একটা বুলেট গতির বল ছুটে গেল সাকিব আল হাসানের কাছে। বৃষ্টির পরপর, একেবারে নিচু হয়ে যাওয়া বলটা, সজোরেই আঘাত করল সাকিবের হাতে। ক্যাচ মিস! কাভার অঞ্চলে দাঁড়িয়ে থাকা সাকিব আফসোসে পুড়েছেন। পুরো সিলেট স্টেডিয়াম জুড়ে মৃদু আর্তনাদ।
নাসুম আহমেদের সেই ওভারে আরও একদফা বেঁচে জান মোহাম্মদ নবী। ঠিক পরের ওভারে অবশ্য মুস্তাফিজুর রহমানের শিকারে পরিণত হয়েছেন নবী। তবুও হয়ত সাকিব আল হাসান নিজের মধ্যে আক্ষেপটা পুষেই রেখেছিলেন। ১১ তম ওভারে তিনি এলেন বল হাতে।
ওভার তিনি শুরু করলেন উইকেট দিয়ে। শেষটাতেও তিনি নিয়ে নেন উইকেট। প্রথম বলে ইব্রাহিম জাদরানের উইকেট নেন। আর শেষের উইকেট আরেক জাদরানের, নাজিবুল্লাহ জাদরান। দুই ভয়ংকর ব্যাটারকেই প্যাভিলনের পথ দেখালেন সাকিব। নিজের করা ভুলটা পুষিয়ে দিলেন দ্বিগুণভাবে।
এই যে ভুল তিনি পুষিয়ে দিতে জানেন। এই যে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট গুলো তুলে নিতে পারেন। আবার ব্যাট হাতেও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতেও তিনি পটু। তাইতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তিনি। সে কারণে বিশ্বব্যাপী তার এত চাহিদা। তার এত কদর।
ক্রিকেটীয় বুদ্ধিতে সাকিবের জুড়ি মেলা ভার। আর অধিনায়ক হিসেবেও দুরন্ত গতিতেই ছুটে চলছেন তিনি। ঠিক কোথায় সাকিব থাকেন না? এই প্রশ্নের উত্তর মেলা ভার। সবুজ গালিচার সর্বত্র তার বিচরণ। বিশেষ করে অধিনায়ক সাকিব বেশ কর্ম তৎপর। প্রতিটা মুহূর্ত সরব উপস্থিতি তার।
দলের প্রতিটা খেলোয়াড়কে যেমন উজ্জীবিত রাখেন তিনি। তেমনি বেশ রাগ ঝাড়েন তিনি। একজন ‘সিনিয়র ক্যাম্পেনার’ হিসেবেই সেই অধিকারটা তিনি রাখেন। তিনি তাই করেন। তবে সম্ভবত সাকিবের প্রভাবটা পড়ে গোটা দলের পারফরমেন্সে।
সাকিব প্রতিটা খেলোয়াড়কেই নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিতেই প্রভাবিত করেন। এই যে একটি ভুল করেও, তিনি নিজে থেকে সেই ভুল শুধরে নিলেন, নিজ দক্ষতায়। এই বিষয়গুলোই সম্ভবত দলের সব খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করে। ভুল করলেই সাকিবের মুষড়ে পড়ার চিত্র মঞ্চস্থ করবার উদাহরণ খুব একটা নেই। বরং তিনি কয়েকগুণ প্রতাপে ফিরে আসেন।
এই তো গেলো একজন সাকিব নামক চরিত্রের প্রভাব। তবে একজন বোলার সাকিবের প্রভাবটাও তো ম্যাচে কম থাকে না। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বৃষ্টি দিয়েছে বাঁধা। ওভার কমেছে, সাকিব এক ওভার কম করেছেন। তবুও এদিন বল হাতে হাড়কিপটেই ছিলেন সাকিব আল হাসান।
৩ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়েছেন তিনি। মাত্র ৫ এর ইকোনমি রেট তার। উইকেট নিয়েছেন ২টি। এর আগের ম্যাচেও মাত্র ৬.৭৫ ইকোনমি রেটে তিনি উইকেট নিয়েছেন ২টি। সেদিন ভয়ংকর হয়ে ওঠা আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে ফিরিয়েছিলেন তিনি। সাথে করিম জানাতকে।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যাটারকেই ফিরিয়েছেন। বোলার সাকিবের মাহাত্ম্য ঠিক এখানটায়। দলের ভীষণ প্রয়োজনে তিনি এগিয়ে আসতে পারেন। সাকিবের বোলিংয়ে খুব যে বিকল্প আছে তা কিন্তু নয়। তবে সাকিব নিজের মস্তিষ্কের দারুণ ব্যবহারটা করতে জানেন। তিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে পড়তে জানেন। গেল ১৭টি বছর ধরে সেই মস্তিষ্কের জোরেই তিনি বিশ্বসেরা।
একজন ক্রিকেটার হিসেবে তিনি নিজের লক্ষ্যটা দ্রুতই ঠিক করতে জানেন। একজন অধিনায়ক হিসেবেও তিনি নিজের লক্ষ্যটা স্থির করে ফেলেছেন। সেই পরিকল্পনাই এগিয়ে যাচ্ছেন। টসে এসেও সেই লক্ষ্যের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। বছর খানেক আগে থেকেই ২০২৪ বিশ্বকাপের দল নিয়ে বেশ তোড়জোড় শুরু করেছেন। এখন কোথায় গিয়ে থামবেন সাকিব ও তার দল, তা হয়ত সময়ই বলে দেবে।