এশিয়া কাপ ইস্যু কিংবা বোর্ডে রদবদল, চলতি বছরে আলোচনায়, সমালোচনায় সবচেয়ে বেশি খবরের শিরোনাম হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। এবার সেই বোর্ডেরই কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক পিসিবি প্রধান খালিদ মাহমুদ। তাঁর মতে, এই বোর্ডের সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কোনো ক্ষমতাই নেই।
সম্প্রতি পাকিস্তানের এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া, না নেওয়া সহ বোর্ডের বেশ কিছু বিষয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সাবেক এ বোর্ড প্রধান। তাঁর মতে, ভারতে বিশ্বকাপে না যাওয়াটাই হবে সবচেয়ে বোকামি সিদ্ধান্ত।
এ নিয়ে স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো আঞ্চলিক টুর্নামেন্ট না। এটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। এখানে কোনোভাবেই বিশ্বকাপ বর্জন করার সিদ্ধান্তটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
এখানে আরো যুক্ত করে তিনি বলেন, ‘দেখুন, বিশ্বকাপ বর্জন করার যুক্তিতে আপনি নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রশ্ন তুলতেই পারেন। কিন্তু একটা সময়ে পরে এসে যখন আপনি এমন কারণ দেখান যে, ভারত এশিয়া কাপে আসেনি, তাই পাকিস্তানেরও ভারত বিশ্বকাপে যাওয়া উচিৎ নয়, তখন আপনার কাণ্ডজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। বিশ্বকাপে না যাওয়ার জন্য আপনার সত্যই কোনো ইস্যু আছে নাকি স্রেফ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বর্জন করার চেষ্টা করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।’
এ পর্যায়ে খালিদ মাহমুদ তাঁর নিজ সময়কালের কথা টেনে বলেন, ‘আমি ১৯৯৯ সালে পিসিবির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন যে কোনো সিরিজের আগে নিরাপত্তা ইস্যুটা সামনে নিয়ে আসতাম। আমরা পর্যবেক্ষক দল পাঠাতাম। এরপর সরকারের অনুমতি নিয়ে দল পাঠাতাম।’
বর্তমানে পিসিবি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ যে পরবর্তীতে আইসিসির সভায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে পারেন সেই শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন খালিদ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমার তো মনে হচ্ছে, আইসিসির পরে সভাতেই বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে জাকা আশরাফ। কারণ এই বোর্ড কোনো সিদ্ধান্তে অনড় না। তাদের মধ্যে চরম মাত্রায় অদূরদর্শিতা বিদ্যমান।’
ভারতে গিয়ে বিশ্বকাপ খেলার ব্যাপারে পাকিস্তানের আপত্তির সূত্রপাত মূলত এশিয়া কাপকে ঘিরে। ভারত আর পাকিস্তান— দুই দেশের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকারের অনুমতি না থাকায় পাকিস্তানে গিয়ে এশিয়া কাপ খেলতে অস্বীকৃতি জানায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তবে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলেই পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় গড়াবে এ টুর্নামেন্ট। কিন্তু মূল আয়োজক হওয়া স্বত্ত্বেও পাকিস্তানে হবে মাত্র চারটি ম্যাচ, টুর্নামেন্টের বাকি নয়টি ম্যাচ হবে শ্রীলঙ্কায়।
তবে এতকাল নিরাপত্তা ইস্যু দেখালেও সম্প্রতি পাকিস্তানের ক্রীড়ামন্ত্রী মাজারি জানিয়েছেন, ‘যখন ভারতের দল পাকিস্তানে এশিয়া কাপ খেলতে যেতে পারছে না, তখন কেন পাকিস্তানের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হবে পারবে না? পরবর্তী আইসিসি সভায় জাকা আশরাফ এ ব্যাপারটাই তুলে ধরবেন।’ এতেই মূলত নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
আগামী ১৫ জুলাইয়ের ডারবানে আইসিসি সভায় যোগ দিতে আশরাফ ছাড়াও আছেন পিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সালমান তাসির। সেখানে নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের পাকিস্তান সফরে আপত্তির কথা আলোচনা হতে পারে। মাজারির দাবি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ যে বিশেষ কমিটি গঠন করে দিয়েছে, তারাই ভারত সফরের ব্যাপারে পিসিবিকে পরামর্শ দেবে। সে কমিটির সদস্য মাজারি নিজেও, যার নেতৃত্বে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো।