ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের বিশ্বায়নে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্তমান চিত্রটা অনেকটা জীর্ণদশার মতো। আগের মতো ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রাচুর্য্যতা নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আগমনে অনেকের কাছে পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটটাই বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে।
ভারতীয় ক্রিকেট গ্রেট স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারই ওয়ানডে ক্রিকেটকে নিয়ে নিজের বিরক্তির কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন। ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেন তো বলেই দিয়েছেন, ক্রিকেট যেভাবে চলছে, তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মৃতপ্রায় হলো বলে!
সাবেক ক্রিকেটারদের এমন মতামত অবশ্য ফেলে দেওয়া মতো নয়। সময়ের সাথে গজিয়ে উঠছে নিত্য নতুন ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট। আইপিএল শেষ হতে না হতেই জুলাই থেকে মাঠে গড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মেজর টি-টোয়েন্টি লিগ।
এ ছাড়া ভবিষ্যৎ ক্রিকেট সূচিতে রয়েছে, লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগ। আর বছরের অন্যান্য সময় গুলোতে পিএসএল, এসএ টি-টোয়েন্টি, আইএলটি-টোয়েন্টি কিংবা বিপিএলের আয়োজন তো থাকছেই। বছর জুড়েই যেন ফ্রাঞ্চাইজি লিগ গুলোর জমকালো আয়োজন।
অবাক করা ব্যাপার হলো, এই টুর্নামেন্ট গুলোতে খেলতে অনেক নামী ক্রিকেটার দেশের সাথে চুক্তিও বাতিল করছেন। এই বছরের শুরুতেই যেমন নিউজিল্যান্ডের সাথে চুক্তি থেকে সরে এসেছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। এ ছাড়া, ইংলিশ ৬ ক্রিকেটারকে পূর্ণ মেয়াদে পাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে আইপিএলের দলগুলো।
সব মিলিয়ে আর্থিক সুবিধার কারণে অনেকেই জাতীয় দলের সাথে চুক্তি শেষ করে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সাথে জুটি বাধছেন। আর এতেই এই অল্প সময়ের মধ্যেই ক্রিকেটের সংজ্ঞাটা পাল্টে গিয়েছে।
অবশ্য ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এমন বিশ্বায়নের পরেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তার নিজ গতিতে চলবে বলেই মনে করেন আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার অব ক্রিকেট ওয়াসিম খান। তাঁর মতে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে এভাবেই সহাবস্থানে চলতে হবে।’
এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচি। এটা অবশ্যই মানতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেও এভাবে সমন্বয় করে চলতে হবে। কোনো টুর্নামেন্ট বাদ দেওয়া সমাধান হতে পারে না। এই যেমন আমরা সফলভাবে টানা দুইবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ আয়োজন করলাম। এতে কিন্তু বেশ সাড়া এসেছে।’
‘অথচ গত কয়েক বছর আগেও সবাই বলছিল, টেস্ট ক্রিকেট মৃতপ্রায়। কিন্তু আমরা লাল বলের ক্রিকেটকে নিয়ে আরো ৮ বছরের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে রেখেছি। তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নেই, এমন কথা বললেও, সেটা ভুল বলা হচ্ছে। সব ধরনের টুর্নামেন্টের সাথেই সমন্বয় করে আমরা সামনের দিকে এগোচ্ছি।’, যোগ করেন তিনি।
আইসিসি আগের চেয়ে অনেক বেশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে তা নিয়ে ওয়াসিম খান বলেন, ‘সময় যত গড়াচ্ছে, আইসিসি তত সমৃদ্ধ হচ্ছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও মানুষের চাহিদা আছে। আর এ কারণেই আমরা প্রতি বছর আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে লভ্যাংশ তৈরি করতে পারছি। এটা কিন্তু বাড়ছেই প্রতি নিয়ত।’
তবে এরপরেও আইসিসি’র আরো কিছু করণীয় রয়েছে মন্তব্য করে ওয়াসিম খান বলেন, ‘আমরা এখন দুই বছর পরিকল্পনা নিয়ে চক্রাকারে এগোচ্ছি। অর্থাৎ আগামী দুই বছরের জন্য সব কিছুই ঠিক করা থাকছে। আর এই চক্রে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কখনোই বিলীন হওয়ার কথা নয়। তারপরও নিজের পরিকল্পনা কিংবা ভাবনায় আরো উন্নতি আনার সুযোগ আছে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’