হেয়ালি হেলসনামা

নানান বিতর্কে জর্জরিত একটি ক্যারিয়ার। সম্ভাবনার অপমৃত্যু, এসব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু রয়েছেন অ্যালেক্স হেলস। ক্রিকেট বিশ্বের প্রতাপশালী দেশ ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে আসার পথটা বেশ সংকীর্ণ এবং কন্টকাকীর্ণ। সেই পথ পেড়িয়ে দলে এসেছিলেন হেলস। কিন্তু টিকে থাকাটা আর হয়ে ওঠেনি। প্রত্যাশা পাখা ক্রিকেটের আকাশে মেলে ধরার আগেই ঝড়ে যাওয়া পালক বনে গেলেন হেলস। তবে কি দারুণ সম্ভাবনার আলো জ্বালিয়েছিলেন হেলস।

অ্যালেক্স হেলসের জন্ম ১৯৮৯ সালে ৩ জানুয়ারি। পুরো নাম অ্যালেক্সান্ডার ড্যানিয়েল হেলস। তবে আনুষ্ঠানিক ক্রিকেটের যাত্রার শুরু ২০০৮ সালে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট দিয়ে তিনি শুরু করেন নিজের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার। মে মাসে লিষ্ট ‘এ’ এবং সেপ্টম্বরে খেলেন ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেট। ইংল্যান্ড জাতীয় দলে নিয়মিত হতে শুরু করেন ২০১১ সালে। কিন্তু ওই যে বিতর্ক তাঁকে থামিয়ে দেয় ২০১৭ সালেই। অটোচয়েস ওপেনার থেকে এখন থ্রি লায়ন্সদের জার্সিটিতে তাঁকে দেখতে পাওয়া বেশ দুষ্কর।

হেলস তাঁর জাতীয় দলের ক্যারিয়ারের শুরু করেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট দিয়ে। ভারতের বিপক্কে ম্যানচেস্টারে হওয়া ২০১১ সালের ৩১ আগস্টের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে ইংল্যান্ড দলে যাত্রা শুরু করেন হেলস। বেশ দীর্ঘকায় ব্যাটার। পাওয়ার হিটিংয়েও বেশ পটু। বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। শুরুর দিকে প্রায় ১৪০ স্ট্রাইক রেটে রান তুলতেন একেবারে নিয়ম করেই। গড়টাও তখন ছিলো ৪০ এর কাছাকাছি। কিন্তু ওই একটা ফরম্যাটেই যেন আটকে যেতে বসেছিলেন তিনি।

কিন্তু না অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে প্রায় ৩২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পর তাঁর সুযোগ এলো ওয়ানডে দলে। সময়ের হিসেবে তা বছর তিনেকের এক আক্ষেপ। তারপর আবার অপেক্ষার শুরু। তিন ফরম্যাটেই দলের সেরা এবং প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠার লড়াইয়ের পাশাপাশি অপেক্ষার প্রহর গুণতে শুরু করেন হেলস। এই ক্ষেত্রে অবশ্য খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি তাঁকে ২০১৫ সালেই সাদা পোশাকে বুকে থ্রি লায়ন্স খচিত জার্সিটা গায়ে জড়িয়ে নেন হেলস।

এর আগে অবশ্য ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে মোটামুটি মানে একটি ক্যারিয়ারের ভিত গড়ে নেন। টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার আগে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের দেখা পান পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই সুবাদেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পান তিনি। ওপেনার শ্যূনতা ঘোচাতে তাঁর কাঁধে আসে ইনিংস শুরুর দায়িত্ব। এরপর নিজের আপন গতিতে খেলতে থাকেন হেলস। ২০১৫ বিশ্বকাপ দলেও সুযোগ মেলে তাঁর। কিন্তু সেবার বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরে বিদায় নিতে হয় টুর্নামেন্ট থেকে। অভাগা হেলস কিংবা দোষী হেলস আপনি যা বলেই আখ্যায়িত করেন না কেন তাঁর কপালে জোটেনি আরেকটা বিশ্বকাপ।

২০১৯ বিশ্বকাপটা ঘরে নিয়েছিলো ইংলিশরা কিন্তু নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী সময়ে দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়দের সাথে মনোমালিন্য হেলসকে আর সুযোগটি দেয়নি ওয়ানডে বিশ্বকাপের মর্যাদার ট্রফিটি ছুঁয়ে দেখবার। কিন্তু তিনি হতে পারতেন বিশ্বকাপ জয়ীদের একজন। ২০১৭ সালে দুই বছরের জন্যে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের আগে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও তাঁকে দলে নিতে সতীর্থরা ঠিক তেমন আর আস্থাটা ঠিক পাচ্ছিলেন না।

কিন্তু হেলসের ছোট্ট ক্যারিয়ারকে মোটামুটি সমৃদ্ধ বলাই যায়। তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে মোট ১১টি টেস্ট খেলেছেন। শতক না থাকলেও অর্ধশতক রয়েছে পাঁচটি। ২৭.২৮ গড়ে মোট রান করেছেন ৫৭৩টি। একবার ৯৪ রানে আউট হয়ে শতক হাঁকানোর আক্ষেপটা রয়েই যায় তাঁর মাঝে। সফলতার মানদণ্ডে ওয়ানডেতে সফল ব্যাটার বিবেচনা করাই যায় অ্যালেক্স হেলসকে। ২৪১৯ রান রয়েছে পঞ্চাশ ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচে। এই ফরম্যাটে তাঁর শতকের সংখ্যা ছয়টি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের হাতেখড়ি যেই ফরম্যাটে সেখানেও তাঁর ব্যক্তিগত সফলতার পাল্লাটা ভারীই বলা চলে। প্রায়  ১৩৬ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে রান করতেন সেই ফরম্যাটে। গড়টাও ত্রিশের ঘরের। তাছাড়া ১৬৪৪ রান করতে তিনি একটি শতকের বিপরীতে আটটি অর্ধশতকও করেছেন টি-টোয়েন্টিতে। কিন্তু এসব কিছুই বৃথা। সম্ভাবনা জাগিয়েও বিতর্কের বেড়াজালে তিনি নির্বাসিত হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে।

এরপর পারফরম করছিলেন, যখন যেখানে ‍সুযোগ পাচ্ছিলেন। কখনও পিএসএল, কখনও বিগ ব্যাশ। নেহায়েৎ ভাগ্যের ফেরে ডাক এসেছিল বিশ্বকাপে, টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় আসরে। ইংল্যান্ডের হয়ে সেখানে তিনি আবারও করলেন বাজিমাৎ। দ্বিতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল ইংল্যান্ড। হেলসের হেয়ালি এখানেও অব্যাহত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link