লর্ডসে ম্যাকগ্রার মাস্টারক্লাস

সব মিলিয়ে স্বাগতিক শিবিরে ছিল না স্বস্তি। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের ভেন্যু ছিল ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডস; যেখানে এর আগের টানা তিন ম্যাচেই জিতেছিল ইংলিশরা। কিন্তু এবার সেই অতীত পরিসংখ্যান ইংলিশ ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারেনি। অদম্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াইয়ে নামার আগেই তাই পিছিয়ে পড়েছিল তাঁরা।

২০০১ সালের জুলাই, ঐতিহাসিক অ্যাশেজ সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের প্রথম টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতায় অজিদের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হারতে হয়েছিল স্বাগতিকদের; সেই ম্যাচে বলতে গেলে কোন প্রতিরোধ-ই গড়তে পারেনি তাঁরা। একই ম্যাচে নিয়মিত অধিনায়ক নাসের হুসেইনের হাতের আঙুল ভেঙে গিয়েছিল।

সব মিলিয়ে স্বাগতিক শিবিরে ছিল না স্বস্তি। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের ভেন্যু ছিল ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডস; যেখানে এর আগের টানা তিন ম্যাচেই জিতেছিল ইংলিশরা। কিন্তু এবার সেই অতীত পরিসংখ্যান ইংলিশ ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারেনি। অদম্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াইয়ে নামার আগেই তাই পিছিয়ে পড়েছিল তারা।

দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশ নির্বাচনের আগে ইংল্যান্ডের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল অধিনায়ক নির্বাচন। শেষমেশ মাইক আথারটনকে অধিনায়ক করেই পরিকল্পনা সাজায় তারা৷ সেই সাথে মার্ক রামপ্রকাশ এবং গ্রাহাম থর্প ফিট হয়ে উঠায় টিম ম্যানেজমেন্টের দুশ্চিন্তা কিছুটা হ্রাস পায়।

অধিনায়কত্বের শুরুটা ভাল হয়নি আথারটনের। টসে হেরে যান অজি ক্যাপ্টেন স্টিভ ওয়াহের কাছে, তাই তাঁর অনুরোধে আগে ব্যাট করতে হয় আথারটনের দলকে। বৃষ্টির কারণে খেলা দেরিতে শুরু হলেও এই সুবিধা কাজে লাগাতে কোন দেরি করেননি অজি পেসাররা। একে একে টপ অর্ডারের তিনজনকেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে দেয় গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং জেসন গিলেস্পি। অবশ্য বিরূদ্ধ কন্ডিশনেও প্রতিরোধ গড়েছিল ব্যাটাররা; একটা সময় ইংল্যান তিন উইকেটের বিনিময়ে ১২১ রান করতে সক্ষম হয়।

তবে বৃষ্টি বাধায় আরো একবার দিনে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে কাজের কাজটা করে যান ব্রেট লি। মার্ক রামপ্রকাশকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে আউট করে সাঁজ ঘরে ফেরান তিনি। চার উইকেট হারানো সত্ত্বেও মোটামুটি মানের সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েই পরদিন বাইশ গজে এসেছিল ইংলিশ ব্যাটাররা। কিন্তু তাদের আশায় জল ঢেলে দেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। দিনের শুরুতে বিশ বলের ব্যবধানে তিন উইকেট তুলে নিয়ে একাই ধ্বসিয়ে দেন স্বাগতিকদের মিডল অর্ডার।

১৩১ রানে সাত উইকেট হারিয়ে তখন রীতিমতো বিপর্যস্ত ইংল্যান্ড। যদিও ডমিনিক কর্ক এবং ইবান ওয়ার্ডের জুটি স্কোরকার্ডে যোগ করে আরো ৪৭ রান। শেষপর্যন্ত জেসন গিলেস্পি কর্ককে আউট করে ব্রেক থ্রু এনে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। এরপর শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিতে টেলএন্ডার দ্রুত বিদায় হলে ১৮১ রানেই গুটিয়ে যায় ইংলিশরা।

