অবহেলার শিকলে অলরাউন্ড সম্ভাবনা

প্রথমত প্রশ্ন জাগে অলরাউন্ডারদের প্রতি দেশের ক্রিকেটের এমন অনীহা কেন? একজন সাকিব আল হাসান এত সহজে পেয়েছিলাম বলেই কী? সাকিবের পর আরেকজন অলরাউন্ডার কী বাংলাদেশ প্রস্তুত করতে পারবে আদৌ। নাকি একসময় মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনরাও শুধুই আক্ষেপের নাম হয়ে উঠবেন। অথচ বিশ্বসেরা হবার যোগ্যতা তাদেরও ছিল।

আধুনিক ক্রিকেটে দল গোছাতে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়ায় হয় অলরাউন্ডারদের উপর। দলে অলরাউন্ডার বেশি থাকলে একাদশ ব্যালেন্সড হয়, বাড়তি অপশন থাকে। সবমিলিয়ে একজন অলরাউন্ডার একাদশে থাকা মানে বাড়তি পাওয়া। ফলে বিশ্বের যেকোন দলেই অলরাউন্ডারদের উপর ভরসা বেশি। অথচ একেবারেই উলটো চিত্র বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

কথাটা শুনে আপনি হয়তো অবাক হতে পারেন। কেননা বাংলাদেশের হয়েই দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটেরই অন্যতম সফল অলরাউন্ডারে পরিণত হয়েছেন সাকিব। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকায়ও নাম আসে বাংলার ক্রিকেটের এই পোস্টার বয়ের।

তবে এর বাইরের চিত্র বেশ করুণ। এক সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটে আর কোন অলরাউন্ডারই বেশিদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারেননি। এই সময়ে যে দেশের ক্রিকেটে কোন অলরাউন্ডার আসেনি সেটা না। নিজেদের ব্যর্থতা কিংবা বিসিবির অবহেলায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেননি তাঁরা।

বিশেষ করে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের খোজ দেশের ক্রিকেটে অনেকদিন ধরেই। সেই জায়গাটা পূরণ করতে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। তবে তিনি বেশিদিন সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলতে পারেননি। তাঁর দিকে সীমাবদ্ধতা অবশ্যই ছিল। আবার এমন একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে যত্ন নেয়ার প্রয়োজনও খুব বেশি মনে করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বাংলাদেশ দলে তাঁর জায়গাটা মোটামুটি পাকা করে ফেলেছিলেন। যদিও বাংলাদেশ তাঁকে মূলত পেসার হিসেবেই খেলিয়েছে। তবুও যখন সুযোগ পেয়েছেন ব্যাট হাতেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন।

সবমিলিয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বড় স্বপ্নই দেখাচ্ছিলেন। ডেথ ওভারে তাঁর বোলিং ও শেষদিকে তাঁর মারকুটে ব্যাটিং সাদা বলের ক্রিকেটে যেকোন দলই কাজে লাগাতে চাইবে। তবে ইনজুরিতে পড়ে হঠাতই থমকে গেল সাইফউদ্দিনের ক্যারিয়ার। এই অলরাউন্ডার ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে আসা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে ইনজুরির এই সময়টায় ক্রিকেট বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এই লম্বা সময়ে সেভাবে সাইফউদ্দিনের খোজও নেয়নি বিসিবি। তাঁকে নিয়ে আলাদা করে কোন পরিকল্পনাও করতে দেখা যায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাকে। ফলে জাতীয় দল থেকে বেশ দূরেই ছিটকে গিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। অথচ সাদা বলের ক্রিকেটে তিনি খুব ভালো ভাবেই পরিকল্পনাতে ছিলেন।

শুধু পেস বোলিং অলরাউন্ডারই না। স্পিন বোলিং অলরাউন্ডারদের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে আরো করুণ চিত্র। শুভাগত হোম কিংবা নাঈম ইসলামের মত ক্রিকেটাররাও স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন সবুজ গালিচায়। তবে তাঁদের ক্ষেত্রেও কেমন যেন উদাসীন দেশেরব ক্রিকেট। দলে একজন সাকিব ছিলেন বলেই এমন অবহেলা কিনা সেই প্রশ্নও করা যায়।

অনেক সময় এই অলরাউন্ডাররা পারফর্ম করার পরেও বাদ পড়েছেন। দলের কম্বিনেশনের কারণে কাউকে বাদ দিতে হলেই আগে আসতো অলরাউন্ডারদের নাম। বাদ দেয়ার পর তাঁদের নিয়ে বিশেষ কোন যত্ন নিতেও কখনো দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য আরো অলরাউন্ডার খুঁজে পাওয়ার চেষ্টাটাই হয়তো ছিল না। ফলে শভাগত হোম কিংবা নাইম ইসলামরাও হারিয়ে গিয়েছেন।

এখনো যে বাংলাদেশের ক্রিকেট পেস বোলিং অলরাউন্ডার নিয়ে খুব বেশি চিন্তিন তা মনে হয় না। প্রথমত সাইফউদ্দিনের প্রতি এমন অবহেলা সত্যিই দু:খজনক। এছাড়া উঠতিদের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিও দারুণ সম্ভাবনাময়। ঘরোয়া ক্রিকেটে এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারও নিজেকে মেলে ধরেছেন। তবে তাঁকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করারও তেমন কোন পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের।

প্রথমত প্রশ্ন জাগে অলরাউন্ডারদের প্রতি দেশের ক্রিকেটের এমন অনীহা কেন? একজন সাকিব আল হাসান এত সহজে পেয়েছিলাম বলেই কী? সাকিবের পর আরেকজন অলরাউন্ডার কী বাংলাদেশ প্রস্তুত করতে পারবে আদৌ। নাকি একসময় মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনরাও শুধুই আক্ষেপের নাম হয়ে উঠবেন। অথচ বিশ্বসেরা হবার যোগ্যতা তাদেরও ছিল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...