তাঁর কাছে ঋণী বাংলাদেশ ক্রিকেট

শুধু সংগঠক হিসেবে নয়, খেলোয়াড় হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। ১৯৫৮ ও ১৯৫৯ - দু’টি মৌসুম তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে খেলেছেন কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে। ১৯৫৯ সালে তিনি ডাক পান পূর্ব পাকিস্তান ক্রিকেট দলে। এরপর ১৯৬০-৬১ মৌসুমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের অধিনায়কত্বও করেন।

তিনি আপাদমস্তক খেলা পাগল এক মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট যে আজকের অবস্থানে এসেছে – তাতে তাঁর অবদান কম নয়। বাংলাদেশের একদম গোড়ার দিককার ক্রিকেট সংগঠকদের একজন তিনি, স্বাধীনতা পূর্ব যুগে ক্রিকেটার হিসেবেও বেশ নাম-ডাক ছিল তাঁর। বলছি রাইসউদ্দিন আহমেদের কথা। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলেন অনেকদিন হল। তবে, সব কিছুর ইতি ঘটলো আজ বুধবার, ২০ জানুয়ারি। রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট কনট্রোল বোর্ডের (বিসিসিবি) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ অবধি তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯১ সাল থেকে ১০ বছর তিনি বোর্ডের সহ-সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতার পর প্রথম যেবার বাংলাদেশে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) একটা দল খেলতে আসে, তাতে মূল সাংগঠিক দক্ষতাটা দেখিয়েছেন এই রাইসউদ্দিন আহমেদ। তিনিই আইসিসির কাছে বাংলাদেশের সদস্যপদের জন্য আবেদন করেন।

শুধু সংগঠক হিসেবে নয়, খেলোয়াড় হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। ১৯৫৮ ও ১৯৫৯ – দু’টি মৌসুম তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের হয়ে খেলেছেন কায়েদ-ই-আজম ট্রফিতে। ১৯৫৯ সালে তিনি ডাক পান পূর্ব পাকিস্তান ক্রিকেট দলে। এরপর ১৯৬০-৬১ মৌসুমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের অধিনায়কত্বও করেন।

শুধু ক্রিকেট নয়, খেলেছেন বাস্কেটবলও। ১৯৬০ থেকে পাঁচ বছর তিনি পূর্ব পাকিস্তান বাস্কেটবল দলের সদস্য ছিলেন। এরপর ১৯৬৫ সালে সেই দলের কোচ হিসেবেও নিযুক্ত হন। চার বচর বাদে তিনি পাকিস্তান বাস্কেটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ – এই চার বছজর তিনি পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশনের (ইপিএসএফ) ক্রিকেট কমিটির সচিব ছিলেন।

এককালের আইসিসি সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া, বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সাথে তৎকালীন সহ-সভাপতি রাইসউদ্দিন আহমেদ।

১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮- এই তিন বছর তিনি পিআইএ ক্রিকেট ও হকি দলের ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ইপিএসএফ-এর পক্ষ থেকে অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রতিনিধিত্বও করেন।

বর্ণাঢ্য জীবনে তাঁর অর্জনের শেষ নেই। ১৯৮১ সালে তাঁকে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি সেরা ক্রীড়া সংগঠকের পুরস্কার দেয়। ১৯৮৪ সালে আবারও একই পুরস্কার পান। সেই সময়, ১৯৮২ সালে তিনি এমসিসির আজীবন সদস্যপদ লাভ করেন।

রাইসউদ্দিন কিছুদিন আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি ছিলেন লম্বা সময়। সেই যুদ্ধের ইতি ঘটলো আজ। জীবন নদীর ওপারে চলে গেলেন ৮২ বছর বয়সে। কাকরাইলের সার্কিট হাউজ মসজিদে তাঁর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

তাঁর মৃত্যতে গোটা ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া বিরাজমান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘যখন আমাদের ক্রিকেট যাত্রা শুরু করতে গিয়ে ধুকছিল তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে ছিলেন রাইসউদ্দিন আহমেদ। তাঁর মত আত্মত্যাগী মানুষদের জন্যই আমাদের ক্রিকেট আজকের জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...