ম্যাচের তখন ৬৮ মিনিট। ডান দিক দিয়ে বল নিয়ে একাই ওয়েলসের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন মার্কাস রাশফোর্ড। এরপর দুজনকে ড্রিবল করে দুর্দান্ত এক শটের মাধ্যমে ওয়েলসের জালে বল জড়িয়ে ফেলেন তিনি। রাশফোর্ডের সেই গোলে ইংল্যান্ড ৩-০ তে এগিয়ে যায়। আর এখানেই মঞ্চস্থ হয় ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত। রাশফোর্ডের করা এ গোলেই বিশ্বকাপে শততম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করে ইংল্যান্ড।
ওয়েলসের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ে প্রথম গোলটিও এসেছিল রাশফোর্ডের পা থেকে। ম্যাচের ৫০ মিনিটে দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকে ম্যাচে নিজের প্রথম গোল করেন তিনি। যেটি ছিল এবারের কাতার বিশ্বকাপে ডিরেক্ট ফ্রি কিক থেকে করা প্রথম কোনো গোল।
ওয়েলসের বিপক্ষে দুই গোল করার আগে ইরানের বিপক্ষেও একটি গোল পেয়েছিলেন রাশফোর্ড। সব মিলিয়ে তিন গোল করে এখন গোল্ডেন বুটের দৌড়ে শীর্ষে চলে এসেছেন তিনি। তিন গোল করে তাঁর সাথে যুগ্মভাবে শীর্ষে আছেন কডি গ্যাকপো, এমবাপ্পে আর এনার ভ্যালেন্সিয়া।
আর গ্রুপ পর্বে তিন গোল করার বদৌলতে একটি কীর্তিতে নামও লিখিয়েছেন রাশফোর্ড। ববি চার্লটনের পর তিনিই একমাত্র ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড ফুটবলার যিনি ইংল্যান্ডের হয়ে মেজর কোনো টুর্নামেন্টে তিনটি গোল করলেন।
২০২০ ইউরোর ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে পেনাল্টি শ্যুটআউটে পেনাল্টি মিস করেছিলেন রাশফোর্ড। সেই শিরোপা হারের পর প্রচুর সমালোচনা, এমনকি কটাক্ষেরও শিকার হয়েছিলেন তিনি। একই সাথে সেই ম্যাচে আরেক তরুণ খেলোয়াড় সাকাও পেনাল্টি মিস করেছিলেন। তবে এক বছর বাদে, কাতার বিশ্বকাপে এসে, পেনাল্টি মিস করা সেই দুইজনেরই সিংহভাগ অবদানে কাতার বিশ্বকাপের রাউন্ড অফ সিক্সটিনে যাচ্ছে ইংলিশরা। ইংল্যান্ডের করা এখন পর্যন্ত ৯ গোলের ৫ টিই এসেছে সাকা আর রাশফোর্ডের পা থেকে।
ইংল্যান্ড তাদের ইতিহাসে একটি মাত্র বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিল সেই ১৯৬৬ সালে। ৫৬ বছর আগের সেই দৃশ্যপট কি এবার ফিরে আসবে? আপাতত একটি বিষয় কিন্তু কাকতালীয়ভাবে মিলে যাচ্ছে। সেবার রেড ডেভিলদের মিডফিল্ডার ববি চার্লটন ইংল্যান্ডের হয়ে ৩ টি গোল করেছিলেন। ঠিক ৫৬ বছর পর এবারও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফুটবলার হিসেবে রাশফোর্ড তিনটি গোলের দেখা পেলেন। ববি চার্লটনকে অবশ্য ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তাঁর সামনে। তবে ব্যক্তিগত অর্জনে ছাপিয়ে যাওয়ার চেয়ে বরং সেই ৬৬ এর পুনরাবৃত্তির দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবেন রাশফোর্ড।
তাহলে কি, ইটস কামিং হোম? তিন শব্দ নিয়ে এমন একটা লাইন ফুটবল পাড়ায় বহুল প্রচলিত। কিন্তু শিরোপা খরার ব্যর্থতায় সেই লাইনটার ব্যবহার বরং দিনকে দিন পুনরাবৃত্তিই হয়েছে। ইংল্যান্ডের শিরোপার আর পুনরাবৃত্তি হয়নি। তাই ইংল্যান্ডের এবার পালা সেই লাইনটার একটা সত্য রূপ দিতে। সেই যাত্রায় তাঁরা সফল না ব্যর্থ হবে, তার জন্য আপাতত আরও কিছু দিনের অপেক্ষা।