উইন্ডিজের ব্যর্থতায় বাংলাদেশের দিন

কর্নওয়ালের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ভালো না হলেও তৃতীয় দিন শেষে ২১৮ রানের লিড নিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে চালকের আসনেই রয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের হাতে রয়েছে এখনো ৭ উইকেট।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের শেষ ভাগে বাংলাদেশের স্পিন ত্রয়ীর আক্রমণে যে ধংসযজ্ঞ শুরু হয়েছিলো সেটাই ক্ষণিকের জন্য বাংলাদেশের ইনিংসে টেনে আনলেন ক্যারিবিয়ান স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল।

কর্নওয়ালের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ভালো না হলেও তৃতীয় দিন শেষে ২১৮ রানের লিড নিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে চালকের আসনেই রয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের হাতে রয়েছে এখনো ৭ উইকেট।

চট্টগ্রাম টেস্ট নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তির খবর হলো পুনরায় চোট পেয়েছেন সাকিব আল হাসান। আপাতত সাকিবের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও উন্নতির জন্য রাখা হয়েছে বিসিবির মেডিকেল টিমের অধীনে। তবে এমআরআই করাতে জৈব সুরক্ষা বায়ো বাবলের বাইরে যাওয়াতে এই টেস্টে সাকিবের আবার মাঠে নামা অনেকটাই অনিশ্চিত।

তবে সাকিবের অভাব বুঝতেই দেননি মেহেদী হাসান মিরাজ। অনবদ্য সেঞ্চুরির পর বল হাতেও ৪ উইকেট শিকার করেন এই অলরাউন্ডার। মিরাজের অলরাউন্ডিং পারফর্মে প্রথম ইনিংসে ১৭১ রানের বড় লিড পায় স্বাগতিকরা।

তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দলীয় ১ রানে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রাকিম কর্নওয়ালের ঘূর্ণিতে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর সাদমান ইসলামকে সাথে নিয়ে অধিনায়ক মমিনুল হক ৩২ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিলেও বাংলাদেশের ইনিংসে তৃতীয় ধাক্কা দেন গ্যাব্রিয়েল। উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাদমান ইসলাম (৫)।

সাদমান যখন ফিরে যান তখনও দিনের খেলা বাকি ছিলো ৫.৫ ওভার। তবে শেষ বিকালে আর উইকেট হারাতে হয়নি স্বাগতিকদের। দিনের বাকি অংশ নিরাপদেই কাটিয়ে দেন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। মুমিনুল ৩১ রান ও মুশফিক ১০ রান করে অপরাজিত রয়েছেন।

এর আগে দিনের শুরুতে ২ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের দিন শেষে বিকালে প্রতিরোধ গড়া ব্র্যাথওয়েট ও বোনারের জুটি তৃতীয় দিনে যোগ করতে পারেননি আর একটি রানও। তাইজুল ইসলামের করা দিনের প্রথম বলেই ১৭ রান করে বোনার ফিরে গেলে ভাঙে ৫১ রানের জুটি।

সঙ্গী হারালেও মনোবল হারাননি ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট। মায়ার্সকে সাথে নিয়ে স্বচ্ছন্দে ব্যাট করতে থাকেন ব্র্যাথওয়েট। বাংলাদেশের বাজে বলের সুযোগ নিয়ে এই জুটি দ্রুত রান তুলতে থাকেন। অভিষিক্ত মায়ার্সও স্বাগতিক স্পিনারদের বিপক্ষে খেলতে থাকেন একের পর এক শট। মাত্র ৬৫ বলেই ৫০ রান তুলে ফেলেন দুজন। তবে এরপর আর বেশী দূর যেতে পারেনি এই জুটি। নাঈম হাসানের ভিতরে টার্ন করা এক বলে ৭৬ রান করে বোল্ড হয়ে যান ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।

অধিনায়কের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি মায়ার্সও। ৪০ রান করা মায়ার্সকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপরেই প্রতিরোধ গড়েন ব্ল্যাকউড ও জেসুয়া ডি সিলভা। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ৯৯ রান।

তাঁদের এই জুটিতে অবদান আছে বাংলাদেশি ফিল্ডারদেরও। ব্ল্যাকউডকে শুরুতে আউট করার দুটি সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। প্রথমে শূন্য রানে ক্যাচ ছাড়েন লিটন দাস এরপর ২ রানের সময় ক্যাচ ছাড়েন সাকিবের বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলী রাব্বি। ইয়াসির আলী ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে সহজ ক্যাচ ছাড়েন সিলভারও।

এই জুটিতে ফলোওয়ান এড়ানোর পর দলীয় ২৫৩ রানে নাঈম হাসানের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সিলভা (৪২)।  সঙ্গী হারিয়ে বেশীক্ষণ থাকতে পারেননি ব্ল্যাকউডও। ৬৮ রান করে মিরাজের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন তিনিও। এরপরই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পরে সফরকারীরা। আর মাত্র ৬ রান যোগ করেই গুটিয়ে যায় তাঁরা। একে একে ফিরে যান কর্নওয়াল (২), রোচ (০) ও ওয়ারিক্যান (৪)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৫৯ রানে অলআউট করে প্রথম ইনিংসে ১৭১ রানের লিড নেয় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের পক্ষে ৪ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান শিকার করেন ২ টি করে উইকেট। স্পিন ত্রয়ীর উইকেট উৎসবের দিন চোটের কারণে তৃতীয় দিন মাঠেই নামতে পারেননি ছিলেন সাকিব আল হাসান।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৩০ ও দ্বিতীয় ইনিংস: ৪৭/৩ (২০) (সাদমান- ৫, তামিম- ০, শান্ত- ০, মমিনুল- ৩১, মুশফিকুর- ১০)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ২৫৯/১০ (৯৬.১) (কম্বেল- ৩, ব্র্যাথওয়েট- ৭৬, মসলে- ২, বোনার- ১৭, মেয়ার্স- ৪০, ব্ল্যাকউড- ৬৮, জশুয়া- ৪২, কর্নওয়াল- ২, রোচ- ০, ওয়ারিক্যান- ৪, গ্যাব্রিয়েল- ০*;

মুস্তাফিজ- ১৫-৪-৪৬-২, সাকিব- ৬-১-১৬-০, মিরাজ- ২৬-৯-৫৮-৪, তাইজুল- ৩৩.১-১১-৮৪-২, নাঈম- ১৬-১-৫৪-২) রোচ- ৪-১-৫-০, কর্নওয়াল- ৯-১-২৮-২, গ্যাব্রিয়েল- ৬-০-১৩-১, ওয়ারিক্যান- ১-০-১-০

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...