ঢাকায় আসবেন সৌরভ গাঙ্গুলি। কেবলই একদিনের জন্য, না আসলে একবেলার জন্য। এরমধ্যেই খানিকটা সময় দিবেন মেয়র কাপের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে। সৌরভ গাঙ্গুলি বিকাল চারটা নাগাদ প্রবেশ করলেন সেই অনুষ্ঠানে। আয়োজকদের নানা কর্মকান্ড শেষে অবশেষে সৌরভ মঞ্চ উঠলেন, মাইকটা তাঁর হাতে তুলে দেয়া হল। এরপর মিনিট চারেক সৌরভ যেন কবি, হল ভর্তি মানুষগুলো শুধুই তাকিয়ে থাকলো, শুধুই শুনে গেল তাঁকে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত ডিএনসিসি মেয়র কাপের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান ছিল এটি। সৌরভ গাঙ্গুলি আজ ঢাকা এসেছেন মূলত একটি ব্যাংকের প্রমোশনের কাজে। তাঁর আগে মেয়রের অনুরোধে এসেছিলেন এই অনুষ্ঠানে। যেখানে ক্রিকেট নিয়ে খানিকক্ষণ কথা বলবেন সৌরভ।
ফলে দুপুর তিনটা থেকেই গুলশানের সেই হোটেলে সাংবাদিকদের ভীর। ঘন্টাখানেকের অপেক্ষার পর সৌরভ যখন আসলেন তখন প্রায় হুলস্থূল অবস্থা। এত এত ক্যামেরাকে জায়গা দিতে গিয়ে দিশেহারা আয়োজকরা। এসবের কারণে অনুষ্ঠান শুরু হতে বিলম্ব হল আরো কিছুক্ষণ।
এরপর অনুষ্ঠান অবশেষে যখন শুরু হল তখনও ঘটেছে চোখে লাগার মত কিছু ঘটনা। সৌরভ গাঙ্গুলির সামনে বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরার কথা বলা হলেও দেখা গিয়েছে ভিন্ন চিত্র। সৌরভকে স্বাগত জানাতে বেজেছে ভিনদেশি গান। এরপর সৌরভের উপর একটি অডিও ভিজুয়্যালও দেখানো হয় সেই অনুষ্ঠানে।
তবে সেখানেও সৌরভ সম্পর্কে দেয়া হয় একাধিক ভুল তথ্য। এসবকিছু ভারতের সাবেক এই অধিনায়কের সামনে আয়োজকদের ঘাটতিই তুলে ধরেছে শুধু। সেসব যাইহোক, অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ তো সৌরভ গাঙ্গুলি নিজেই।
প্রিন্স অব কলকাতা মঞ্চে উঠলেন প্রিন্সের মত করেই। সময়ের অভাবে খুব বেশিক্ষণ কথা বলেননি। এই সবমিলিয়ে মিনিট পাঁচেক। তবে তাতেই মন ভরেছে। আরো কিছু শুনতে চাওয়ার আকুতি ছিল বটে। তবে এটুকুই বা শুনতে পাওয়া কম কিসের।
মিনিট পাঁচেকের বক্তব্যে ফুটে উঠলো বাংলাদেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসা। বোঝা গেল এখনো কতটা খোঁজ রাখেন বাংলাদেশের। মঞ্চে উঠেই স্মৃতিচারণ করলেন নিজের প্রথম বাংলাদেশে আসার সেই মুহূর্ত। সৌরভ বলছিলেন,’ আমি প্রথম বাংলাদেশে আসি খুব সম্ভবত ১৯৮৯ সালে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে এশিয়া কাপ খেলতে। সেই থেকেই বাংলাদেশের সাথে আমার সম্পর্ক। আমার প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্বও এই বাংলাদেশেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসের সাথে আমার প্রাণ সবসময়ই জড়িয়ে থাকবে।‘
বাংলাদেশ-ভারতের সেই টেস্ট ম্যাচ নিয়ে সৌরভ আরো বলেন,’ ওটা ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। আর আমারো প্রথম টেস্ট ভারতের অধিনায়ক হিসেবে। আমার এখনো মনে আছে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েছিল। পরে আমি যখন ড্রেসিং রুমে ঢুকি ভাবলাম অধিনায়ক হয়ে প্রথম ম্যাচেই হেরে যাব। পরে আমরা ঘুরে দাড়াই, সেই টেস্ট ম্যাচটা আমরাই জিতেছিলাম।‘
এছাড়া বাংলাদেশের সংস্কৃতিও মুগ্ধ করে সাবেক এই অধিনায়ককে। বাংলাদেশের সংগীতও তিনি শোনেন নিয়মিতই। বলছিলেন,’ আমি বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে খুবই ওয়াকিবহাল, বাংলাদেশের গান, বাংলাদেশের সংস্কৃতি আমার পছন্দ। আমার মনে হয় মিউজিক বাংলাদেশের হৃদস্পন্দনের মত। এখানের অনেক বিখ্যাত গায়ক-গায়িকাদের গান আমি শুনেছি।‘
এছাড়া বাংলাদেশের সাথে আরো একটি স্মৃতির কথা তুলে ধরেন সৌরভ গাঙ্গুলি। বাংলাদেশই ভারতের সাথে প্রথম পিংক বল টেস্ট খেলেছিল। আর সেসময় বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন সৌরভ। সেই সময়ের কথা মনে করে সৌরভ বলেন,’ এটাও একটা অদ্ভুত মিল যে আমি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম পিংক টেস্ট আয়োজন করেছিলাম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গিয়েছিলেন আমার আমন্ত্রণে।‘
নিজের বক্তব্য শেষ করে আর বেশিক্ষণ সেখানে ছিলেন না সৌরভ। দ্রুতই চলে গিয়েছেন যে কারণে তিনি ঢাকায় এসেছেন সেখানে। তবে যাবার আগে ছড়িয়ে গিয়েছেন সৌরভ। বাংলাদেশের মানুষকে দিয়ে গেলেন একরাশ ভালোবাস।