পরিকল্পনা করে উইকেট নিতে পটু মুশফিক

আগের ওভারটায় অফ স্ট্যাম্পের বাইরের লাইন ধরে বল করেছেন মুশফিক হাসান। মাঝে মধ্যে হুট করেই স্ট্যাম্প বরারবর বল করে ভরকে দিয়েছিন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে। এরপর মুশফিক যখন আবার ওভার করতে এলেন। তখনও তামিম স্ট্রাইকে। এবারে বাজিমাত। ফুলার লেন্থের বলটা সোজা গিয়ে আঘাত করেছে স্ট্যাম্পে, ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে।

‘আমি গেমের আগেরদিন পরিকল্পনা করেছিলাম যে তামিম ভাইকে কোথায় বোলিং করলে ওনার উইকেটটা নিতে পারব। তার পরদিন যে পরিকল্পনা করেছিলাম সেটা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।’ বোলিংটা যে মাথা খাটিয়ে পরিকল্পনার ছক কষে করতে হয় সেটা আয়ত্ব করে ফেলেছেন তরুণ মুশফিক হাসান।

মুশফিক হাসানের বয়স পেরোয়নি ২০ এর গণ্ডি। তবে এরই মধ্যে ক্রিকেট জ্ঞান প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি জানেন শুধুমাত্র নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধিই মূল রসদ হতে পারে না। চাই বুদ্ধিদীপ্ততা আর প্রতিপক্ষ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। প্রতিপক্ষ ব্যাটার বিশ্বমানের হলেও তার কোন না কোন ত্রুটি থাকবেই। একজন বোলার হিসেবে সেই ত্রুটি খুঁজে বের করতে হবে। সে কাজটা করতে জানেন মুশফিক।

২৪ তম জাতীয় ক্রিকেট লিগে সে কাজটাই করে দেখিয়েছিলেন ডান-হাতি স্পিডস্টার মুশফিক হাসান। চট্টগ্রাম বিভাগের বিপক্ষে সেবার রংপুর বিভাগের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন মুশফিক। প্রতিপক্ষ শিবিরে ছিলেন তামিম ইকবাল। সেই তামিমকে আউট করার নীল নকশা করে রেখেছিলেন তিনি আগেভাগেই। খেলার আগেরদিন রাতেই সেই চিত্রনাট্যটা এঁকে ফেলেন মুশফিক।

গেল এনসিএলটা দূর্দান্ত কেটেছিল মুশফিক হাসানের। গতির ঝড় আর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের ৬ ম্যাচে নিয়েছিলেন ২৫ উইকেট। দারুণ সেই পারফরমেন্সের সুবাদেই তিনি এবার জাতীয় দলের শিবিরে। অবিশ্বাস্য একটা যাত্রাই বলা চলে।

একজন পেসারের আসল চরিত্রটাই যেন ফুটে ওঠে সাদা পোশাকে। সেই সাদা পোশাক দিয়েই যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে মুশফিকের। ক্রিকেটীয় দক্ষতা আর মানসিক দৃঢ়তা প্রমাণের বেশ উৎকৃষ্ট এক মঞ্চ টেস্ট ক্রিকেট। অন্তত পেসারদের জন্যে তো বটেই। যদিও আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে মুশফিকের অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীন।

কেননা দেশের পেস আক্রমণ বর্তমানে রয়েছে দারুণ ছন্দে। তাসকিন, এবাদত আর শরিফুলের মূল একাদশে জায়গা পাওয়ার সম্ভবনাই বেশি। অন্যদিকে অভিজ্ঞতা বিচারে খালেদ আহমেদও রয়েছেন স্কোয়াড। এত সব অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের পেছনে ফেলে প্রথম ডাকেই একাদশ মুশফিক চলে আসবেন তেমনটা ভাবা বোকামি।

আবার একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে, মুশফিকের অভিষেক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ফেলে দেওয়া যায় না। কেননা বেশ আনকোড়া একটা দল নিয়েই টেস্ট খেলতে আসছে আফগানরা। তেমন একটা দলের বিপক্ষে তরুণ একজন খেলোয়াড়কে বাজিয়ে দেখা যেতেই পারে।

যদি তেমনটা হয়, তবে মুশফিক নিশ্চয়ই পরিকল্পনার ছক আঁকবেন আবার নতুন করে। আফগানদের টপ অর্ডার ব্যাটারদের গুড়িয়ে দিতে নীলনকশা তৈরি করবেন মুশফিক হাসান। তেমনটাই তো প্রত্যাশিত তার কাছ থেকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকতে হলে তো প্রতিপক্ষকে পড়া ভীষণ জরুরী।

সে কাজটা তো ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেই করে অভ্যস্ত মুশফিক হাসান। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটেও তিনি পরিকল্পনামাফিক এগোতে চাইবেন নিশ্চয়ই। মাঠে এবং মাঠের বাইরের নিজেকে প্রস্তুত রাখার বার্তাই তো দিয়েছেন। এখন শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link