উপহাসের আড়ালে লড়াইয়ের গল্প

অশোক ডিন্ডা - নামটা শুনলেই ঠোঁটের কোণে একচিলতে বিদ্রূপ ভেসে ওঠে। যেন ক্রিকেটের সব ব্যর্থতার প্রতীক তিনি। যেন প্রতিটি খারাপ দিনে তাঁকে টেনে আনা গেলেই উপহাসের ঝুলি ভরে যায়!

অশোক ডিন্ডা – নামটা শুনলেই ঠোঁটের কোণে একচিলতে বিদ্রূপ ভেসে ওঠে। যেন ক্রিকেটের সব ব্যর্থতার প্রতীক তিনি। যেন প্রতিটি খারাপ দিনে তাঁকে টেনে আনা গেলেই উপহাসের ঝুলি ভরে যায়!

অথচ, যে ছেলেটা পশ্চিমবঙ্গের অখ্যাত এক গ্রাম নৈছনপুর থেকে উঠে এসে ভারতীয় ক্রিকেটের দরজায় কড়া নাড়তে পেরেছিল, যে ছেলেটা রোদে পুড়ে, অনাহারে থেকে, কেবল লাল বলকে বুকে চেপে ধরে স্বপ্ন বুনেছিল — তাঁকে ভারত উপহাস ছাড়া আর কিই বা দিয়েছে?

এই গল্পটা তাই পরিসংখ্যানের নয়, এটাও আরেকটা সিনেমার মতো লড়াইয়ের গল্প। কলকাতা থেকে তিন ঘণ্টার পথ পেরিয়ে এক যুবক নেট বোলিং করতে আসে, হাতে ফাটা ফাটা চামড়া, চোখে জেদ। কোচ অটল দেব বর্মণ তাঁকে দেখেই বুঝলেন, ছেলেটার মধ্যে কিছু আছে।

কিন্তু, প্রতিভা থাকলেই তো হয় না! থাকার জায়গা নেই, খাবারের নিশ্চয়তা নেই, এমনকি পরিবারও পেছনে নেই। ক্রিকেট তার জন্য বিলাসিতা, অথচ সে এটাকেই জীবন করে নিয়েছে।

কিন্তু দিন্দা হাল ছাড়েননি। খিদে পেয়েছে? সহ্য করেছেন। ঘুমানোর জায়গা নেই? মাঠের ঘাসই বিছানা হয়েছে। তবু বল হাতে নিয়েছেন, স্পেল পর স্পেল দৌড়েছেন। দিনের শেষে তাঁর সঙ্গী ছিল একটাই—একটা স্বপ্ন!

অশোক দিন্দা হয়তো ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভার অধিকারী ছিলেন না, কিন্তু তাঁর শরীরী ভাষাই বলে দিত, এই মানুষটা সহজে ভেঙে পড়ার নয়। বাংলা দলের হয়ে রঞ্জিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে উঠে এলেন জাতীয় দলে। আইপিএলেও জায়গা পেলেন, সৌরভ গাঙ্গুলির আস্থাভাজন হলেন। কিন্তু সৌরভের বিদায়ের পর কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁকে সরিয়ে দিল।

কলকাতার বাইরে আইপিএলে সেই অর্থে তাঁর আর ক্যারিয়ার গড়েও ওঠেনি। এক দুইটা ওভারের ভুলে তাঁকে ছিটকে ফেলা হয়েছে। জাতীয় দলেও ছিল না বলার মত একটা ক্যারিয়ার। কিন্তু, দু:সাহসীদের গল্প কি এত সহজে শেষ হয়?

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪২০ উইকেট! লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৯৮ ম্যাচে ১৫১ উইকেট! টি-টোয়েন্টিতে ইকোনমি ৭.৬৮! একজন ফাস্ট বোলারের জন্য এই সংখ্যাগুলো মন্দ নয়, তাই না? কিন্তু আমরা দেখলাম না সেই সংগ্রাম, সেই ঘাম, সেই আত্মত্যাগ। অবশ্য, ডিন্ডা অ্যাকাডেমি নামে ট্রল হন তিনি রোজ। একজন মানুষ, যিনি সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছিলেন, তাঁকে নিয়ে এমন নির্মম রসিকতা কি শোভা পায়?

ডিন্ডা একদিন বিদায় নিলেন, নিঃশব্দে। লোকে থামেনি। দাঁত বের করে ট্রল চালিয়েছে। অথচ, ড্যারেন স্যামির মিরপুরের প্রেস কনফারেন্সে বলে যাওয়া কথাগুলো তাঁদের কানে বাজেনি — ‘আমি কি তোমাদের বিনোদন দিতে পেরেছি?’ অশোক ডিন্ডা বিনোদন দিয়েছেন, তবে নিজের রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে। তারপরও তাঁকে নায়ক হিসেবে মনে রাখবে না কেউ। তিনি শুধুই স্বস্তা উপহাসের পাত্র!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link