দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল ওপেনার

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটারদের নির্দিষ্ট অর্ডার থাকে না। থাকলেও তা হরহামেশাই রদবদল হয়। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায়। তবে ওপেনিং তেমন একটা পরিবর্তন সচরাচর দেখা মেলে না। ক্রিকেটের ওপেনিং জুঁটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হোক সেটা টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি। তাই ওই স্থানে পরিবর্তন বিবেচনা হয় চূড়ান্ত ‘জুয়া’ হিসেবে।

চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এমন এক অদ্ভুত কাজ করে বসলেন নিউজিল্যান্ড কোচ গ্যারি স্টিড। একজন ফিনিশারকে ওপেনার রুপে ইনিংস শুরুর দায়িত্বে ঠেলে দেওয়া নিতান্ত চরম সাহসিকতার প্রকাশ কিংবা ভাগ্য পরীক্ষার এক শেষ বিকল্প। তবে গ্যারি স্টিডের হাতে বিকল্পের এত অভাব ছিল না তবুও তিনি ঝুঁকি নিলেন। বানিয়ে দিলেন ড্যারেল মিশেলকে একজন লোয়ার অর্ডার ব্যাটার থেকে একজন ওপেনার।

নিউজিল্যান্ড দলের ম্যানেজমেন্ট যে খুব চাপের মুখে এমন এক সিধান্ত নিয়েছেন তা বলা যাচ্ছে না। নিউজিল্যান্ড দলের নিয়মিত ওপেনার টিম সেইফার্টের ইনজুরিতে ম্যানেজমেন্টের আউট অব দ্য বক্স পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মিশেলের ব্যাটিং অর্ডারের পদোন্নতি। তবে মিশেলকে টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসে ওপেনিং এর দায়িত্ব দেয়নি ম্যানেজমেন্ট।

প্রথমবারের মত মিশেল ওপেন করেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্ল্যাকক্যাপদের দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে। কিন্তু তিনি কেবল দুই রানই সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এক ম্যাচের বিচারে তো আর কারো বিষয়ে একটা সিধান্তে আসা যায় না। তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচেও তিনি ওপেন করলেন মার্টিন গাপটিলের সাথে। সেই ম্যাচে তিনি ছিলেন দলের যৌথ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ২০ বলে ২৭। ঠিক পরখ করা গেলো না তিনি কেমন করবেন ওপেনিংয়ে।

অগত্যা আরো এক ম্যাচ সুযোগ পেলেন ড্যারেল মিশেল। ভারতের বিপক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও তাঁর উপর ভরসা রাখলেন কোচ এবং অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। তবে এদিন নিজেকে প্রমাণ করার খুব বেশি সুযোগ ছিলনা মিশেলের হাতে। মাত্র ১১০ রানেই ভারতের মতো শক্ত দলকে আটকে ফেলে কিউই বোলাররা। বোলারদের মধ্যে মিশেল স্যান্টনার ও ইশ সোদি ছিলেন অন্যতম।

তাঁরা আবার ছিলেন ড্যারেল মিশেলের ছোট্ট বেলার সতীর্থ। নিউজিল্যান্ডের নর্দান ডিস্ট্রিক্ট থেকে উঠে এসেছেন এরা তিনজন। এ বিষয়ে স্মৃতিচারণ করে ড্যারেল বলেন, ‘এটা আমাদের জন্যে এক রোমাঞ্চকর একটি বিষয়। একদল শিশু যারা কি না একসাথে পার্কে খেলাধুলা করত তাঁরা কি না এখন একসাথে বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে।’

ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ড্যারেল তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে ৪৯ রান করে মাত্র ৩৫ বলে। সেই ইনিংসে ছিল চারটি চার ও তিনটি ছয়ের মার। ভারত সে ম্যাচে ছয় হাকিয়েছিল মোটে দুইটি। ভারতের বিপক্ষে ড্যারেলের পারফর্মেন্স টিম ম্যানেজমেন্টকে আশ্বস্ত করে যে তাঁরা কোন ভুল সিধান্ত নেননি। বরং তাঁদের করা ‘জুয়া’ তাঁদের পক্ষেই ফলাফল দিয়েছে।

