ট্রেডমার্ক জাদেজা

বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচে জয়ের নায়ক নভজ্যোৎ সিধু। কিন্তু আরেকজন আড়ালে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন সেদিন – তিনি অজয় জাদেজা। পাকিস্তানি উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান রশিদ লতিফ নিজের ইউটিউব ‘কট বিহাইন্ড’-এ তুলে ধরেছিলেন জাদেজার গল্প।

বর্তমান সময়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ আয়োজিত হয় না বললেই চলে। দুই দেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের প্রভাব ক্রিকেটে পড়েছে। কিন্তু একটা সময় ভারত এবং পাকিস্তান নিয়মিত দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলত। ব্রাজিল – আর্জেন্টিনা কিংবা রিয়াল মাদ্রিদ – বার্সেলোনা ম্যাচের মতই উত্তেজনা ছড়াত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ।

৯০-এর দশক থেকে একুশ শতকের শুরুর দিক পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান সিরিজ ছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অন্যরকম আকর্ষণ। এসব সিরিজে অবশ্য পাকিস্তানের আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বড় বড় টুর্নামেন্টে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।

বিশেষ করে ১৯৯২ সালের থেকে এখন পর্যন্ত ওয়ানডে বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কখনোই হারাতে পারেনি। এমনকি ভারতের প্রায় প্রতিটি জয়-ই এসেছে বড় ব্যবধানে। এমনই একটা ম্যাচ ছিল ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে। ব্যাঙ্গালোরের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ৩৯ রানে পাকিস্তানিকে হারিয়ে উল্লাসে মেতেছিল ভারত।

বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচে জয়ের নায়ক নভজ্যোৎ সিধু। কিন্তু আরেকজন আড়ালে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন সেদিন – তিনি অজয় জাদেজা। পাকিস্তানি উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান রশিদ লতিফ নিজের ইউটিউব ‘কট বিহাইন্ড’-এ তুলে ধরেছিলেন জাদেজার গল্প।

৪ উইকেট পতনের পর অজয় জাদেজা যখন ক্রিজে এসেছিলেন তখন ইনিংসের বাকি মাত্র ৯ ওভার। অন্য ব্যাটার ভিনোদ কাম্বলি আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত দ্রুত রান করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, এরপর নয়ন মঙ্গিয়াও তাড়াতাড়ি ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। ইনিংসের বিশ বল বাকি থাকতে ভারতের সংগ্রহ তখন ৬ উইকেটে ২৩৬।

এরপরই শুরু হয় অজয় জাদেজার তাণ্ডব ৷ পাকিস্তানি বোলারদের বেদম পিটিয়ে মাত্র ২৫ বলে ৪৫ রান তুলে নেন তিনি। পাকিস্তানের বোলিং লাইন আপে সে সময় ওয়াসিম আকরাম না থাকলেও ছিলেন ওয়াকার ইউনুস, আকিভ জাভেদ, মুশতাক আহমেদ এর মত সময়ের সেরা তারকারা। কিন্তু জাদেজার সামনে সবাই নখ-দন্তহীন হয়ে পড়েছিলেন।

ওয়াকার ইউনুসের এক ওভারেই এসেছিল ২২ রান। সব মিলিয়ে শেষ চার ওভারে ৫৭ রান করে ভারতের সংগ্রহ ২৮৭ তে নিয়ে যান জাদেজা। অনায়াসে সেদিন শটস খেলেছিলেন তিনি। কব্জির জোরে একের পর এক বল বাউন্ডারি ছাড়া করেছিলেন।

ওয়াকার, আকিব জাভেদরা চমৎকার বোলিং করেছেন, কিন্তু ব্যাটসম্যান জাদেজা সেদিন আরো চমৎকার ছিলেন। নি:সন্দেহে ভারতীয় অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস ছিল সেটি।

তাঁর এমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যান রশিদ লতিফ। এই পাকিস্তানি ক্রিকেটারের মতে, তাঁর দেখা পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা ইনিংসগুলোর মধ্যে জাদেজার ব্যাটিং সবচেয়ে সেরা ছিল।

অবশ্য ২৮৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুটা খারাপ হয়নি সফরকারীদের। প্রথম দশ ওভারে ৮৪ রান করেন দুই ওপেনার। এর মাঝে সাঈদ আনোয়ার মাত্র ৩২ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। কিন্তু এই ব্যাটারের বিদায়ের পরে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে শুরু করে পাকিস্তান।

ভেঙ্কটেশ প্রসাদ এবং অনিল কুম্বলে তিন উইকেট করে নিজের ঝুলিতে নেন। এছাড়া জাভাগাল শ্রীনাথ, ভেঙ্কাটপথি রাজু একটি করে উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে মাত্র ২৪৮ রানে আটকে দেন। ৩৯ রানের জয়ের মধ্য দিয়ে ভারত জায়গা করে নেয় বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।

অজয় জাদেজা সে সময় ২৫ বলে ৪৫ রানের ইনিংস না খেললে হয়তো ভারতের সংগ্রহ ২৬০ পার হত না। পাকিস্তান সেক্ষেত্রে জিতেও যেতে পারতো। একজন অজয় জাদেজা-ই সেদিন ব্যবধান গড়ে দিয়েছিলেন। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পাননি ঠিকই, কিন্তু ঐতিহাসিক সেই ম্যাচের কথা আলোচনায় উঠে আসলে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে জাদেজার নাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link