গোড়াপত্তনের জুটি কাব্য

ক্রিকেট এমন একটি খেলা যেখানে জুটি গড়াটা খুবই জুটি। এই জুটির দাপটে ভর করেই এগিয়ে যায় বাইশ গজে একেকটা দলের ভাগ্য। আর ইনিংসের শুরুর জুটিই কিছুটা হলেও ইঙ্গিত দেয় ইনিংসটা কি রকম হতে যাচ্ছে।

ক্রিকেট এমন একটি খেলা যেখানে জুটি গড়াটা খুবই জুটি। এই জুটির দাপটে ভর করেই এগিয়ে যায় বাইশ গজে একেকটা দলের ভাগ্য। আর ইনিংসের শুরুর জুটিই কিছুটা হলেও ইঙ্গিত দেয় ইনিংসটা কি রকম হতে যাচ্ছে।

একটা মোক্ষম জুটিই স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারে বড় অংকের রান। আর স্কোর বোর্ডে রান তোলাটা বেশ ভালো ভাবেই জানতে হয় উদ্বোধনী জুটিতে। ক্রিকেট বিশ্বে এমন অনেক কালজয়ী উদ্বোধনী জুটি দেখা গেছে। তাঁরা দিনের পর দিন ইনিংসের দারুণ একটা সূচনা এনে দিয়েছেন। আমাদের এবারের আয়োজন কালজয়ী সেসব জুটি নিয়ে।

  •  আমির সোহেল এবং সাঈদ আনোয়ার (পাকিস্থান)

এখন পর্যন্ত পাকিস্থানের সেরা ওপেনিং জুটি বলা হয় তাঁদের। তারা পাকিস্থানকে এনে দিতেন উড়ন্ত সূচনা। আর তখন বেশিরভাগ সময় পাকিস্থান দলের রান নির্ভর করতো এই ওপেনিং জুটির উপর। তারা দুইজন উইকেটে টিকে থাকলে পাকিস্থান দল পেয়ে যেত বড় সংগ্রহ।

আমির সোহেল এবং সাঈদ আনোয়ার জুটি প্রায় ১০ বছর একসাথে খেলেছে। এই সময়ে তারা একসাথে ওপেনিং করেছে ৭৩ ইনিংসে। এই ৭৩ ইনিংসে এই জুটির সংগ্রহ ২৮৫৬ রান। তাদের জুটিতে সর্ব্বোচ্চ সংগ্রহ ১৭৩ রান। তিনটি শতরানের জুটি এবং ২০ টি অর্ধশত রানের জুটি গড়েছেন এই তাঁরা।

  • হার্শেল গিবস এবং গ্রায়েম স্মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের অন্যতম সেরা জুটি গিবস-স্মিথ জুটি। ডানহাতি-বামহাতি কম্বিনেশনে এই জুটি বিশ্বের অন্যতম এক সেরা জুটি। দুইজনই ক্রিকেট বিশ্বের বড় তারকা। ওপেনার হিসেবে তারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দিয়েছে দূর্দান্ত সূচনা। এই জুটির দুইজনই ছিলেন পাওয়ার হিটার ব্যাটসম্যান।

এই জুটি ৭ বছরে ৭৩ বার ইনিংসের গোড়াপত্তন করেছে। তারা ৭৩ ইনিংসে রান সংগ্রহ করেছেন ৩০০৭ রান। এই জুটিতে সর্ব্বোচ্চ সংগ্রহ ১৭৪ রান। তারা দুইজনে একসাথে ৮ টি শতরান এবং ১৩ টি অর্ধশত রানের জুটি গড়েছেন।

  • তিলকারত্নে দিলশান এবং উপুল থারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)

সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলংকার প্রায় সব সাফল্যে অবদান রয়েছে এই জুটির। দিলশান-থারাঙ্গা জুটিতে দিলশান ছিলেন পাওয়ার হিটার এবং থারাঙ্গা ধীরে ধীরে ইনিংস গড়ে তুলতেন।

দিলশান-থারাঙ্গা জুটি ৪ বছরে ৬৭ বার ইনিংসের গোড়াপত্তন করে। ৬৭ ইনিংসে এই জুটির সংগ্রহ ৩০৫২ রান। এই দু’জন ৯ টি শতরান এবং ১৩ টি অর্ধশত রানের জুটি গড়েছিলেন। দিলশান-থারাঙ্গা জুটির সর্ব্বোচ্চ সংগ্রহ ২৮২ রান।

  • মারভান আতাপাত্তু এবং সনাৎ জয়াসুরিয়া (শ্রীলঙ্কা)

এখন পর্যন্ত শ্রীলংকার সেরা ওপেনিং জুটি এটি। আতাপাত্তু-জয়াসুরিয়া জুটিতে নিজেদের মধ্যে দূর্দান্ত বোঝাপড়া ছিলো। এই জুটিতে জয়াসুরিয়া ছিলেন পাওয়ার হিটার ব্যাটসম্যান এবং আতাপাত্তু ধীরে সুস্থে ইনিংস গড়ে তুলতেন।

এই জুটি শ্রীলংকার হয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করেছে প্রায় ১০ বছর। আতাপাত্তু-জয়াসুরিয়া জুটি ৭৩ বার ইনিংসের গোড়াপত্তন করেছে। তাদের জুটিতে মোট সংগ্রহ ছিলো ৩৩৮২ রান। তাদের সর্ব্বোচ্চ সংগ্রহ ছিলো ২৩৭ রান। আতাপাত্তু-জয়াসুরিয়া জুটি আটটি শতরান এবং ১৯ টি অর্ধশত রানের জুটি গড়েছিলো।

