বর্তমান বিশ্বের সেরা পেসারদের তালিকা করা হলে সবাই একটা নামকে রাখবেনই, রাখতে বাধ্য হবেন। সেটা শাহীন শাহ আফ্রিদি, এই পাকিস্তানি তারকাকে বাদ দিয়ে সাম্প্রতিক কালের সেরা পেসারদের তালিকা করা অসম্ভব। কিন্তু পাকিস্তানের অখ্যাত শাহীন কিভাবে বনে গেলেন বিশ্বসেরা – এমন প্রশ্ন জাগতেই পারে মনে। এই ক্রিকেটার নিজে অবশ্য মনে করেন ২০১৯ বিশ্বকাপই তাঁকে পথ দেখিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের।
যদিও ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে খুব একটা ফর্মে ছিলেন না এই তরুণ। তাই তো সুযোগ পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল। তবে নির্বাচকরা আস্থা রেখেছে তাঁর উপর, সেটির প্রতিদানও দিয়েছেন তিনি। এই তরুণ বলেন, ‘বিশ্বকাপে সুযোগ পাব কি না দ্বিধা ছিল। কিন্তু যখন সুযোগ পেয়েছি তখন সেই বিশ্বকাপ আমার জন্য বিশেষ কিছু ছিল।’
তবে টুর্নামেন্টের শুরুটা ভাল হয়নি মানছেন এই বাঁ-হাতি; বলেন যে, ‘আমি প্রথম ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলাম, কিন্তু সেদিন মনমতো হয়নি কিছু। দুই উইকেট পেয়েছিলাম, কিন্তু যেখানে বল ফেলতে চেয়েছি সেখানে পারিনি।’
নিউজিল্যান্ডের সাথে অবশ্য পুরোপুরি ছন্দে ফিরে আসেন শাহীন শাহ। পরের চার ম্যাচেই পনেরো উইকেট তুলে নেন তিনি। আর বিশ্বকাপ শেষ করেন পাকিস্তানিদের মধ্যে সেরা বোলিং গড় নিয়ে।
ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার ব্যাপারে এই তারকা জানান, ‘যখন আপনি ভুল করেন আপনাকে সেখান থেকে শিখতে হবে। ছোট ছোট ভুলগুলো ধরতে পারা অনেক সাহায্য করে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমার প্রথম স্পেল সন্তোষজনক ছিল না, তবে শেষ স্পেলে অনুভব করতে পেরেছিলাম আমার উন্নতি হচ্ছে।’
ক্যারিয়ারের প্রথম ধাপে অবশ্য নতুন বলে বোলিং করতেন না শাহীন শাহ। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘একটু অদ্ভুত শোনাতে পারে কিন্তু আমি নতুন বলে বোলিং করতাম না৷ যুব দলেও কোচেরা আমাকে ফার্স্ট-চেঞ্জ বোলার হিসেবে ব্যবহার করতো। কিন্তু আমার মনে হতো আমি দারুণ সুইং পাই এবং এই কাজটা করতে পারবো।’
বিশ্বকাপের পরে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত একটা সিরিজে প্রথমবারের মত শুরুতে বোলিং করেন এই ফাস্ট বোলার। সেখানে ভালোও করেন তিনি, আর এরপর থেকেই পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের সূচনার দায়িত্ব ওঠে তাঁর হাতে।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলতে না পারাটা দলীয় সিদ্ধান্ত মানলেও খানিকটা হতাশ হয়েছিলেন শাহীন। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটাই বেশি স্মরণীয় তাঁর কাছে।
এই তারকা বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে যখন বোলিংয়ে নামছি ততক্ষণে টুর্নামেন্ট থেকে আমরা বাদ পড়ে গিয়েছি। কিন্তু যখন পাকিস্তানের হয়ে খেলছি তখন সব ম্যাচই ফাইনাল হিসেবে ভাবতে হবে। আমার সে ম্যাচের বোলিং ফিগার দেখে অনেকের মনে হতে পারে এটা বুঝি মেঘলা আবহাওয়ার ফল। কিন্তু সেদিন আকাশ পুরোপুরি পরিষ্কার ছিল।’
এই পেসার আরো যোগ করেন, ‘একটু ফুল লেন্থে বল পিচ করিয়েছিলাম সেদিন। আর শেষ দুই তিনটা উইকেট সম্ভবত ইয়র্কার ডেলিভারিতে পেয়েছি। আমি শুধু আমার স্বাভাবিক বোলিং করেছি, আর আগের দুই তিন ম্যাচের মোমেন্টাম ক্যারি করতে চেয়েছি।’
কয়েকজন ক্রিকেটারের সাথেও কথা বলেছিলেন এই পাক ক্রিকেটার। নিজের অফ ফর্ম আর বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল সে সময়। কিন্তু টুর্নামেন্ট শেষে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছিলেন তিনি।
এই তরুণ বলেন, ‘সেবারের বিশ্বকাপ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। শুধু ক্রিকেটে নয়, জীবনেও। এটা আমাকে খারাপ সময়কে সহ্য করতে শিখিয়েছে। তাই আমি সেই বিশ্বকাপকে এমন একটি টুর্নামেন্ট হিসেবে দেখি যা আমার ক্যারিয়ারকে অনেক উঁচুতে তুলেছে। সম্ভবত আপনারা বলতে পারেন যে এই টুর্নামেন্টটি বালক শাহীনকে ‘শাহীন শাহ আফ্রিদি’-তে পরিণত করেছে।’