মুমিনুল হকের ইনিংসটা নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। আজ শুরু থেকেই তাঁর অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশন ছিল ইতিবাচক। অথচ এর আগের ইনিংসটাতেও ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন বেশ নড়বড়ে, বিশেষ করে স্পিনারদের বিপক্ষে।
২৫ বলে ১৫ রানের সেই ইনিংসটার বেশিরভাগ সময় আফগান স্পিনারদের বারবার পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে সংগ্রাম করেছেন মুমিনুল। পরে সিমার নিজাত মাসুদের একটা শর্ট লেংথের ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
গেল বুধবার চোখের সামনে ওই ইনিংসটা দেখে ২০১৭ সালের কথা মনে পড়ে যায় আমার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট দল থেকে মুমিনুল বাদ পড়ায় তখন তুমুল হইচই আমাদের ক্রিকেট পাড়ায়। কাঠগড়ায় কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে।
মূলত তাঁর সিদ্ধান্তেই মুমিনুলকে দল থেকে বাদ দেন নির্বাচকরা। মুমিনুলের বাদ পড়ার পেছনে দুটা কারণও তখন জানিয়ে দেন হাথুরু। এক, স্পিনের বিপক্ষে দুর্বলতা। দুই, বাউন্স সামলাতে না পারা। চলতি ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসেও তাঁর এ দুটা দুর্বলতা প্রকাশ পায়।
যদিও দুই দিন যেতে না যেতেই আজ এক অন্য মুমিনুলের দেখা মিলেছে শেরে বাংলায়। তাঁর আজকের ইনিংসটা ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশ গোছানো। তাছাড়া ব্যাটিংয়ে তাঁর নিয়ন্ত্রণও ছিল দুর্দান্ত।
যেই স্পিনের বিপক্ষে বারবার উইকেট হারানোয় ছয় বছর আগে প্রথমবারের মতো দল থেকে বাদ পড়েন তিনি, এমনকি সাম্প্রতিক অতীতে চলমান ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসের মতো গেল বছর দক্ষিণ আফ্রিকায়ও স্পিনের বিপক্ষে প্রকাশ পায় তাঁর অসহায়ত্ব, সেই স্পিনের বিপক্ষেই আজ কতটাই না স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন মুমিনুল!
এদিন ভিন্ন এক পরিকল্পনায় স্পিনারদের মোকাবিলা করেন মুমিনুল। গেল ইনিংসে স্পিনারদের সিংহভাগ বলই যখন পেছনের পায়ে খেলেছেন, সেখানে আজ শুরু থেকেই স্পিনারদের সামনের পায়ে খেলে যান তিনি। তাছাড়া তাঁর পায়ের কাজও ছিল ওই ইনিংসটার চেয়ে বিস্তর ভালো।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করার সময় মুমিনুলের পা-টাও যেন ঠিকমতো নড়ছিল না। সব মিলিয়ে আজকের ইনিংসটার প্রায় পুরোটাই নিজের নিয়ন্ত্রণে খেলেন মুমিনুল। একেবারে ঠিকঠাক না হলেও শতকরার হারে সেটা ৮০ ভাগ তো হবেই।
এক সময় ঘরের মাঠে শতক হাঁকানোটাকে ‘বাঁ-হাতের খেল’ বানিয়ে ফেলা মুমিনুলকে মিরপুরের এই শতক অর্থাৎ নিজের বারোতম টেস্ট শতকটা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৬ ইনিংস এবং দুবছরেরও বেশি সময়। নিশ্চয় এ শতকটা আপাতত তাঁকে স্বস্তি দেবে এবং সামনের ম্যাচগুলাতে জোগাবে আত্মবিশ্বাস। আর সেটা হলেই তো ভালো। এই মুমিনুলকেই যে চাই বাংলাদেশের!