এই তিনটি ছবি এই সিরিজের বাংলাদেশ দলের বিজ্ঞাপন।
একটি ছিল মিরাজের ম্যাজিক। কখনও কখনও এক মুহূর্তের ব্রিলিয়ান্স একটি ক্রিকেট ম্যাচ জিতিয়ে দেয়। মিরাজের ওই জাদুকরি মুহূর্তটি যেমন। বরাবরই তিনি ভালো ফিল্ডার। তবে ওই মুহূর্তটায় তার ভেতর ভর করেছিল যেন জন্টি রোডস, রিকি পন্টিং কিংবা হার্শেল গিবস!
শান্ত ক্যাচটি নিতে পারেননি সীমানায় অনেকটা লাফিয়েও। তার পক্ষে সম্ভবও ছিল না। তবু তিনি চেষ্টায় খামতি রাখেননি। হৃদয় কাভারে ফুল লেংথ ডাইভ দিয়েছিলেন চোখের পলকে। শটে টাইমিং ছিল দারুণ, জোর ছিল প্রচণ্ড। হৃদয়ের রিফ্লেক্সও ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু বল মুঠোয় জমাতে পারেননি। যারা টুকটাক ক্রিকেট খেলেছেন, যারা বুঝবেন যে, এসব ক্ষেত্রে আসলে বল হাতে আটকে যেতে হয়। আটকে না গেলে কিছু করার থাকে না। হৃদয়েরও করার কিছু বাকি ছিল না।
গোটা সিরিজে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিংকে ফুটিয়ে তোলা যায় এই তিনটি উদাহরণ দিয়ে। ৩-০তে সিরিজ জয়ের ভেতরে ছোট ছোট প্রাপ্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এই সিরিজে দলের ফিল্ডিং। এই সিরিজে দলের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং, মাঠে মুভমেন্ট, পজিটিভলি বল তাড়া করা, ব্যাক আপ, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইনটেনসিটি ধরে রাখা, এই সবকিছু ছিল বিশ্বমানের।
সিরিজ শুরুর আগে কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, এই দলকে এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং দল হয়ে উঠতে দেখতে চান তিনি। শেষ টি-টোয়েন্টির পর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বললেন, ‘সম্ভবত আমরা এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং দল…।’ যদিও এই তুলনাটা করা কঠিন এবং এক সিরিজ দিয়েই তুলনা-বিবেচনা করা আরও কঠিন। তবে শুরুটা তো হলো!
থ্রোয়িংয়ে এখনও অনেক উন্নতির সুযোগ আছে। ক্যাচিংয়ে আরও ভালো করার জায়গা আছে। তবে সেটা সব সময়ই থাকে। ভালোর শেষ নেই। এই সিরিজে এত ভালো ফিল্ডিং করবে বল, এত ভালো শরীরী ভাষা থাকবে, এতটা স্পিরিটেড ক্রিকেট খেলবে, এটাই বা কদিন আগে কজন ভাবতে পেরেছিলাম!
এই সিরিজে ইংল্যান্ডকে ৩-০তে হারানো বহুদূর, সিরিজ জিততে পারবে বাংলাদেশ, এটা অন্তত আমার সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না। হ্যাঁ, এই ইংল্যান্ড দলে অ্যালেক্স হেলস, লিয়াম লিভিংস্টোন, জনি বেয়ারস্টো, হ্যারি ব্রুক, স্যাম বিলিংস থাকতে পারতেন। তারা থাকলে কী হতো, জানি না। তাদের যে কোয়ালিটি, তা ম্যাটার করে অবশ্যই। তবে ইংল্যান্ডের শক্তির গভীরতার কথা আমরা বলি, গোটা বিশ্ব বলে। যারা আছেন, তাদের বিপক্ষে জয়ের বিশ্বাসই বা কজনের ছিল? বোলিংয়ে কিন্তু সম্ভাব্য সেরাদের প্রায় সবাই ছিলেন।
উইকেট-কন্ডিশন পক্ষে ছিল অবশ্যই। তবে সেটা তো সব দেশে সব সময়ই স্বাগতিকদের পক্ষে থাকবেই। তার পরও তিন ম্যাচের দুটিতেই উইকেট যথেষ্ট ভালো ছিল (ব্যাটিংয়ের জন্য)। শুধু দ্বিতীয় ম্যাচে ছিল টিপিক্যাল মিরপুর উইকেট। কিন্তু সেদিনও উইকেট ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড সিরিজের মতো ছিল না।
সে রকম থাকলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো সমস্যা দেখি না। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউ জিল্যান্ডের মতো দলগুলির বিপক্ষে ঘরের মাঠে উইকেটের যে কোনো সুবিধা নেওয়ার পক্ষপাতি আমি, যে কোনো ফরম্যাটে হোক না কেন। তবে সেটা অন্য বিতর্ক। এবার ওই দ্বিতীয় ম্যাচে, যেটিতে ইংল্যান্ড ১১৭ রান করেছে, সেখানেও ৬ ওভারে ৫০ রান ছিল তাদের। একটু ভালো ব্যাটিং করলে ১৪০-১৫০ রান হতে পারত।
সব মিলিয়ে, যারা চাঁদের গায়ে কলঙ্ক খোঁজেন, এই ৩-০তে জয়ে তাদের হতাশ হওয়ার কথা। ব্যক্তিগতভাবে ক্রিকেটারদের বেশ কজনের জন্য যেমন, তেমনি এই জয়টা দল হিসেবেও বাংলাদেশের জন্য বিশাল আত্মবিশ্বাসের রসদ হবে সামনে। হওয়া উচিত আর কী।
এখনই অবশ্য আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখতে চাই না। টি-টোয়েন্টিতে আগেও নানা সময়ে টুকটাক ভালো ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা এক-দুই ম্যাচেই থমকে গেছে। এবার আশার উপকরণ যদিও অনেক বেশি আছে, তবু সময়ের হাতেই সব ছেড়ে দিতে চাই।
আপাতত ধরে নিচ্ছি, টি-টোয়েন্টিতে নতুন বাংলাদেশের সূর্যোদয় এই সিরিজে। সময়ের সঙ্গে সেই সূর্যের তেজ তীব্র হোক, আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে যাক আনন্দময় বিস্ময়ে, এটুকুই চাওয়া।
– ফেসবুক থেকে