অস্ট্রেলিয়াকেও এমন অল্প রানের মাঝে বেঁধে রাখতে দ্রুত উইকেট তুলে নেয়ার প্রয়োজন ছিল। আর সেই কাজটা ভালভাবেই করেছিলেন ড্যারেন গফ এবং অ্যান্ডি ক্যাডিয়াক। এই দুজনের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ২৭ রানে দুই উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার আকাশে তখন দেখা দেয় শঙ্কার মেঘ। দলীয় সংগ্রহ তিন অঙ্কের ঘরে পা রাখতেই মাইকেল স্ল্যাটার আউট হলে সেই মেঘ ঘনীভূত হয়।

অবশ্য ফিল্ডার হিসেবে গফ নিজের কাজ ঠিকঠাক করতে পারলে মাত্র ১৪ রানেই ফিরে যেতে হতো স্টিভ ওয়াহকে। জীবন পাওয়া এই ব্যাটার মার্ক ওয়াহকে সঙ্গে নিয়ে শেষপর্যন্ত গড়েছিলেন ১০৭ রানের জুটি। স্টিভ ওয়াহ ৪৫ করে আউট হলেও সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন মার্ক ওয়াহ।

ইংল্যান্ডকে দু্র্ভাগা বলতেই হয়, স্টিভ ওয়াহকে জীবন দেয়ার পর এবার মার্ক বুচারের হাত থেকে আবারো ফসকে যায় অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ক্যাচ। তেরো রানের মাথায় বেঁচে যাওয়া গিলি শেষপর্যন্ত ৯০ রান করেছিলেন, আর শেষমেশ অস্ট্রেলিয়া করেছিল ৪০১।

প্রথম ইনিংস শেষে ২১৪ রানে পিছিয়ে থাকা ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় ইনিংসে চমকপ্রদ কিছুর আশা করেছিল। কিন্তু এবারও সেই একই দৃশ্যের অবতারণা ঘটে, স্বাগতিক টপ অর্ডারকে দাঁড়াতেই দেয়নি অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। শেন ওয়ার্ন, জেসন গিলেস্পি আর ব্রেট লি একটি করে উইকেট তুলে নেয়ায় ৫০ রানে তিন ব্যাটারকে হারায় ইংল্যান্ড।

তবে তিন নম্বরে নামা মার্ক বুচার এবং পাঁচে নামা মার্ক রামপ্রকাশ ৯৬ রানের এক পার্টনারশিপ গড়ে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেন৷ কিন্তু এরপরই শুরু হয় গিলেস্পি এবং ম্যাকগ্রার যৌথ তান্ডব। এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে প্রথমে রামপ্রকাশকে আউট করেন গিলেস্পি, এরপর অ্যালাক স্টুয়ার্ট এবং ইবান ওয়ার্ডকে তুলে নেন গ্লেন ম্যাকগ্রা।

৮৩ রান করা মার্ক বুচার জেসন উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিলে ম্যাচ কার্যত ওখানেই শেষ হয়ে যায়। যদিও ক্রেইগ হোয়াইটের অপরাজিত ২৭ রানে ভর করে ইনিংস পরাজয় এড়াতে সক্ষম হয় ইংল্যান্ড। অ্যান্ডি ক্যাডিয়াক এবং ড্যারেন গফ গিলেস্পির বলে আউট হওয়ার পর ২২৭ রানে অলআউট হয় তারা।

মাত্র ১৪ রানের টার্গেটে দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নেমে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। আর পুরো ম্যাচে আট উইকেট শিকার করা গ্লেন ম্যাকগ্রার হাতে উঠে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার। শুধু সেই ম্যাচ নয়, পুরো সিরিজেই অবশ্য অস্ট্রেলিয়া ছিল দারুণ ছন্দে; ইংল্যান্ডের মাঠেই তাদের ৪-১ ব্যবধানে হারিয়ে অ্যাশেজ ট্রফি ঘরে তোলে স্টিভ ওয়াহ এর দল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...