বয়সটা অল্পই। ক্যারিয়ারের বিস্তৃতিও খুব একটা চওড়া নয়। তবে ইতোমধ্যেই নিজের একটা আলাদা জায়গা তৈরি করে ফেলেছেন তাওহীদ হৃদয়। সমর্থকদের মনে, দেশ পেরিয়ে ভিনদেশে। তার ব্যাট করে দিয়েছে সেই জায়গা। তার ব্যাটই তাকে নিয়ে এসেছে বড়দের বিশ্বকাপে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে এখন অবধি সবচেয়ে বড় অর্জন সম্ভবত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়। সেই দলের চারজন খেলোয়াড়ের ঠাই হয়েছে এবারের বড়দের বিশ্বকাপে। তাওহীদ হৃদয় তাদেরই একজন। কি অভাবনীয় এক যাত্রাই না তার!
মা জুগিয়েছিলেন ভরসা। ক্রিকেট খেলতে ঢাকায় এসে হয়েছেন প্রতারিত। দমে যাওয়ার চিন্তা ভর করেছিল মাথায়। তবুও দমে আর গেলেন কই! প্রকৃতিই যেন চাইলো হৃদয়কে বাংলাদেশের হৃদয়ে জায়গা করে দিতে। প্রাথমিক সেই ধাক্কা সামলে হৃদয় ক্রিকেটটাকে ভালবেসে এগিয়ে গেছেন। এরপরের পথও যে খুব একটা মসৃণ ছিল তা নয়।
তবে হৃদয়ের শেখার আগ্রহ রয়েছে প্রচণ্ড। তাইতো গেল তিন বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বত্র তিনি খেলে বেড়িয়েছেন। নিজের ভুলগুলো নিয়ে কাজ করেছেন। তারপর বিশ্বকাপের বছরেই জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে জড়াবার সুযোগ এলো তার। আর এরপরই বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত হয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে তিনি দুর্দান্ত। সেই সাথে ম্যাচের পরিস্থিতি পড়তে পারার দক্ষতা। ক্রমাগত প্রতিপক্ষকে চাপে রেখে এক-দুই রান বের করা। সময় আর বল বুঝে দারুণসব বাউন্ডারি হাঁকানো। সবকিছুতেই পটু তাওহীদ হৃদয়।
ইনিংস বিল্ডআপ করার দক্ষতা যেমন রয়েছে তার। দ্রুত রান তুলতেও সক্ষম তিনি। প্রায় ৮৬ স্ট্রাইকরেটে এখন অবধি তিনি রান করেছেন আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারে। মিডল অর্ডারে সুযোগ্যই বলা চলে তাকে। যদিও বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে একটু ছন্দের পতন হয়েছে তার। তবুও বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনি হয়ত জ্বলে উঠবেন। সেটাই তো প্রত্যাশিত।
ব্যাটিং ছাড়াও হৃদয় বেশ দুর্দান্ত ফিল্ডার। ৩০ গজ বৃত্তের ভেতরে হোক কিংবা সীমানার সামনে রান আটকাবার প্রচণ্ড চেষ্টায় কখনোই পিছপা হতে দেখা যায়নি হৃদয়কে। যদিও তার স্যাম্পল সাইজটা বেশ ছোট। তবুও হৃদয়কে নিয়ে একটু জোর গলায় কথা বলাই যায়। কেননা তার মধ্যে থাকা প্রতিভা আর সম্ভাবনাই সেই সুযোগটুকু করে দেয়।
তাছাড়া হৃদয় নিশ্চয়ই পেছন ফিরে তাকান মাঝে মধ্যেই। সেখানে ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যাওয়ার একটা দৃশ্যও হয়ত দেখেন তিনি। তাতে আরও খানিকটা স্পৃহা খুঁজে পান তরুণ এই ক্রিকেটার। নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার। হৃদয়ের যে একেবারেই কোন দূর্বলতা নেই তা কিন্তু নয়।
তার খেলা পুল শটে বেজায় ঝুঁকি ছিল। তার একটা সমাধান তিনি খুঁজে বের করবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তাছাড়া একটু খানি বাড়তি আত্মবিশ্বাসও তাকে ফেলছে বিপাকে। সেই বিষয়টিও নিশ্চয়ই হৃদয়ের চোখের আড়াল হচ্ছে না। তার গুণ সম্ভবত নিজের ভুলগুলো শুধরে নেওয়া। সে কাজটা ভালভাবেই করতে জানেন হৃদয়।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ফরচুন বরিশালকে শিরোপা জেতাতে না পারার একটা দুঃখস্মৃতি রয়েছে তার। হৃদয় নিশ্চয়ই লাল-সবুজ জার্সিতে এই ভুলটি করতে চাইবেন না। যত গ্লানি ছুঁয়েছে তাকে তার সবটুকু ঝেড়ে ফেলেই তিনি নামবেন ভারতের ময়দানে। আস্থা রাখছে তার উপর টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রতিদান নিশ্চয়ই তিনি দেবেন।