যেন স্বপ্নের এক সিরিজ

রেকর্ডে ভরা এক ওয়ানডে সিরিজের সমাপ্তি ঘটল আরও একটি রেকর্ড দিয়েই। পালটে যাওয়া বাংলাদেশ দলের দারুণ এক প্রতিচ্ছবি হয়ে রইলো আয়ারল্যান্ড সিরিজ।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটা হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে ব্যবধানটা ছিল ২-১। শেষ ম্যাচটায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দারুণ দাপট দেখিয়েই জয় আদায় করে নিয়েছিল টাইগাররা। সেই ধারা অব্যাহত ছিল ইংলিশদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। সেই সিরিজটা বাংলাদেশ জিতেছিল ৩-০ ব্যবধানে ইংলিশদের হোয়াইট ওয়াশ করে।

সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেদের আধিপত্য জানান দেওয়ার পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। অন্তত সদ্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নদের ধবলধোলাই করাটা চাট্টিখানি কথা নয়। এমন নয় যে মিরপুরে একেবারে দূষিত এক উইকেটের বদৌলতে জিতেছে দল। তিন ডিপার্টমেন্টেই নিজেদের সেরাটা দিয়ে জয় আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

এরপরই আয়ারল্যান্ডকে আতিথিয়েতা দিয়েছে বাংলাদেশ। আর তাঁদেরকে রীতিমত পাত্তাই দেয়নি টাইগাররা। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই রেকর্ড গড়া পারফরমেন্স। ব্যাট হাতে বাংলাদেশের আধিপত্য। দলীয় রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশের জয়। প্রথমে ব্যাটারদের দারুণ প্রদর্শনীতে দলীয় রেকর্ড সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ।

৩৩৯ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় আইরিশদের। ব্যাটারদের রেকর্ড গড়া দিনে বাংলাদেশের বোলাররাও যেন রেকর্ড গড়তে মরিয়া। স্বল্প রানেই গুটিয়ে দিল গোটা আইরিশদের ব্যাটিং দূর্গ। ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে সে ম্যাচটি জিতে নেয় বাংলাদেশ। সেটাও আবার রানের বিচারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়।

সেখানেই থেমে থাকেনি টাইগাররা। রেকর্ড গড়ার উন্মাত্ত নেশায় পড়ে যায় গোটা দল। এই নেশার কোন খারাপ দিক নেই। এই নেশায় কেবলই গৌরবের হাতছানি। তাইতো দ্বিতীয় ম্যাচে আবারও রেকর্ডের দিকে ছুটে চলেছে বাংলাদেশ। তবে এবার রেকর্ডটা ব্যক্তিগত। যদিও সে রেকর্ডটা দলেরও।

ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরিটা আদায় করে নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। মাত্র ৬০ বলে দূর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাকিয়ে স্বরুপে ফেরার যাত্রা শুরু করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। সেই সেঞ্চুরিটাও একটা রেকর্ড। এর আগে ৬৩ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড দীর্ঘ ১৪ বছর নিজের দখলে রেখেছিলেন সাকিব আল হাসান।

মুশফিকের গড়া সেই রেকর্ডের উপর ভর করে বাংলাদেশ নিজেদের সদ্য গড়া রেকর্ডই ভেঙে ফেলে। ৩৪৯ রানের বিশাল এক সংগ্রহ গড়ে। দলগত রেকর্ড গড়ে আবারও বিপুল ব্যবধানে জয়ের রেকর্ডের হাতছানি। তবে সেটা আর হতে দেয়নি বেরসিক বৃষ্টি। বাংলাদেশের বোলারদের কোন সুযোগই দেয়নি, নিজেদের পক্ষেও রেকর্ড গড়ার।

তাইতো রীতিমত আহত বাঘের মত হিংস্র হয়ে ওঠে বাংলার পেসাররা। তাতে তৃতীয় ম্যাচে গড়া হয়ে গেল আরও এক রেকর্ড। প্রথমবারের মত পেসাররা বাগিয়ে নিয়েছেন দশটি উইকেট। এর আগে কখনোই সব কয়েকটি উইকেট নিতে পারেনি পেসাররা। অধিকাংশ সময়ই বাংলাদেশ দলে আধিপত্য বিস্তার করেছে স্পিনাররা।

এদিন হাসান মাহমুদ পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। তাছাড়া তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেন উইকেট নিয়েছেন যথাক্রমে দুই ও তিনটি উইকেট। এতেই যেমন একটি রেকর্ড গড়া হয়ে যায়, ঠিক তেমনি আরও একটি রেকর্ডের দুয়ার উন্মোচন হয়ে যায়। দশ উইকেটের ব্যবধানে বাংলাদেশ কখনো জেতেনি ওয়ানডে ম্যাচ।

আর সে সুযোগটি হাতছাড়া করেনি বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। এই দুইজনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মাত্র ১৩.১ ওভারে দশ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। এতেই গড়া হয়ে যায় প্রথমবারের মত দশ উইকেটে জয়ের রেকর্ড।

ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে দলীয়, রেকর্ডের ছড়াছড়ি হওয়া এই সিরিজের সমাপ্তিতে বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে ২-০ ব্যবধানে। আর নব জাগরণের জানান দিচ্ছে বাংলাদেশের এমন আগ্রাসন আর আধিপত্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link