ধরুণ একটা কঠিন সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেললেন তামিম ইকবাল খান। তিনি বেছে নিলেন অস্ত্রোপচারের পথ। এমন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ওপেনিংটা সামলানোর মত খেলোয়াড় যে নেই বাংলাদেশের কাছে। বিকল্প অবশ্য আছেন বেশ ক’জন। কিন্তু তামিমের সমমান কিংবা সমপরিমাণ অভিজ্ঞতা নেই কারোই।
এশিয়া কাপের আগে তামিম মাঠে না ফিরলে, স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বকাপে তিনি খেলতে চাইবেন না। কেননা দল আগে নীতিতে বিশ্বাসী তামিম। সেদিক বিবেচনায় নাইম শেখ খুব সম্ভবত বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের প্রথম পছন্দ।
অন্তত বিগত আফগানিস্তান সিরিজ সেটাই ইঙ্গিত করে। কিন্তু নাইম কি আদোতে বাংলাদেশের ওপেনিং পজিশনের জন্য যথার্থ কিনা, এমন প্রশ্ন চাইলেই তোলা যায়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুই ওয়ানডে ইনিংসে নাইম ছিলেন বড্ড সাদামাটা। একটিতে ফিরেছেন শূন্যরানে। আট বল খেলার পর ফজল হক ফারুকির বল আঘাত হানে স্ট্যাম্পে।
যদিও সেখানে অভাগাই ছিলেন নাইম। আরেক ম্যাচেও একই দশা। ২১ তম বলে ৯ রান করে ফারুকির শিকার তিনি। ঠিক এখানটায় সমস্যা। মানসম্মত বোলারদের বিপক্ষে নাইমের ক্রমাগত ব্যর্থতা। পাশাপাশি ধীর গতিতে রান সংগ্রহ। আধুনিক ক্রিকেটের ওপেনারদের ক্ষেত্রে যা বড্ড বেশি বেমানান। এছাড়াও টেকনিকালি বেশ দূর্বল নাইম শেখ।
বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে তুখোড় সব বোলারদের সামলানোর মত ‘টেকনিকালি স্ট্রং’ নন তিনি। তাছাড়া তিনিই যে রয়েছেন পরিকল্পনায়, সেই ইঙ্গিতটা মিলেছে তাকে ইমার্জিং এশিয়া কাপ খেলতে পাঠানোয়। সেখানেও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা ইনিংসগুলোর প্রতিচ্ছবি ঘটাতে পারেননি নাইম। ছিলেন বড্ড সাদামাটা।
যদি নাইমে না মেলে সমাধান, তাহলে দলের সাথে থাকা রনি তালুকদারকেই দেওয়া হবে সেই দায়িত্ব। কিন্তু তারও বেশকিছু সীমাবদ্ধতা। তিনিও টেকনিকালি খুব পরিপক্ক নন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতাও স্বল্পই তার। এমন একজনের কাঁধে বিশ্বকাপে ইনিংস উদ্বোধনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হতে পারে আত্মঘাতি।
বেশ এক মুশকিল সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের নির্বাচক থেকে টিম ম্যানেজমেন্টদের। চাইলেই নাজমুল হোসেন শান্তকে ওপেনিংয়ে পাঠানো সম্ভব। কিন্তু তিন নম্বর পজিশনে তিনি ছন্দে রয়েছেন। ব্যাটিং অর্ডারের কিঞ্চিৎ রদবদলও তার সেই ছন্দের পতন ঘটানোর জন্য যথেষ্ট। সেই ঝুঁকি নিশ্চয়ই নিতে চাইবে না বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।
তাহলে কে হবে লিটন দাসের সঙ্গী? বেশ জটিল একটা প্রশ্ন। এনামুল হক বিজয়ের নামটা তাই চলেই আসছে। টানা দুই আসরে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটে রান ফোয়ারা দেখিয়েছে বিজয়ের ব্যাট। তিনি মাঝে অবশ্য সুযোগ পেয়েছিলেন জাতীয় দলে। তবে সেটা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। সেখানে পারফরম তিনি করতে পারেননি। সে কারণে আবার বাদ।
তবে নির্বাচকরা বেশ ক’বার বলেছেন যে বিজয়কে একেবারেই চোখের আড়াল করা হয়নি। তিনি রয়েছেন নজরে। সুতরাং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৪টি ওয়ানডে খেলা বিজয়কে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের ওপেনিং পজিশনে। কিন্তু মূল সমস্যা হচ্ছে, খেলোয়াড়দের বাজিয়ে দেখার খুব বেশি সুযোগ বাকি নেই।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ড অবধি পৌঁছালে, ম্যাচ পাবে মোট পাঁচটি। সেই পাঁচ ম্যাচ, আর বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ। এই আট ম্যাচের মাঝেই বিশ্বকাপের জন্য ওপেনিংয়ে তামিমের বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে।
আবার এশিয়া কাপে খারাপ কিছু ঘটলে তিন খানা ম্যাচের সংখ্যা কমে যেতে পারে বাংলাদেশের। তাতে আবার বিপাকে পড়তে পারে বাংলাদেশ দল। বেশ মুশকিল এক পরিস্থিতিই বটে। সবকিছুই ঝুলে আছে তামিমের সিদ্ধান্তের উপর।