গেল বছরের অধিনায়ক, এ বছর অদৃশ্য

গেল বছর ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দলকে। অথচ বছর ঘুরতেই সোহান নেই কোন আলোচনায়। পরিকল্পনায়ও তিনি যে আছেন সেটারও নেই কোন ইঙ্গিত।

সেই পাঁচ ম্যাচের ৩টি ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। একটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাদ বাকি দু’টি ম্যাচ জিতেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যে বহুবারই সোহানের নামটি এসেছিল সামনে। কিন্তু হারিয়ে যাওয়াদের মিছিলেই যেন নিজের নামটি লেখাচ্ছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

২০২২ এর শেষদিক অবধি ছিলেন তিনি দলের সদস্য। এমনকি ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচেও একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন সোহান। অধারাবাহিকতার মঞ্চায়ন করে তিনি এখন রয়েছেন আড়ালে। নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার সুযোগ অবশ্য সোহান যথেষ্টই পেয়েছেন। কিন্তু পারেননি।

সব মিলিয়ে ৬১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেও গড়পড়তাই রয়ে গেছেন সোহান। বয়সটা প্রায় ২৯ বছর। সময় যে একেবারেই ফুরিয়ে এসেছে তা কিন্তু নয়। তবে কোন এক অজানা কারণে নিজের খোলসটা ছেড়ে বেড়িয়ে আসা হচ্ছে না সোহানের।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল, বিশ্বকাপে সাত নম্বর পজিশনে কাকে খেলাবে, সে নিয়ে রয়েছে ধুম্রজালে। কিন্তু সোহান হতে পারতেন স্বচ্ছ কাঁচ। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট হয়ত একটু নির্ভার হয়ে যেতে পারত সোহান নিজের সামর্থ্যের যথাযথ ব্যবহারটা করতে পারলে। শেষের দিকে দ্রুত ব্যাট চালিয়ে নেওয়ার মত সক্ষমতা তার রয়েছে।

এই যেমন তার অধিনায়কত্ব করা প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১৬১ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ৪২। পরবর্তীতে ১৪০ স্ট্রাইক রেটে ৩৫ ও ১৯০ স্ট্রাইকরেটে ১৯ রানের ইনিংসও খেলেছেন তিনি অধিনায়ক থাকাকালে। সুতরাং শেষের দিকে দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা তার রয়েছে। তবে অধারাবাহিকতাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্যে।

যে কারণে তার ব্যাটিং সীমাবদ্ধতাও বেশ মোটাদাগে সামনে আসছে। সেসব হয়ত ঢেকে ফেলা যেতে পারত তিনি নিয়মিত পারফরম করলে। তবে তা যাচ্ছে না। তাইতো জাতীয় দলের সাত নম্বর পজিশনের জন্যে তার নামটি খুব একটা উচ্চারিত হচ্ছে না।

এমনকি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সৌম্য সরকার, শেখ মেহেদিদের মত খেলোয়াড়দের নিজেদেরকে প্রমাণের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই সুযোগও পাচ্ছেন না নুরুল হাসান সোহান। এতেই তো প্রমাণিত হয়, তিনি নেই পরিকল্পনায়।

উইকেটরক্ষক সোহানকে নিয়ে চর্চা হয় ভীষণ। দেশের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক ধরা হয় তাকে। কিন্তু আধুনিক ক্রিকেটে পুরোদস্তুর উইকেটরক্ষকদের যে জায়গা নেই। এছাড়া দলের থাকা মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস বেশ ভাল মানের ব্যাটার, সেই সাথে তাদের উইকেট কিপিং যথেষ্ট কার্য্যকর। ঠিক এ কারণেই সোহানের উপস্থিতি ক্রমশ ঝাপসা হচ্ছে।

তবে অধিনায়ক সোহান কিন্তু একেবারেই ফেলে দেওয়ার নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি বেশ নিয়মিতভাবেই অধিনায়কত্ব করছেন। সফলতাও এসে ধরা দিচ্ছে। একটা সুযোগ হয়ত সোহানকে দেওয়া যেতেই পারে। আসন্ন এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্বটা হয়ত তুলে দেওয়া সম্ভব সোহানের কাঁধে।

এতে দল একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে দলনেতা হিসেবে পাবে। তাছাড়া সোহান নিজেকে প্রমাণের একটা সুযোগও পাবেন। অন্তত বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে তিনি জাতীয় দলের খেলার একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারবেন। বাকি সব আসলে নীতি-নির্ধারক আর সোহানের ভাগ্যের হাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link