান্ত এক বিশেষণ। খানিকটা স্বার্থপরের মতই কাজ। তবে তিনি সেটা করেছেন দলের জন্যে।

আরেকটু বিস্তৃতি ছড়িয়ে বললে, তিনি দেশের জন্যে করেছেন। তিনি যে বিরাট কোহলির ফেলে যাওয়া হাল ধরতে প্রস্তুত, সেই বার্তাই তো দিলেন। ভারত টপ অর্ডারের স্তম্ভ শচীন টেন্ডুলকার যখন চলে গেলেন, তখন একটা শূণ্যতা তৈরি হয়েছিল। শঙ্কা জেগেছিল সবার মনে। সেই শঙ্কার মেঘ থেকে অবারিত ধারা হয়েই আগমন ঘটেছিল বিরাট কোহলির।

সময়ের পরিক্রমায় তো সবাইকে ছেড়ে যেতে হয় স্বস্থান। সেখানে আসে নতুন কেউ। শুভমান গিল নিজের মধ্যে উত্তরসূরী হওয়ার সকল রসদ নিয়েই প্রস্তুত। অন্তত অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ম্যাথু হেইডেন তেমনটাই মনে করেন। কিছুদিন আগে তিনি ভারতীয় এক গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘ইতোমধ্যেই (গিল) সেখানে আছে’, বিরাটের উত্তরসূরি হওয়ার জন্যে গিল নিজেকে প্রমাণ করছেন প্রতিনিয়ত।

এবারের আইপিএলে তো রীতিমত দুইজনের মধ্যে চলেছে রানের লড়াই। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন শুভমান গিল, তার পরেই অবস্থান বিরাটের। দুইজনই দুইটি করে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। তাছাড়া একই ম্যাচে ভারতের বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেঞ্চুরি দেখেছে বিশ্ব।

তবে বিশালতার দিক থেকে বিরাটকে ছাপিয়ে যেতে পারবেন নাকি সেটা সময় বলে দেবে। এমনও হতে পারে দুইজনের ক্যারিয়ারের উচ্চতা হবে ভিন্ন। কেননা দুইজনের খেলার ধরণও তো ভিন্ন। একই ম্যাচে দুইজনের সেঞ্চুরির একটু গভীরে ঢুকলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।

সেই ম্যাচে কোহলি তার সেঞ্চুরি অবধি পৌঁছাতে দশ বল বেশি খেলেছেন। খালি চোখে অবশ্য দশ বলের পার্থক্যটা বেশি নয়। তবে বর্তমান ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বেশ বড়ই বলা চলে। তবুও বিরাট কোহলি ১৩টি বাউন্ডারির পাশাপাশি ১টি ছক্কা মেরেছেন। অর্থাৎ ১৪ বল থেকে বিরাট রান করেছেন ৫৮।

অন্যদিকে শুভমান পাঁচটি চার ও ৮টি ছক্কা হাকিয়েছেন। তাতে ১৩ বলে ৬৮ রান পেয়েছেন শুভমান। এটাই প্রমাণ করে দুইজনের খেলার ধরণে রয়েছে বিস্তর ফারাক। সেটা থাকাই স্বাভাবিক। বিরাট যখন তার ক্যারিয়ার শুরু করেন তখন বাউন্ডারির থেকে ক্ল্যাসিকাল শটগুলোই বেশি আনন্দ দিয়েছে ব্যাটার থেকে শুরু করে দর্শক-সমর্থকদের।

দিন বদলেছে। এখন ক্রিকেট কেবলই বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারির খেলা। এই জেনারেশনের খেলোয়াড়রা তাইতো বাউন্ডারি হাঁকাতেই অনেক বেশি পটু। সেদিক থেকে গুভমানের বাড়তি পাওয়া তার কব্জির নমনীয়তা। তিনি চাইলেই লেগ সাইড দিয়ে বিশাল সব ছক্কা হাকাতে পারেন।

একটা সময় শুভমান ৩০ কিংবা ৪০ এর ঘরে আউট হয়ে যেতেন। সেই সময়ও পেছনে ফেলেছেন তিনি। প্রতিনিয়ত আগের থেকে বেশি ধারাবাহিক হচ্ছেন শুভমান গিল। সামগ্রিকভাবেই তাই সবাই মেনে নিতে চাইছে শুভমানই হতে পারেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটারদের যোগ্য উত্তরসূরী। কিন্তু পথটা ভীষণ দূরের।

তবে গিলের এমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সাথে, বিরাটের ফর্মে ফেরা। এই সব বিষয়গুলো নিশ্চয়ই বেশ উপভোগ্য হতে চলেছে ভারতের ক্রিকেট সমর্থকদের জন্যে। সামনেই তো এশিয়া কাপ ও এরপরই বিশ্বকাপ ঘরের মাটিতে। শুভমান গিলের এমন দূর্দান্ত সময়ে তাকে দলের বাইরে রাখা নেহায়েত বোকামি। তেমনটা নিশ্চয়ই ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টও করতে চাইবেন না।

ভারতের দুই প্রজন্মের দুই ব্যাটারের যুগলবন্দীটা ঠিক কতটা আনন্দদায়ক হয়, সেটাই এখন দেখবার পালা। ভারতের ব্যাটিং ধারার রিলে দৌড়ে শেষ অবধি ব্যাটনটা শুভমান কতদূর বয়ে নিয়ে যেতে পারেন, তা হয়ত সময়ই বলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link