দুই মহীরুহের মরু-ম্যাজিক

দিনটা ছিল ১৯৯৪ সালের ২০ এপ্রিল। ওয়ানডে ক্রিকেট তখনও আজকের মত আধুনিক হয়নি। ২৫০-এর ওপর রান বোর্ডে থাকলেই সেটাকে জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা হত। ৩০০ কোনোমতে করলেই নিশ্চিত জয় ধরা হত। ফলে, তখনকার সময়ে ২৬৩ রানের জুটি অবশ্যই বিশেষ একটা ব্যাপার। সেই জুটির দুই কুশীলব সাবেক দুই পাকিস্তানি কিংবদন্তি আমির সোহেল ও ইনজামাম উল হক।

নব্বইয়ের দশকে শারজাহ বেশ আলোচিত এক ক্রিকেট ভেন্যু ছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্রিকেটে কোনো বড় শক্তি না হলেও, শারজাহ বরাবরই ‍উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের ক্ষেত্রে বড় এক ক্রিকেট মঞ্চ। বিরাট বিরাট সব ম্যাচ, অনন্য সব ইতিহাসের সাক্ষী এই ম্যাচ।

বিশেষ করে উপমহাদেশীয় দলগুলো যেমন ভারত, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার জন্য এটা খুবই নস্টালজিক এক মঞ্চ। তেমনই ঐতিহাসিক এক ঘটনার স্মৃতিচারণা করবো আজ।

দিনটা ছিল ১৯৯৪ সালের ২০ এপ্রিল। ওয়ানডে ক্রিকেট তখনও আজকের মত আধুনিক হয়নি। ২৫০-এর ওপর রান বোর্ডে থাকলেই সেটাকে জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা হত। ৩০০ কোনোমতে করলেই নিশ্চিত জয় ধরা হত।

ফলে, তখনকার সময়ে ২৬৩ রানের জুটি অবশ্যই বিশেষ একটা ব্যাপার। সেই জুটির দুই কুশীলব সাবেক দুই পাকিস্তানি কিংবদন্তি আমির সোহেল ও ইনজামাম উল হক। ভেন্যু অবশ্যই শারজাহ। প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। তখন অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ খুব আকর্ষণীয় একটা টুর্নামেন্ট ছিল। সেখানে এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটের আগুনে পুড়েছিল ব্ল্যাক ক্যাপ বোলাররা। সেই সময় এটা যেকোনো উইকেটে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল।

তাঁরা ভাঙেন ১০ বছরের পুরনো রেকর্ড। ১৯৮৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ডিন জোন্স ও অ্যালান বোর্ডার মিলে ২২৪ রানের জুটি গড়েন। তবে, শারজাহতে এসে তাঁদের রেকর্ড ভেঙে যায়।

ম্যাচের একদম শুরু থেকে শুরু করা যাক।

শারজাহতে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক গেভিন লারসেন। পাকিস্তানের হয়ে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নামেন সাইদ আনোয়ার ও আমির সোহেল। ছয় চার ও এক ছক্কায় ২৩ বলে ৩৭ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলে আউট হন সাইদ। দ্বিতীয় উইকেটে আমিরের সাথে যোগ দেন ইনজামাম উল হক। শারজাহর সেই ঐতিহাসিক জুটির শুরুটা এখানেই।

দুই প্রান্তে ব্যাট হাতে দু’জনেই সমান তালে রান করতে থাকেন। কিউই পেসারদের এক প্রকার নাজেহাল করে ফেলেন এই দুই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। দুইজনই চারের বন্যায় ভাসিয়েছিলেন সেদিনের শারজাহ মাঠে। দুই প্রান্তে দূর্দান্ত ব্যাটিং করে দুইজনই তুলে নিয়েছিলেন অনবদ্য সেঞ্চুরি।

১৪৬ বলে ১৩ চারের সাহায্যে ১৩৪ রান করেন আমির সোহেল অপরদিকে, ১২৯ বলে ১৫ চারের সাহায্যে ১৩৭ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ইনজামাম উল হক। ১৩৪ রান করে দলীয় ৩২০ রানে আমির সোহেল আউট হবার আগে দু’জনে মিলে গড়েন ২৬৩ রানের রেকর্ড গড়া জুটি!

২৬৩ রানের এই জুটি তখনকার সময়ে যে কোনো উইকেটেই সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল। বর্তমান সময়ে এই জুটিটি আছে ১২তম অবস্থানে। সবার উপরে আছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলসের ৩৭২ রানের জুটি!

আমির ও ইনজামামের রেকর্ড গড়া জুটিতে সেদিন শারজাহতে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৩২৮ রানের পাহাড়সম স্কোর দাঁড় করায় পাকিস্তান। তখনকার সময়ে ২৫০-৬০ রানের টার্গেট মানেই যেন বিশাল ব্যাপার! সেখানে ৩২৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা যেন কিউইদের সামনে এভারেস্টসম। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ২৬৬ রান পর্যন্ত করতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড।

অ্যাডাম প্যারোরে সর্বোচ্চ ৮২ রান করেন। শেন থমসন করেন ৬২ রান। ওয়াসিম আকরাম ৫০ রান দিয়ে দু’টি ও সেলিম মালিক ৫৫ রান দিয়ে দু’টি উইকেট নেন।

এখানে অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ নিয়েও একটু বলা দরকার। আরব আমিরাতের সাবেক ক্রিকেটার আব্দুর রহমান বুখাথির আশির দশকের মাঝামাঝিতে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন। এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের মূল কিছু দল নিয়ে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়, যেহেতু আয়োজক আরব আমিরাতের সে হিসেবে আরব আমিরাতও খেলার সুযোগ পায়।

মোট সাতটি দল এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভার‍ত, পাকিস্তান, আরব আমিরাত। এছাড়া দ্বিতীয় আসরে বাংলাদেশ দল একবারের জন্য খেলার সুযোগ পায়। এই টুর্নামেন্টের নাম দেওয়া হয় অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ। এবং তিন আসরেই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।

আর চ্যাম্পিয়ন বলেই এই আসরগুলোতে পাকিস্তানের মনে রাখার মত স্মৃতি বেশি। ইনজামাম-আমিরের ঐতিহাসিক জুটিতো আছেই, এই আসরেই ফাইনালে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...