নেপাল যেন এভারেস্টের মতই দৃঢ়

২৩০ রানে অলআউট নেপাল। আপাতদৃষ্টিতে হয়ত মনে হতে পারে, এ আর এমন কি! তবে নেপালের ব্যাটিংয়ের আদ্যোপান্তর গল্পটা ছিল একটু ভিন্ন। তাদের জন্যে বরং অনুপ্রেরণার। ভারতের জন্যে অবশ্য অবাক করে দেওয়ার মতই।

প্রথমবারের মত এশিয়া কাপের মঞ্চে নেপাল। নিজেদের প্রথম বড় টুর্নামেন্ট খেলতে এসেই নেপালিদের মুখোমুখি হতে হয়েছে ক্রিকেটের দুই পরাশক্তির। ভারত, পাকিস্তানের সাথে একই গ্রুপে ঠাই হয়েছে তাদের। স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী রাউন্ডের স্বপ্নটা বেশ বাড়াবাড়ি।

কিন্তু নিজেদের একটা ছাপ ফেলে রেখে যাওয়ার এর থেকে ভাল সুযোগ, সম্ভবত নেপালের সামনে সহসাই আসবে না। সেই সুযোগটুকু কাজে লাগানোর চেষ্টাই করেছেন নেপালের প্রতিটা খেলোয়াড়। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রমাণের ব্রত নিয়েই নেমেছিলেন রোহিত পাউডেল ও তার দল।

টসে জিতে ভারত নেপালকে ব্যাটিংয়ের নিমন্ত্রণ জানায়। সম্ভবত স্বল্প রানে নেপালিদের আটকে দিতে চেয়েছিলেন রোহিত শর্মা। তবে নেপালের ব্যাটিং ইনিংসের পুরোটা জুড়েই বিমর্ষ এক মুখচ্ছবির দেখা মিলেছে। রোহিত শর্মা যেন তার দলের প্রতি ছিলেন চরম বিরক্ত। সেই বিরক্তির কারণ নেপালের ব্যাটিং।

ভারতীয় বোলিং লাইনআপ নেপালের জন্যে অন্যতম কঠিন বটে। কিন্তু নেপালের দুই ওপেনার কুশল বার্টেল ও আসিফ শেখ রীতিমত চমকে দেন ভারতকে। মোহাম্মাদ শামি, মোহাম্মদ সিরাজের মত বোলারদের বিপক্ষে নেপালকে শুভ সূচরনাই এনে দেন কুশল ও আসিফ। ৬৫ রান আসে নেপালের উদ্বোধনী জুটি থেকে।

৩৮ রানে কুশল ফিরলেও আসিফ পেয়েছেন অর্ধশতকের দেখা। এরপর ছোট ছোট আরও কার্য্যকর সব জুটি গড়েন নেপালের ব্যাটাররা। গুলশান ঝা-কে সঙ্গী করে আসিফ ৩১ রানের আরও একটি জুটি গড়েন। যাতে দ্রুত দুইটি উইকেট পতন সামাল দেন আসিফ।

এরপর দলের লোয়ার মিডল অর্ডারের হাল ধরেন সোমপাল কামি। তিনি আউট হয়েছেন ৪৮ রানে। অর্ধশতক না পাওয়ার আক্ষেপটা নিয়েই তিনি হেটেছেন প্যাভিলনের পথে। ভারতের বিপক্ষে একটি হাফ সেঞ্চুরি ক্যারিয়ারকে আরও খানিক সাফল্য মন্ডিত করতই নিশ্চয়ই। তবে চাইতেও সোমপালের আক্ষেপটা হয়েছে সম্ভবত দলকে আরও বড় সংগ্রহ এনে দিতে না পারায়।

কেননা শেষ দিকে তিনি হাত খুলে খেলতে শুরুই করেছিলেন। তিনি টিকে গেলেই ২৫০ ছাড়াতো নেপালের সংগ্রহ। তেমন সম্ভবনা ছিল প্রচুর। মোহাম্মদ সিরাজের শর্ট বলগুলো নির্ভয়ে খেলেছেন তিনি। ছক্কাও হাকিয়েছেন। আত্মবিশ্বাসের সাথেই খেলে যাচ্ছিলেন সোমপাল। তবে তাকে থামতে হয়েছে একটা সময়।

এর আগে অবশ্য তিনিও গুরুত্বপূর্ণ দুইটি জুটি গড়েছেন। দীপেন্দ্র সিং আইরের সাথে ৫০ রানের জুটি ও সন্দীপ লামিছানকে নিয়ে গড়েন ৩৪ রানের জুটি। এই ছোট ছোট জুটি গুলোই নেপালকে একটি ভাল সংগ্রহের স্বপ্ন দেখিয়েছে। তাছাড়া তাদের প্রথম যাত্রায় ২৩০ সংগ্রহও একেবারেই খারাপ নয়। যখন প্রতিপক্ষ পূর্ণ শক্তির ভারত।

নেপালের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা তাই করতেই হয়। নিজেদের ছাপ ফেলে যাওয়ার তীব্র প্রচেষ্টাই চালাচ্ছেন সোমপালরা। তবে ভারতের শরীরি ভাষায় হেলাফেলার ঝাপসা ছবি নজড়ে এসেছে। নিদেনপক্ষে চারখানা সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন ভারতের ফিল্ডাররা। অথচ বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের ফিল্ডিংয়ের চর্চা হয় প্রতিনিয়ত। তাছাড়া ওভার থ্রো, মিস ফিল্ডিং তো ছিল। যেসব লেগেছে দৃষ্টিকটু।

সেসবই প্রমাণ করে নেপালকে একটু হালকাভাবেই নিয়েছিল ভারত। তবে নেপাল সেই মানসিকতার সুযোগটুকুই নিয়েছে। তাইতো মোহাম্মদ সিরাজের মত বোলারের খরচ হয়েছে ৬১ রান। বাকি বোলাররাও প্রত্যাশার বাইরে রান খরচা করেছেন।

নেপাল হয়ত এই ম্যাচ হেরে যাবে। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের মত ব্যাটারদের অভিজ্ঞতা তাদেরকে হারিয়ে দেবে। তবুও আসিফ, সোমপালদের এই কার্য্যকর ইনিংসগুলো উজ্জ্বল এক অধ্যায় হয়ে থাকবে নেপালের ক্রিকেটে। অনুপ্রেরণা জোগাবে এভারেস্টের পাদদেশে থাকা স্বপ্নবিলাসী শিশু-কিশোরদের।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link