কিউই কোচ স্টিড ড্যারেল মিশেলের পদোন্নতি ও সাফল্য সম্পর্কে বলেন, ‘তাঁর মধ্যে বেশকিছু গুণাবলী রয়েছে যা আমদের পছন্দ। তাঁর লড়াকু মনোভাব এবং প্রতিপক্ষকে সামলানোর মানসিকতা আমরা ভালবাসি। আমি মনে করি কিছুকিছু সময় আপনাকে সাহসী হতে হবে এবং আপনার যা সঠিক মনে করবেন তাই করতে হবে। আমাদের মনে হয়েছিল তাঁকে ওপেনিং এ নামানোটা সঠিক সিধান্ত হতে পারে এবং তাই আমরা ড্যারেলকে সুযোগ দিয়েছি। তিনি সফল হয়েছেন, আমাদের পরিকল্পনাও সফল করেছেন।’

তবে টপ অর্ডারে যে ড্যারেল একেবারেই খেলেননি বিষয়টা তেমন নয়। তিনি ইংলিশ কাউন্টি লিগে ক্যান্টাবুরির হয়ে তিন নম্বর পজিশনেও ব্যাট করেছেন তিনি। এ বিষয়ে ড্যারেল বলেন, ‘গত সুপার স্ম্যাশ লিগে আমি ক্যান্টাবুরির হয়ে তিন নম্বর পজিশনে খেলেছি দীর্ঘ সময় ধরে। সত্যিকার অর্থে তিন নম্বর পজিশন ওপেনিং করার মতোই। আপনি জানেন যে আপনাকে প্রথম ওভারেই ক্রিজে নামতে হতে পারে এবং আমার ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেছেও। আমার মাইন্ডসেট এবং ইন্টেন্ট সর্বদাই একই রকম থাকে, আমি ম্যাচে আমার রোলের ব্যাপারে দ্বিধাহীন থাকি এবং ভরসা রাখি আমার স্কিলের উপর। আমি কোন পজিশনে ব্যাট করছি এ বিষয়টা আমাকে খুব বেশি একটা চিন্তিত করে না।’

গত পাঁচ বছরের সুপার স্ম্যাশের ইতিহাসে ড্যারেলে রয়েছেন ছক্কা হাকানোরদের শীর্ষে। মোট ৪৮টি ছক্কা মেরেছেন তিনি ২০১৬ থেকে এখন অবধি। এতে তাঁর পেশিশক্তির প্রমাণ মেলে খুব ভালভাবেই। তা পাওয়াপ্লেতে দুই জন মাত্র খেলোয়াড় ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে থাকার সুযোগ থাকে।

এতে ছক্কা হাকানো সহজ হয়ে যায় কি না এর প্রশ্নের জবাবে ড্যারেল বলেন, ‘পাওয়ারপ্লেতে যেহেতু কম সংখ্যক খেলোয়াড় বাউন্ডারি লাইনে থাকেন। এর ফলে খানিক হাত চালিয়ে খেলা যায়। আপনি অন্তত নিশ্চিত থাকেন আপনি চার রান পাবেন এবং আপনার আউট হয়ে যাবার সম্ভাবনা কম। তবে ক্রিকেট খেলায় আপনাকে পরিস্থিতি বুঝতে হবে। পরিস্থিতি আপনাকে প্রভাবিত করবে রিস্ক নিতে আবার পরিস্থিতি আপনাকে প্রেসার গ্রহণে বাধ্য করবে। আপনাকে খুবই হিসাব করে খেলতে হবে।’

এই যে ‘জুয়া’র ফলাফল ভিন্ন হলে আজ হয়ত ড্যারেলকে নিয়ে লিখা হতো না। জানা হতো না তাঁর মতামত। বক্সকের বাইরের পরিকল্পনা জানা হতো না। হয়ত নিউজিল্যান্ডের জন্যে ব্যাকফায়ার করতে পারতো ড্যারেলকে ওপেনিং-এ পাঠানোর সিধান্ত। তবুও কিন্তু ম্যানেজমেন্ট একটা রিস্ক নিয়েছেন। একজন ফিনিসারকে দিয়ে ইনিংস শুরু করবার রিস্ক। ক্রিকেট মাঠে এমন রিস্ক নিতে হয় মাঝেসাঝেই। তবে সে ঝুঁকি নেওয়ার আগে আপনাকে হিসেব কষে নিতে হবে। আপনার খেলোয়াড়কে বিশ্বাস জোগাতে হবে, সর্বোপরি খেলতে হবে একটি দল হিসেবে।

– ইএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link