ক্রিকেট রসিকের সুখস্মৃতি

ব্যাট আর মুখ - দুটোতেই আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ইয়ান বোথামের সঙ্গে আর ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভেঙ্কটেশ প্রসাদের সঙ্গে তাঁর ‘ঝামেলা’ আজও বিশ্ব ক্রিকেটে আলোচনার বিষয়। প্রথমটায় তিনি আক্রান্ত হয়ে প্রতিরোধ করেছিলেন আর শেষটায় হয়েছিল উল্টোটা। শেষ ঘটনাটার মূল্য চুকিয়েছিল পাকিস্তান, ফিফটি-ফিফটি ম্যাচ হেরে গিয়ে।

১৯৯২ বিশ্বকাপটা তাঁকে মনে করায় বারবার। তিনি বাঁ-হাতি এক পাকিস্তানি ওপেনার। বলটাও খারাপ করতেন না। জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, পাকিস্তানের লাহোরে। সাহসী ক্রিকেটার হিসেবে আমির সোহেলের বরাবরই নাম-ডাক ছিল।

আরো পড়ুন

গোটা নব্বইয়ের দশকটাই সাঈদ আনোয়ারের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে যার ব্যাটিং প্রবল ভরসা দিয়ে গিয়েছে পাকিস্তানকে। যা গত দুটি দশক ধরে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত পাকিস্তান এখনো খুঁজে পায়নি। আজো একজন আমির সোহেলকে খুঁজে ফিরছে পাকিস্তান। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল অবধি বিস্তৃত ছিল তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার।

৪৭ টি টেস্ট খেলেছেন ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল অবধি। একটি ডাবল সেঞ্চুরি, পাঁচটি সেঞ্চুরি আর ১৩ টি হাফ সেঞ্চুরি ছিল তার। ২৮২৩ টেস্ট রান আছে তাঁর দখলে। টেস্টে সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ২০৫ রানের। ‘৪/৪৪’ – তাঁর সেরা বোলিং ফিগার। সব মিলিয়ে ২৫টি টেস্ট ঊইকেটও পেয়েছিলেন তিনি।

অভিষেক সিরিজে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে তিনি সর্বোচ্চ ২০৫ করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে লাহোরে তৃতীয় টেস্টে তাঁর ম্যাচ বাঁচানো ১০৫ ও সেলিম মালিকের সঙ্গে জুটিতে ১৯৬ আজও রূপকথা হয়ে টিকে আছে। ১৯৯৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে করাচিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তার ম্যাচ জেতানো ১৬০ যেন আজও যে কোন ক্রিকেট রসিকের সুখস্মৃতি।

আমির সোহেল ওয়ানডে খেলেছেন ১৫৬ টি। সেই যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে, ইতি হয় ২০০০ সালে। এখানে তিনি পাঁচটি সেঞ্চুরি, ৩১ টি হাফ সেঞ্চুরি করেন, মোট রান ৪৭৮০। ওয়ানডেতে তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংসটি ১৩৪ রানের। বোলিংয়ে পান ৮৫ টি উইকেট। ওয়ানডেতে তাঁর বোলিংটা মোটামুটি কার্যকর ছিল বলা যায়।

পাকিস্তান দলের ১৯৯২ বিশ্বকাপ জেতার পেছনে তাঁর অনস্বীকার্য অবদান ছিল। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ১১৪, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭৬, ভারতের বিরুদ্ধে ৬২ ছিল তার উল্লেখযোগ্য ইনিংস। ১৯৯৬ বিশ্বকাপেও ভারতের বিরুদ্ধে ৫৫ রান করেছিলেন তিনি। যদিও, আজকাল তাঁর নাম শোনা যায় সামান্যই।

ব্যাট আর মুখ – দুটোতেই আক্রমণাত্মক ছিলেন তিনি। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ইয়ান বোথামের সঙ্গে আর ১৯৯৬ বিশ্বকাপে ভেঙ্কটেশ প্রসাদের সঙ্গে তাঁর ‘ঝামেলা’ আজও বিশ্ব ক্রিকেটে আলোচনার বিষয়। প্রথমটায় তিনি আক্রান্ত হয়ে প্রতিরোধ করেছিলেন আর শেষটায় হয়েছিল উল্টোটা। শেষ ঘটনাটার মূল্য চুকিয়েছিল পাকিস্তান, ফিফটি-ফিফটি ম্যাচ হেরে গিয়ে।

১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ তিনি পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন। ক্রিকেটের মহামারী ম্যাচ ফিক্সিংয়ের ওই সময়টায় হুইসেল ব্লোয়ারের কাজ করেছিলেন তিনি, মূল্য চুকিয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে অধিনায়কত্ব খুইয়ে আর দুই বছর পরে ক্যারিয়ার শেষ করে।

১৯৯৯ বিশ্বকাপের দল থেকেও শেষ মুহূর্তে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাকে। ২০০৪ সালে হয়েছিলেন নির্বাচক ও ২০১৪ সালে হয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচক। তবে, দুটো দায়িত্বই খুইয়েছিলেন খুব দ্রুত। ধারাভাষ্যকারের ভূমিকাতেও একটা সময় তাকে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু সব ছাপিয়ে, পাক ক্রিকেটে এক ঊজ্জ্বল প্রতিবাদী চরিত্রের শিরোপা নিয়েই মনে থেকে গিয়েছেন তিনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...