বন্যেরা বনে সুন্দর, নাইম ঢাকা লিগে

দলে ব্যাকআপ ওপেনারের প্রয়োজন; ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে ইনফর্ম ওপেনারের তাই ডাক পড়লো। অথচ নিজের জায়গা পাকা করার সুযোগ হেলায় হারালেন তিনি – গল্পটা মোহাম্মদ নাইম শেখের; সুযোগ পেয়েও পর পর দুই ম্যাচে ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণ করেছেন তিনি। টিম ম্যানেজম্যান্টের ভরসাকে যেন ব্যঙ্গই করেছে তাঁর এই ব্যর্থতা।

তামিম ইকবালের অনুপস্থিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একাদশে জায়গা পেয়েছিলেন নাইম শেখ। এশিয়া কাপের বিমান ধরতে ফারুকি, মুজিবদের বিপক্ষে ভাল কিছু করতে হতো তাঁকে। কিন্তু ভাল কিছু তো দূরে থাক, এই ব্যাটার কি না রীতিমতো অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন বাইশ গজে। প্রথম ম্যাচে ২১ বল খেলে করেছেন নয় রান, দ্বিতীয় ম্যাচে খুলতেই পারেননি রানের খাতায়; যদিও মোকাবিলা করেছেন আটটি বল।

আফগানদের বিপক্ষে যতক্ষণ মাঠে ছিলেন কখনোই সাবলীল মনে হয় নি নাইম শেখকে। যদিও লিস্ট এ ক্রিকেটের পরিসংখ্যান বিবেচনায় তিনিই দেশের অন্যতম সেরা তারকা। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন নাইম। ১৬ ইনিংস ব্যাট করতে নেমে ৯৩২ রান করেছিলেন তিনি, ব্যাটিং গড় প্রায় ৭২ ছুঁই ছুঁই আর স্ট্রাইক রেট নব্বইয়ের ঘরে। আর এই বামহাতির গড় আফগানদের বিপক্ষে মাত্র ৪.৫ আর স্ট্রাইক রেট ৩০ এর কাছাকাছি।

দুই ম্যাচেই নাইম শেখ আউট হয়েছেন প্রায় একই ধরণে; অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বল জায়গায় দাড়িয়ে খেলতে গিয়ে এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তাঁর ফুটওয়ার্ক নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু তিনি যে সেটা নিয়ে কাজ করেননি সেটা বোঝা যায় আউটগুলো দেখলে।

দেশি বোলারদের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া রান করেও জাতীয় দলের হয়ে দুই অঙ্কের ঘরেও পৌঁছাতে পারেননি নাইম শেখ। যাকে একসময় ভাবা হতো লাল-সবুজের ভবিষ্যৎ ওপেনার, তিনি এখন নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যর্থদের তালিকায় স্থান দিয়েছেন। মজা করে তো দর্শকেরা বলছেন, বন্যেরা বনে সুন্দর আর নাইম শেখ ডিপিএলে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাথে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে বরাবরই তুলনা হয়, আর সেসব তুলনায় স্পষ্ট হয় দেশের ক্রিকেট কাঠামোর পিছিয়ে থাকা। এবার নাইম শেখের পারফরম্যান্সেও প্রমাণ মিলেছে সেসবের। অধিকাংশ গড়পড়তা বোলার, ধীরগতির পিচ সবমিলিয়ে ডিপিএলের গুণগত মান নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল সেটিই উত্তর মিলেছে এবার।

এছাড়া আরেক ডিপিএল পারফর্মার আফিফ হোসেনও পারেননি নামের প্রতি সুবিচার করতে। প্রথম ম্যাচে ৪ রান করার পরে দ্বিতীয় ম্যাচে উপহার দিয়েছেন গোল্ডেন ডাক। যদিও দুই ম্যাচে তাঁর কাছে ধীরে সুস্থে ইনিংস বিল্ড করার সময় ছিল।

সত্যি বলতে আফগানিস্তানের বোলিং লাইনআপ বেশ শক্তিশালী। তামিম ইকবাল তো বটেই, ইন ফর্ম লিটন, শান্তরাও বেশ ভুগেছেন রশিদ, মুজিবদের বিপক্ষে। তবে এসব বলে নাইম, আফিফের বাজে পারফরম্যান্সকে আড়াল করার কোন যুক্তি নেই। ধারণা যায় যে, জাতীয় দল থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন আবাহনীর হয়ে ডিপিএল মাতানো এই দুই ক্রিকেটার।

সামনেই এশিয়া কাপ, এরপর বছরের শেষদিকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডে, স্বাভাবিকভাবেই তাই দুইটি বড় আসরকে ঘিরে প্রত্যাশাও বড়। দল গুছানোর কাজও প্রায় শেষ, সংশয় ছিল কেবল তৃতীয় ওপেনার, সাত নম্বর ব্যাটার নিয়ে।

মোহাম্মদ নাইমের সামনে তাই সম্ভাবনা ছিল ভাল কিছু করে দলে থিতু হওয়া, কিন্তু তিনি দেখালেন বিভীষিকাময় ব্যাটিংয়ের এক প্রদর্শনী। একই কথা বলা যায় আফিফ হোসেনকে নিয়েও; বাংলাদেশকে তাই হয়তো এই দুই পজিশন নিয়ে আবারো ভাবতে হবে নতুন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link