মঞ্চ প্রস্তুত সৌম্যের জন্য

যে গুটিকয়েক ক্রিকেটারকে নিয়ে এখনো আফসোস করে বাংলাদেশিরা, যাদের ক্যারিয়ারে সম্ভাবনা আর প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক তাদের একজন সৌম্য সরকার। সৌম্যকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল আকাশ ছোঁয়া, অথচ এখন জাতীয় দলের আশেপাশে থাকার মত পারফরম্যান্সও নেই তাঁর।

কিন্তু পুরনো ফর্ম বিবেচনায় সৌম্য সরকার ঠিকই আছেন জাতীয় দলের কাছাকাছি। নামের ভারেই কিংবা হেডকোচের প্রিয় শিষ্যদের একজন – যেটিই হোক কারণ, সৌম্য ঠিকই সুযোগ পেয়েছেন ইমার্জিং এশিয়া কাপ দলে। উদীয়মান এক ঝাঁক তরুণের পাশাপাশি সৌম্যও নিজেকে প্রমাণ করার জন্য খেলবেন মহাদেশিয় টুর্নামেন্টে। এর আগেও এমন এই টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।

বর্তমান বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে ব্যাকআপ ওপেনার, সাত নম্বর ব্যাটার এবং পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ঘাটতি রয়েছে। অদ্ভুত মনে হলেও সত্যি যে একজন সৌম্য সরকারের মধ্যেই রয়েছে তিন সমস্যার সমাধান। তাই এশিয়া কাপ আর বিশ্বকাপের মত আসর সামনে রেখে নির্বাচকরা বাজিয়ে দেখতে চাইছেন এই বাঁ-হাতিকে।

কিন্তু সৌম্য সরকারের যে ফর্ম তাতে কোন সমস্যারই সমাধান নেই তাঁর কাছে; উল্টো তিনিই দলের সমস্যা হয়ে উঠছেন। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মোহামেডান তো কয়েক ম্যাচ পর একাদশ থেকেই বাদ দিয়েছিল তাঁকে। তবু ইমার্জিং এশিয়া কাপে জাকির, জয়দের সঙ্গী হয়েছেন সৌম্য। এখন দেখার বিষয়, এই টুর্নামেন্টে কেমন করেন তিনি।

ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে নাইম শেখ ইতোমধ্যে আফগানিস্তান সিরিজে সুযোগ পেয়েছেন। ভাল করতে পারলে নি:সন্দেহে তিনি ধরবেন বিশ্বকাপের বিমান। তবে পেস বোলিং অলরাউন্ডার এবং সাত নম্বর ব্যাটারের জায়গা এখনো খালি; তাই সৌম্য সরকারের পারফরম্যান্সের উপর চোখ রাখবে টিম ম্যানেজম্যান্ট। শুধু পরিসংখ্যানের পাতা ভারি করার মত নয়; কোচ, নির্বাচকদের সন্তুষ্ট করার মত পারফর্ম করতে পারলে জাতীয় দলের স্কোয়াডে চলে আসবেন তিনি।

১৩ জুলাই নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কা এ দলের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। গ্রুপের বাকি দুই সদস্য ওমান এবং আফগানিস্তান এ দলের সাথে ম্যাচ দুইটি হবে যথাক্রমে ১৫ এবং ১৮ জুলাই। আপাতত সৌম্য সরকারের পারফরম্যান্স দেখার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ।

লাল-সবুজের ক্রিকেটে সৌম্য সরকারের শুরুটা হয়েছিল সকালের জ্বলমলে সূর্যের মতই। তখনকার অনভিজ্ঞ তরুণ ব্যাটার সৌম্য নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছিলেন বিশ্বকাপের মত মঞ্চে; পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলগুলোর বিপক্ষে তাঁর সাহসী ব্যাটিং স্বপ্ন দেখিয়েছিল বাংলাদেশকে। শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে ছেপে ধরার মত একজন ব্যাটার পাওয়া গিয়েছে – এমনটাই হয়তো ভেবেছিল সবাই।

অথচ মাঝ আকাশে আসার আগেই সূর্য ডুবে গিয়েছে মেঘের আড়ালে। সৌম্য সরকারকে এখন পারফর্মারের লিস্টে খুঁজে পাওয়াই দায়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ কিংবা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট – ইন ফর্ম সৌম্যের দেখা মেলেনি কোথাও৷ তবু ভরসা হারাননি কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে। যার অধীনে অভিষেক হয়েছিল সেই হাথুরু আবারো জাতীয় দলের ফেরার রাস্তা বাতলে দিয়েছেন সৌম্যকে, প্রমাণের সুযোগ দিয়েছেন ইমার্জিং এশিয়া কাপে।

নিজের মৃতপ্রায় ক্যারিয়ারকে পুনর্জীবন দেয়ার এটাই হয়তো শেষ সুযোগ সৌম্য সরকারের জন্য। ইমার্জিং এশিয়া কাপে দারুণ কিছু করতে পারলে হয়তো মিলবে আসল এশিয়া কাপে খেলার টিকিট। সেখান থেকে কিউই সিরিজ এমনকি বিশ্বকাপও খেলতে পারবেন তিনি।

কুড়িয়ে পাওয়া সুযোগ অবশ্য কাজে লাগাতে হবে সৌম্য সরকারকে। নিন্দুকদের সমালোচনা আর ব্যঙ্গ বিদ্রুপ পিছনে ফেলে লিটন, শান্তদের মত কামব্যাক করতে পারলেই মিলবে ক্রিকেটপ্রেমীদের ভালবাসা, আর সেটা যে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হবে তাও প্রায় নিশ্চিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link