অবসরের উপদেশ দেওয়ার আফ্রিদি কে!

সাবেক ক্রিকেটাররা সুযোগ পেলেই বর্তমান ক্রিকেটারদের দু-চারখানা উপদেশ বাণী শুনিয়ে দেন – ক্রিকেট পাড়ায় এটা বেশ সাধারণ ব্যাপার। এবার যেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি ‘ভুল জায়গায় ভুল উপদেশ’ দিয়ে গোটা ভারতের তোপের মুখেই পড়ে গেলেন। উপদেশটা তিনি দিয়েছেন বিরাট কোহলিকে। তাও আবার উপদেশটা হলো অবসর নেয়ার!

বিরাট কোহলিকে দেয়া শহীদ আফ্রিদির অবসরের পরামর্শ ক্রিকেট মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আফ্রিদির এমন মন্তব্যের বিষয়টি অবাক করেছে অনেক ক্রিকেট বোদ্ধাকে। কারণ বিরাট কোহলি এশিয়া কাপ ২০২২-এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হয়ে ফর্মে ফিরে এসেছিলেন। হ্যাঁ, দীর্ঘদিন তিনি অফফর্ম নিয়ে ভুগেছেন, কিন্তু এশিয়া কাপের মঞ্চেই বিরাট তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন। যেখানে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব কোহলির প্রত্যাবর্তনের আনন্দে ভাসছেন, ঠিক সিই সময়ে শহীদ আফ্রিদির এমন উপদেশ হজম করতে পারছেন না ভারতবর্ষের মানুষরা।

কোহলি এশিয়া কাপের পাঁচ ম্যাচে ৯২ গড়ে এবং ১৪৭.৫৯ স্ট্রাইক রেটে ২৮৬ রান করেছেন। করেছেন দুটি অর্ধশতরান এবং একটি শতরান। নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম এবং আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ৭১ তম শতরানটি করেছেন প্রায় তিন বছর পর। তার স্ট্রাইক রেট এবং গড় টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান থেকেও অনেক ভালো ছিল। রিজওয়ান ছয় ম্যাচে ৫৬ গড়ে এবং ১১৭ স্ট্রাইক রেটে কোহলির চেয়ে মাত্র পাঁচ রান বেশি করতে পেরেছেন। 

সাবেক ভারতীয় লেগ স্পিনার অমিত মিশ্র কোহলি প্রসঙ্গে মন্তব্যের জেরে শহীদ আফ্রিদিকে একহাত দেখে নিলেন। অমিত মিশ্র আফ্রিদির সেই বক্তব্যটি টুইট করে বলেছেন, ‘প্রিয় শহীদ আফ্রিদি, বেশির ভাগ ক্রিকেটার একবারেই অবসর নেয়। তাই আপনি দয়া করে বিরাট কোহলিকে নিয়ে ভাবা ছেড়ে দিন।’

এই মন্তব্য দিয়ে অমিত মিশ্র খোদ আফ্রিদিকেই পাল্টা আক্রমণ করলেন। ইঙ্গিতটা তো পরিস্কারই, কথাটা আফ্রিদির অবসরের ইতিহাসটা অন্তত সেটাই নির্দেশ করে। কারণ, আফ্রিদি তার ক্যারিয়ারে একাধিকবার অবসর নিয়েছেন, বার বার অবসর নিয়ে ফিরে আসাকে তিনি রীতিমত শিল্পে পরিণত করেছিলেন।

২০০৬ সালে তাঁর প্রথম টেস্ট অবসরের ঘোষণা দেওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা ফিরিয়ে নেওয়া হয়। আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক টেস্টে পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব করার পর ২০১০ সালেও তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন। এরপর আফ্রিদি, যিনি ২০১১ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন, বিশ্ব ইভেন্টের পরে সমস্ত ধরণের খেলা থেকে অবসরের ঘোষণা জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বোর্ডের পীড়াপীড়িতে অবসরের ঘোষণা ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তারপর অবশেষে ২০১৭ সালে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।

যদিও আফ্রিদির মন্তব্যের জেরে কোহলির প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে ধারণা করা যায় প্রত্যাবর্তনকালে অবসরের মতো পরামর্শ হয়তো খুব একটা উপভোগ্য নয়। কেবলই তো নিজের পুরোনো রুপে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। বিরাট কোহলি যে এখনো ফুরিয়ে যাননি সেই বার্তাই জানান দিচ্ছিলেন। বয়স হিসেবে বিরাট এখনো ৩৪ এর ঘরে, সেই হিসেবেও এখনো যথেষ্ট সময় আছে তাঁর হাতে। আর ক্যারিয়ারের হিসেবে এই শতাব্দীর অন্যতম সেরা ব্যাটারের সব অর্জন ঝুলিতে থাকলেও, আরও যে পথচলা বাকি।

‘মেন ইন ব্লু’- দের হয়ে বাইশ গজে আরও ঝড় তোলা বাকী তাঁর। বিরাট কোহলি যে ক্রিকেটে এক বিস্ময়ের নাম, সেই বিস্ময় এতো সহজে ফুরিয়ে যাক তা চাননা ভক্তরা। বিরাট আরও বিরাট বিরাট অর্জন করুক। কেবল যখনই তাঁর মনে হবে এক্ষুনি থামা উচিত, কেবল তখনই থামুক তিনি। বিরাট তাঁর গল্পটা নিজের মতো করেই লিখুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link