বিশ্বকাপ অভিষেকেই নামটা খোদাই করে রেখেছিলেন- রাচিন রবীন্দ্র। যার নামে মিশে রয়েছে রাহুল, শচীন আর ভারতীয় রক্ত। ভারতীয় বংশোদ্ভূত সেই রাচিন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ১২৩ রান ও বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা।
কিউইদের হয়ে রাচিনের জয়গান সেখানেই থেমে থাকেনি। ২৩ বছর বয়সী এ তরুণ ব্যাটার আবারো নিজেকে রাঙালেন শতকে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেললেন ৮৯ বলে ১১৬ রানের ইনিংস।
ধর্মশালায় রূদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতেছে অস্ট্রেলিয়াই। তবে অজিদের দেওয়া ৩৮৯ রানের লক্ষ্য টপকানোর পথেই ছিল কিউইরা। আর সেই পথযাত্রায় কিউইদের নেতৃত্ব দিয়েছেন রাচিন রবীন্দ্র। যদিও দিনশেষে রাচিনের সেঞ্চুরি, ড্যারিল মিশেল ও জিমি নিশামের হাফসেঞ্চুরি বৃথাই গিয়েছে। জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও ৫ রানের হতাশায় পুড়তে হয়েছে কিউদের।
তবে এই এক ম্যাচ উঠেছে এসেছে একটি রেকর্ডের শীর্ষে। ধর্মশালায় অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে দুই দল মিলে স্কোরবোর্ডে তুলেছে ৭৭১ রান, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ। ভেঙে গেছে এবারের আসরেই দিল্লিতে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ৭৫৪ রানের রেকর্ড।
৩৮৯ রানের লক্ষ্যটা শুরুতে নাগালের বাইরেই ছিল নিউজিল্যান্ডের জন্য। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এত বেশি রান চেজ জেতার রেকর্ড নেই। এমন এক ইতিহাস পাল্টে দিতেই মাঠে নেমেছিল কিউই ব্যাটাররা। তবে সেই লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে রান তুললেন এড়ানো যায়নি উইকেট। প্রথম পাওয়ার প্লে-তে ৭০ রানের বেশি তুলেছিল ঠিকই, তবে সাজঘরে সেই সাথে ফিরেছিলেন ২ ব্যাটার।
এমন পরিস্থিতিতে জয়ের দিকে চোখ রেখেছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। তিন নম্বরে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেছেন। স্টার্ক, হ্যাজলউডদের উপর চড়াও হয়েছেন। তবে আক্রমণাত্বক ব্যাটিং , দলের রানের গতি সচল- সবটাই করেছেন নিজের উইকেট আগলে রেখে। প্রথমে ড্যারিল মিশেল, এরপর টম ল্যাথাম, গ্লেন ফিলিপস, সবার সাথেই কার্যকরী জুটিতে এগিয়ে চলেছিলেন লক্ষ্যের পথেই। সে যাত্রায় ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূরণের পর এগিয়ে যান শতকের দিকেও।
বৈশ্বিক মঞ্চের চাপটা শেষ পর্যন্ত রাচিনকে তেমন স্পর্শ করেনি সাবলীল ব্যাটিংয়েই শতক ছুঁয়েছেন। তবে সেঞ্চুরি পূরণের পর ইনিংসটাকে তেমন বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। প্যাট কামিন্সের শিকার হয়ে ফেরেন ১১৬ রানে। যে ইনিংস খেলার পথে ছিল ৯ চার ও ৫ টি ছক্কার মার।
রাচিন ফিরে গেলেও ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়নি নিউজিল্যান্ড। এরপর জিমি নিশাল দলের হাল ধরেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত নতুন কোনো ইতিহাস হয়নি। লক্ষ্য থেকে ৬ রান দূরে শেষ হয় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। শ্বাসরূদ্ধকর ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেও তাই হারের তিক্ত স্মৃতি জমা হলো রাচিনের ক্যারিয়ারে।
তবে এই তো শুরু। শুরুতেই নিজেকে রাঙাচ্ছেন। বিশ্বকাপের ৬ ম্যাচে ২ টাতে সেঞ্চুরি করলেন। এই সব সংখ্যাগুলো নিশ্চয়ই ঠুনকো নয়। বরং বড় মঞ্চে যেভাবে নিজেকে মেলে ধরছেন, তা নিয়ে নিউজিল্যান্ড একটা স্বস্তি পেতেই পারে। কিউইদের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ ঠিক পথেই আছে।