টেস্ট ক্রিকেট মরে গেছে!
এই কথাটা মনে হয় টি-টোয়েন্টি আসার পর হাজারোবার শুনেছেন। একটা নিখাদ মিথ্যা ও বানোয়াট কথা এটা।
ধরে নেই টি-টোয়েন্টির উত্থান কবে? ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে শুরু। আজ ১৪ বছর।
টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আপনি মনে রেখেছেন কয়টা? পাকিস্তান-ভারত ফাইনাল? বেন স্টোকস ট্র্যাজেডি! ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ব্যাঙ্গালুড়ু ম্যাচ! কয়েকটা আইপিএল ম্যাচ! অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সিরিজের কিছু এনকাউন্টার!
এই সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে এর চেয়ে ঢের বেশি রসদ পেয়েছেন তা নিশ্চিত করেই বলে দেয়া যায়।
এখন আপনি দেখেন কি না সেটা প্রশ্ন, নাকি আপনি নিজেই টেস্ট ক্রিকেটের আপডেট ক্রিকিনফোতে নিয়ে, ফেসবুকে এসে কান্না করেন টেস্ট ম্যাচ মরে গেছে।
২০১৪ সালে একটা টেস্ট সিরিজে ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে, ভারতের সাথে। প্রথমে একটা ইনিংসে ২২৪!
পরে ওয়েলিংটনে ১৯২ তে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর ভারত প্রায় ২৩০ রানের লিড পায়।
এরপর আবার কিউইরা বিপদে! মানে ৯৫ রানে ৫ উইকেট নেই! ম্যাককালাম তখনও ক্রিজে! এরপর প্রায় ১২৩ ওভার ভারত কোনো উইকেট পায়নি!
ম্যাককালাম করেছে ৩০২! নিউজিল্যান্ড ৬৮০! জিমি নিশামেরও সেঞ্চুরি আছে এই ইনিংসে!
নিশ্চিত হারা ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের! এই সিরিজ দিয়ে ১২ বছর পর ভারতের সাথে টেস্ট সিরিজ জয় পায় নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডেরই আরেকটা উদাহরণ ২০১৮ সালে পাকিস্তানের কাছে চার রানে হেরে যায়। টিপিকাল পাকিস্তানি ব্যাটিং কলাপ্স হয় আবুধাবিতে!
হেডিংলি যতবার বলবেন স্টোকস মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, যে টি-টোয়েন্টিতে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়েন স্টোকসি, সেই মাথা উঁচু করে ইতিহাসে জায়গা করে নেন ক্রিকেটের আদি ফরম্যাট টেস্ট, তারও আগে রঙ্গিন ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতে! একই বছরে, কয়েক মাসের ব্যবধানে।
আবার এই অ্যাশেজের কথা যতবার বলবেন স্টিভ স্মিথের নামও আসবে বারবার। ল্যাবুশেইনের সেই পরিবর্তিত ব্যাটসম্যান হিসেবে নামা। আর্চারের আগুন বোলিং।
২০০৯ সালের হোবার্ট টেস্টের কথা এখনো মনে আছে! প্যাটিনসন ছিল তখন অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা বোলার! লো স্কোরিং এনকাউন্টারে সাত রানের জয় পায় নিউজিল্যান্ড।
একই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া সিরিজে একই ম্যাচে ৪৭ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া! আবার দক্ষিণ আফ্রিকা ৯৭ রানে অল আউট হয়!
আর সব বাদ দেন, শুধু ২০১৬ আর ২০১৭ সালে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজের ম্যাচগুলা ভাবেন!
সাব্বির রহমানের ম্যাচ হেরে বসে পড়া! মিরাজের ১২ উইকেট! তামিম ইকবালের দৃঢ়তা! সাকিবের নায়ক হয়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার সাথে! প্রতিটা ম্যাচে ছিল রোমাঞ্চ!
অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশ জয় পায় মাত্র ২০ রানে! ইংল্যান্ড বাংলাদেশকে হারায় মাত্র ২২ রানে!
দিল্লির মাঠে আপনাদের মনে আছে? ভারতের বিপক্ষে স্পিনিং ট্র্যাকে কতক্ষণ ব্যাট করেছিলেন আমলা, ডি ভিলিয়ার্স, ফাফ ডু প্লেসিস?
ইন্ডিয়া এই ম্যাচে প্রায় সাড়ে তিনশো রানে জেতে! কিন্তু ব্যাপারটা ব্যবধানের ছিল না!
ব্যাপারটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ১২১ রানে অলআউট হয়!
দ্বিতীয় ইনিংসের স্ট্যাটগুলা দেখেন দক্ষিণ আফ্রিকা ১৪৩ ওভার ব্যাট করে রান তোলে ১৪৩! অলআউট!
হাশিম আমলা ২৪৪ বলে ২৫, ২৮৯ মিনিটের ব্যাটিং!
এবি ডি ভিলিয়ার্স ২৯৭ বলে ৪৩! ৩৫৪ মিনিটের ব্যাটিং।
আপনার কী মনে হয় ডি ভিলিয়ার্স টি টোয়েন্টি পারে না? নাকি টেস্ট পারে না? ম্যাককালাম টি টোয়েন্টি পারে না? নাকি টেস্ট পারে না??
আপনারা ফলো আর শেয়ার করবেন হিরো আলম, আর বুক চাপড়ে কাঁদবেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন! তাতে হেমন্তের কিছু আসবে যাবে না। আপনার এই ভণ্ডামিই থাকবে শীর্ষে!