ভারতীয় ক্রিকেট দলের ভবিষ্যৎ কতটা সুসংগঠিত

দলটার নাম যখন ভারত, তখন তাদের পরাজয়ের বিপরীতে যে সর্বাগ্রে সমালোচনার বলয়েই বদ্ধ থাকবে তা এক প্রকার নিশ্চিতই। হয়েছেও তাই। দেশের সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বিদেশি কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা রীতিমত কথার বিষে মুণ্ডপাত করে ভারতীয় দলকে। অবশ্য সে সব তিক্ত কথার সত্যও কোনো অংশে কম নেই। আছে ভবিষ্যৎ ভারতীয় দল নিয়ে শঙ্কাও।

ওভাল টেস্টে অজিদের কাছে ২০৯ রানের হার! ফাইনালের মঞ্চে এমন অসহায় আত্মসমর্পণ ভারতের শেষ কবে ঘটেছে, তার জন্য ইতিহাসের পুরনো পাতা উল্টে পাল্টে দেখতেই হবে। তবে পরাজিত দলটার নাম যখন ভারত, তখন সর্বাগ্রে যে সমালোচনার বলয়েই তাঁরা আবদ্ধ থাকবে, তা এক প্রকার নিশ্চিতই।

হয়েছেও তাই। দেশের সাবেক ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বিদেশি কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা রীতিমত কথার বিষে মুণ্ডপাত করে ভারতীয় দলকে। অবশ্য সে সব তিক্ত কথার সত্যও কোনো অংশে কম নেই। আছে ভবিষ্যৎ ভারতীয় দল নিয়ে শঙ্কাও।

রোহিত, বিরাট। এরপর কে? কিংবা চেতেশ্বর পুজারার স্থলেই বা ভবিষ্যতে কোনো ব্যাটার হাল ধরবেন? এমন সব প্রশ্ন অনুমিত ভাবেই ঘুরে ফিরে আসছে।

কোহলি বয়স এখন ৩৪। আর রোহিতের ৩৬। সামনের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এ দুই ক্রিকেটার নিশ্চিতভাবেই টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনায় থাকছেন। তবে সেই যাত্রায় তরুণ ক্রিকেটারদের পথ রূদ্ধ হয়ে পড়বে কিনা, তা বেশ প্রশ্নসাপেক্ষ।

রোহিতের অধিনায়কত্বে ভারত খারাপ করেনি। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ হাতছাড়া হলেও তা গত চক্রের সেরা দুই দলের মধ্যে একটি ভারত। তবে এই মুহূর্তে রোহিত শর্মার যেমন ফিটনেস কিংবা ফর্ম, তাতে তাঁকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করাটাই বোকামি।

তাছাড়া, রোহিতের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে পৃথ্বী শ, যজস্বী জয়সওয়াল, মায়াঙ্ক আগারওয়ালের মতো তরুণ ব্যাটার জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন। সব কিছু মিলিয়ে আগামী টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এ তরুণ ব্যাটারদের দলভূক্ত করার এখনই মোক্ষম সময়।

কিন্তু সে ক্ষেত্রে বাঁধা হলো, রোহিত শর্মার অধিনায়কত্ব। এখন এই বাঁধাতেই জয়সওয়ালদের মতো ব্যাটারদের কাজে লাগাতে না পারা আক্ষেপে ভারত পরবর্তীতে পুড়বে কিনা তা সময়ই বলে দিবে।

শেষ দুই বছরে লাল বলের ক্রিকেটে বিরাট কোহলির পরিসংখ্যান মোটেই দারুণ কিছু নয়। বরং বিরাট কোহলি নাম বিবেচনায় সেটিকে বাজে পরিসংখ্যানের খাতাতেই ফেলা যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোহলির উত্তরসূরি হিসেবে এখন কি কেউ তৈরি হয়েছে? ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট কি সেই যাত্রায় সফল?

অনেকেই শুভমান গিলের কথা আনতেই পারে। তবে টেস্ট ক্রিকেট নাম্বার চারে বিরাটের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে এখনও কেউ সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি। শ্রেয়াস আইয়ার এখানে একটা অপশন হতে পারেন। তবে তিনিও বেশ কিছু দিন ধরে ইনজুরিতে দলের বাইরে। তাই এখন পর্যন্ত, বিরাট কোহলির ব্যাকআপ যে ভারত তৈরি করে উঠতে পারেনি তা এক দিক দিয়ে প্রমাণিতই।

রোহিতের পর ভারতের টেস্ট দলের নেতৃত্ব সামলাবেন কে? খুবই জনপ্রিয়, একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। অবাক করা ব্যাপার হলো, রোহিতের পর দল সামলানোর দৌঁড়ে যারা আছেন তাদের সবাই এখন ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে। জাসপ্রিত বুমরাহর বাইশ গজে পা পড়েনি, তা প্রায় মাস দশেক হতে চলল।

গাড়ি দুর্ঘটনায় ঋষাভ পান্তও আছেন মাঠের বাইরে। আর আইপিএল চলাকালীন ইনজুরিতে পড়ে দল থেকে ছিটকে গিয়েছেন লোকেশ রাহুল। তারুণ্য ও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় মূলত এই ৩ জনকেই ভারতের পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক ভাবা হচ্ছে।

চেতেশ্বর পুজারার কাছে টেস্ট ক্রিকেটই সব। তবে শেষ দুই বছর পরিসংখ্যান আর তার হয়ে কথা বলছে না। তাছাড়া বয়স বিবেচনায় তাকেও ঠিক ভারতের ভবিষ্যৎ বলে গণ্য করা যায় না। তাই টিম ম্যানেজমেন্টকেও খুব শীঘ্রই অভিজ্ঞ এ ব্যাটারের রিপ্লেসমেন্ট খুঁজে নিতে হবে।

ওভালের ফাইনালে ৮৯ ও ৪৬ রানের দুটি ইনিংস খেলেছেন আজিঙ্কা রাহানে। কিন্তু তিনিও ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ পেরিয়েছেন। রাহানের রিপ্লেসমেন্ট তৈরিও এখন ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনায় থাকা উচিৎ।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের পরই নাকি ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন রবিচন্দন আশ্বিন। কিন্তু পরবর্তীতে আর সেটি করেননি। সদ্য শেষ হওয়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট তিনিই নিয়েছিলেন।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আশ্বিনের অবর্তমানে তাঁর মতো কোনো স্পিনার আদৌ প্রস্তুত আছে তো? একই ভাবে রবীন্দ্র জাদেজার মতো অলরাউন্ডার তৈরি আছে তো ভারতের স্কোয়াডে? এই সময়ে এসে এর হয়তো সদত্তর নেই। কিন্তু ভারতের ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাটন বদলের যে ঐতিহ্যগত সংস্কৃতি, তা এই সময়ে এসে একটু কমই চোখে পড়ে।

শচীনের পর বিরাট এসেছেন, ভিভিএস লক্ষণের জায়গায় মিলেছে পুজারা। কিন্তু একই ভাবে বিরাট, পুজারার স্থলে ভরসা করা মতো বিকল্পই যেন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এর অর্থ ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট বিগত বছর গুলোতে এগিয়েছে বর্তমান পুঁজি করে। ভবিষ্যৎ ভাবনার ব্যাপারটা ঠিক অতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি।

এখন এমন বর্তমান কেন্দ্রিক ভাবনায় ভারত কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দিবে। তবে এমন অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে ভবিষ্যতে মাশুলই দিতে হতে পারে টিম ইন্ডিয়াকে। আবারো হয়তো তীরে এসে তরী ডোবার উপাখ্যান তৈরি হবে ভারতের নামের পাশে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...