স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে লেগ স্পিনার মাসুম!

সম্প্রতি মাসুম নামের এক লেগ স্পিনার হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছেন। আলোচনায় আসা নতুন কিছু নয়। এর আগে বহু লেগিই এসেছেন, আবার প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় ভাসিয়ে ফিরেও গিয়েছেন। কিন্তু মাসুমের ক্ষেত্রে আশা জাগানিয়া ব্যাপার হচ্ছে, তাঁর লেগ স্পিন দর্শন।

আকাঙ্ক্ষা এবং অনাস্থা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিপ্রেক্ষিতে লেগ স্পিনের পাশে এই দুই শব্দ চাইলে একই সাথে বসানো যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) হন্যে হয়ে খুঁজে লেগস্পিনার। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, লেগ স্পিনাররাও ম্যাচ খেলার জন্য তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকেন। দুই পক্ষের এই চেয়ে থাকার যাত্রায় দিনশেষে বাংলাদেশে তেমন বলার মতো কোনো লেগস্পিনার উঠে আসেনি। এক প্রকার ম্রিয়মাণ হওয়ার পথেই রয়েছে লেগ স্পিন নামক এ শিল্প।

অতীতে বাংলাদেশে বহু লেগ স্পিনার আলোচনায় এসেছেন। কিন্তু প্রায় সবাই দিনশেষে প্রত্যাশার চাপে নুইয়ে পড়েছেন। অবশ্য অনেকেই ক্রমাগত অবহেলার কারণে স্বেচ্ছায় লড়াইয়ের মঞ্চ ত্যাগ করেছেন। এ জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেটে সেই সংস্কৃতিটাও তৈরি হয়নি। বরং এক ধরনের একটা বলয় তৈরি হয়ে উঠেছে যে, লেগ স্পিনারদের আর যাই হোক বাংলাদেশে ঠাই নেই।

অবশ্য বাংলাদেশে আশা জাগানিয়া বিশ্ব মানের লেগ স্পিনার দেখা যায়নি বললেই চলে। তাই ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে জাতীয় দল- কোনো জায়গাতেই কোনো লেগি আস্থার যোগান দিতে পারেননি। এই কারণেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে লেগি মানেই অনাস্থার আরেক নাম। আবার এই লেগিরাই আরেক দিক দিয়ে পরম আরাধ্য, আকাঙ্ক্ষারও এক নাম।

সম্প্রতি মাসুম নামের এক লেগ স্পিনার হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছেন। আলোচনায় আসা নতুন কিছু নয়। এর আগে বহু লেগিই এসেছেন, আবার প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়ে হতাশায় ভাসিয়ে ফিরেও গিয়েছেন। কিন্তু মাসুমের ক্ষেত্রে আশা জাগানিয়া ব্যাপার হচ্ছে, তাঁর লেগ স্পিন দর্শন। লেগ ব্রেক, সাইড স্পিন, ফ্লিপার- লেগ স্পিনের সব উপাদান নিয়েই তাঁর কণ্ঠে ঝরেছে সাবলীল ব্যখ্যা। গতির সাথে বলে ভ্যারিয়েশন আনাই মাসুমের মূল লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে নিংড়ে দিচ্ছেন।

এবারের বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্স দলের সাথে আছেন। তবে অফিশিয়াল কোনো ক্রিকেটার হিসেবে নয়। বিপিএল শুরুর আগে এই লেগির এক ভিডিও খুব মনে ধরে সিলেট স্ট্রাইকার্স দলের মালিকের। আর তাতেই সিলেটের অনুশীলনে জায়গা মিলে মাসুমের। এরপর অনুশীলনে বল করেছেন। নজরও কেড়েছেন। খুলনা টাইগার্সের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন তো তাঁর বোলিং দেখে নিজ দলের নেট প্র্যাক্টিসেই নামিয়ে দেন।

অবশ্য মাসুমের কাছে এমন প্রশংসা কিংবা নজর কাড়া নতুন কিছু নয়। সাবেক প্রোটিয়া ব্যাটার হার্শেল গিবস একবার তাঁর বোলিং দেখে বেশ প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু দিনশেষে মাসুমের অর্জন শুধু এতটুকুই। ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত কোনো সুযোগ মেলেনি। নেট প্র্যাক্টিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার।

তবে নতুন খবর হলো, এই বিপিএলেই সিলেটের হয়ে সুযোগ মিলতে পারে মাসুমের। অবশ্য তার জন্য কিছু জটিলতা আছে। প্রথমত মাসুম সিলেট স্ট্রাইকার্সের নিবন্ধিত কোনো ক্রিকেটার নন। তাই তাঁকে দলভূক্ত করতে হলে সিলেট ফ্রাঞ্চাইজি মালিকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তবে এ দলের মালিক আবার পুরো দায়িত্বটাই ছেড়ে দিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফির উপর।

মাসুমের নেট প্র্যাকটিস আবারো পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাশরাফিও তাঁর বোলিং দেখবেন। এরপর জানা যাবে, মাসুম এই বিপিএলে খেলতে পারবেন কিনা। এই মুহূর্তে সিলেট স্ট্রাইকার্স পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে। রাউন্ড রবিন লিগে তাদের বাকি যে দুই ম্যাচ আছে তা এক প্রকার আনুষ্ঠানিকতা বলা চলে। তাই টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলেই মাসুমকে খেলাতে পারে। কে জানে, এই মাসুমের হাত ধরেই লেগ স্পিনার খরা কাটতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...