  • ডেভিড বুন এবং জিওফ মার্শ (অস্ট্রেলয়া)

 

এই জুটি অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা জুটি। মার্শ ওপেনিং এ খেলা শুরু করার পর অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ওপেনারে পরিণত হন। তার ওপেনিং এ সঙ্গী ছিলেন ডেভিড বুন। এই জুটি অস্ট্রেলয়াকে এক দূর্দান্ত শুরু এনে দিতেন।

বুন-মার্শ জুটি ৬ বছরে ৮৮ বার ইনিংসের গোড়াপত্তন করেছিলেন। তাঁদের জুটিতে মোট সংগ্রহ ৩৫২৩ রান। বুন-মার্শ জুটিতে সর্ব্বোচ্চ সংগ্রহ ২১২ রান। এই দু’জন মিলে সাতটি শতরান এবং ২৫ টি অর্ধশত রানের জুটি গড়েছিলো।

  • অ্যাডাম গ্রিলক্রিস্ট এবং মার্ক ওয়াহ (অস্ট্রেলিয়া)

এই জুটি অস্ট্রেলিয়াকে বেশ কিছুদিন ভালোই সূচনা এনে দিয়েছিলো। ম্যাথু হেইডেন দলে আসার আগ পর্যন্ত এই জুটি ছিলো দূর্দান্ত।

গ্রিলক্রিস্ট-ওয়াহ জুটি চার বছরে ৯৩ ইনিংসের গোড়াপত্তন করেছেন। তাদের জুটিতে মোট সংগ্রহ ৩৮৫৩ রান। এই জুটির সর্ব্বোচ্চ সংগ্রহ ২০৬ রান। গ্রিলক্রিস্ট-ওয়াহ মিলে গড়েছিলেন আটটি শতরান এবং ২৫ টি অর্ধশত রানের জুটি।

  • বীরেন্দ্র শেবাগ এবং শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)

ভারতের অন্যতম সেরা জুটি শেবাগ-টেন্ডুলকার জুটি। এখানে শেবাগ ছিলেন পাওয়ার হিটার ব্যাটসম্যান। আর টেন্ডুলকার তার দূর্দান্ত সব স্ট্রোক প্লে দিয়ে বোলারদের তুলোধনা করে গেছেন।

এই জুটি ১২ বছরে ৯৩ বার ইনিংসের শুরু করেছেন। শেবাগ-টেন্ডুলকার জুটির মোট সংগ্রহ ৩৯১৯ রান। তাদের জুটিতে সর্ব্বোচ্চ সংগ্রহ ১৮২ রান। তারা ১২ টি শতরান এবং ১৮ টি অর্ধশত রানের জুটির অংশীদার।

  • গর্ডন গ্রিনিজ এবং ডেসম্মড হেইন্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

তারা দুইজনই ছিলেন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণালী সময়ে তাঁদের ব্যাটিং ছিলো উপভোগ্য। গ্রিনিজ-হায়েন্স জুটির উপরেই দাঁড়িয়ে যেত ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের ভিত।

এই জুটি প্রায় ১২ বছরে ১০২ বার ইনিংসের শুরুতে নেমেছিলো। গ্রিনিজ-হেইন্স জুটির মোট সংগ্রহ ছিলো ৫১৫০। এই জুটির সর্ব্বোচ্চ সংগ্রহ ছিলো ১৯২ রান। গ্রিনিজ এবং হেইন্স মোট ১৬ টি শতরান এবং ২৪ টি অর্ধশত রানের জুটি গড়েছিলেন।

  • অ্যাডাম গ্রিলক্রিস্ট এবং ম্যাথু হেইডেন (অস্ট্রেলিয়া)

এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলয়ার ইতিহাসের সেরা ওপেনিং জুটি। তাঁদের উপর ভিত্তি করেই অস্ট্রেলয়া পেয়েছে অসংখ্য সাফল্য। এই জুটিতে ছিলো দূর্দান্ত চোখ ধাঁধানো শট।

গ্রিলক্রিস্ট-হেইডেন জুটি ১১৪ বার ইনিংসের গোড়াপত্তন করেন। ওপেনিং জুটিতে তাদের মোট সংগ্রহ ৫৩৭২ রান। তারা মোট ১৬ টি শতরান এবং ২৯ টি অর্ধশতরানের জুটির অংশীদার। তাঁদের জুটিতে সর্ব্বোচ্চ সংগ্রহ ১৭২ রান।

  • শচীন টেন্ডুলকার এবং সৌরভ গাঙ্গুলি (ভারত)

বিশ্বের সেরা ওপেনিং জুটি হলো শচীন-সৌরভ জুটি। এই জুটি যেকোনো বোলিং আক্রমণকে গুড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। ডানহাতি বামহাতি কম্বিনেশন এই জুটিকে গড়ে তুলেছিলো আরো মারাত্মক।

শচীন-সৌরভ জুটি মোট ১৩৬ বার ইনিংসের গোড়াপত্তন করেছে। ইনিংস ওপেন করতে নেঁমে তাদের সংগ্রহ ৬৬০৯ রান। এই জুটির সর্ব্বোচ্চ সংগ্রহ ২৫৮ রান। শচীন-সৌরভ মিলে মোট ২১ টি শতরান এবং ২৩ টি অর্ধশতরানের জুটির অংশীদার।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...