প্রশ্নজালে আটক বাংলাদেশ ক্রিকেট

২৯ ঘন্টার এক নাটকীয়তা। অবসর এরপর আবার ফিরে আসা। তামিম ইকবাল খানই ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আলোচনা। স্তিমিত হয়েছে সে ঘটনা। কিন্তু রেশ এখনও কেটে যায়নি। তামিম ইকবাল কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্দরমহল এখনও আলোচনার বিষয়বস্তু।

সেই আলোচনার নতুন খোরাক খোদ তামিম ইকবাল খানই জোগান দিলেন। দুই ভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া তামিমের সাক্ষাৎকার থেকে নতুন মোড়ে তামিমের অবসর কাণ্ড। তিনি খুব যে খোলাসা করে কিছু বলেছেন, তা নয়। আবার তিনি যে বেফাঁস কোন মন্তব্য করেছেন, তাও নয়। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন জন্ম দিয়েছেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা তোলা হয়, দলের মেডিকেল টিমকে ঘিরে। খেলোয়াড়দের সুস্থ এবং শতভাগ ফিট থাকতে কি করা উচিত এবং কি করা উচিত না, সেসব তো মেডিকেল টিমেরই জানবার কথা। তাদেরই ঠিক করে দেওয়ার কথা। তবে তামিমের পিঠের ইনজুরি বারবার ফিরে আসার পেছনে মেডিকেল দলকেই প্রশ্ন করা উচিত। তামিম সেটাই করেছেন তার দেওয়া প্রশ্নে।

তবে তামিমের সেই দুই সাক্ষাৎকারে একটি বিষয় ছিল স্পষ্ট- সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে দলে তেমন কোন সমস্যায় তিনি পড়েন। তবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বেশকিছু বিষয় তামিমের মানসিক পীড়ার কারণ হয়েছে। বহু চেষ্টা করেও সেসব বিষয়ের সমাধান তিনি খুঁজে পাননি। এসবকিছুই তিনি জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে।

এখন কেবল তামিম অপেক্ষমান ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের সাথে আলোচনার। এসবের আগে তামিম দুবাইয়ে পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে, লন্ডন যাবেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে তার ইনজুরির। সেখান থেকে ফিরেই নিজের সর্বশেষ সিধান্তই জানাবেন তামিম।

এখন জনমনে প্রশ্নের বাতিঘর জ্বলে উঠেছে নানামুখী। তামিম তাহলে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে খেলবেন নাকি স্রেফ একজন ব্যাটার? সেই প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত জালাল ইউনুসের সাথে হওয়া তামিমের বৈঠকের পরই জানা যাবে। যদি পিঠের ইনজুরিটা তামিমকে বাঁধা না দেয়, তাহলে খেলার সম্ভাবনা প্রবল।

আবার, যেই সমস্যার সমাধান তামিম চেয়েছেন, সেটার সমাধান হওয়াটাও জরুরি। কিন্তু এখনও আসলে নাটকীয়তার পরিসমাপ্তি ঘটেনি। তামিম বরাবরই বলেছেন তার কাছে দল আগে। নিশ্চয়ই তিনি নিজে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় বিশ্বকাপের মত একটা বড় টুর্নামেন্টে অংশ নিতে চাইবেন না।

আরও একটি জিনিস স্পষ্ট হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের দলের ভেতরের সংস্কৃতিতেও বড় ধরণের সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যাগুলো জড়ো হতে হতে বিশাল আকার ধারণ করেছে। সেসব চাইলেই তামিম এক লহমায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারবেন না। তবে তিনি চেষ্টা করেছেন। তাছাড়া বোর্ড সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপনের প্রতি খানিকটা বিরুপ অভিব্যক্তিও ছিল সেই সাক্ষাৎকারে।

মনোমালিন্য বোর্ড সভাপতির সাথে বেশ চরমেই পৌঁছে গেছে, আন্দাজ করে নেওয়াই যায়। এখন শেষ অবধি তামিম কাণ্ডের শেষটা কোথায় হবে, তা সময়ের হাতেই ন্যাস্ত। কিন্তু তামিমকে ঘিরে তৈরি হওয়া এই পরিস্থিতি দেশের ক্রিকেটে বেশ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে, আর সেটা এখানেই থমকে যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link