তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর

শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক অবস্থা – কোনোটাই ঠিক সুবিধার না এখন। যদিও, দেশটির ক্রিকেট আছে এর থেকে অনেক দূরে। এই যেমন বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এসেছে শ্রীলঙ্কা দল। তাঁদের সাথে সহকারী কোচ হয়ে এসেছেন নাভিদ নেওয়াজ।

নামটা কি একটু পরিচিত লাগছে না? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এই ভদ্রলোক বাংলাদেশের ক্রিকেটের বেশ পরিচিত নাম। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনন্য এক সাফল্য এনে দিয়েছিলেন তিনি। চাইলেও তাঁর নামটা বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে মুছে ফেলা যাবে না। তবে এবার নাভিদ নেওয়াজের ভিন্ন চরিত্র, ভিন্ন দায়িত্ব।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে মাঠে নামার আগে খুব একটা সুখকর অবস্থানে নেই বাংলাদেশ দল। ইনজুরির কারণে ইতোমধ্যেই ছিটকে গিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও  তাসকিন আহমেদ। এছাড়া করোনা পজেটিভ থাকায় প্রথম টেস্টে থাকছেন না সাকিব আল হাসানও। ফলে একাদশ সাজাতে বেশ হিমশিমই খেতে হবে বাংলাদেশকে।

ওদিকে আরেক পেসার শরিফুল ইসলামও চট্টগ্রাম টেস্টে নিশ্চিত না। তবে তিনি যদি ফিট থাকেন, তাহলে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের বড় ভরসা হবেন শরিফুল ইসলাম। এছাড়া ব্যাট হাতেও টেস্ট ক্রিকেটে আরেক উঠতি তারকা মাহমুদুল হাসান জয়। চট্টগ্রাম টেস্টে তামিমের সাথে ওপেনিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন তিনিই।

ফলে এই দুই ক্রিকেটারদের নিয়ে শ্রীলঙ্কান শিবিরে কাটাছেড়া হওয়াটাই স্বাভাবিক। নিজেদের দিনে এই দুই তরুণ কতটা ভয়ংকর হতে পারেন তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। আর দুইজনকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি জানাশোনা আছে বোধহয় নাভিদ নেওয়াজের। যিনি এখন শ্রীলঙ্কার সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করছেন।

শরিফুল ও জয়রা যে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতলো সেই দলের প্রধান কোচ ছিলেন নাভিদ নেওয়াজ। নিজের হাতেই এই দলটাকে গড়ে তুলেছিলেন এই কোচ। সেই দল থেকে ইতোমধ্যেই শরিফুল, জয়, শামিম হোসেন পাটোয়ারিরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিয়ে ফেলেছে। এরমধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত দুই মুখ জয় ও শরিফুল।

ফলে নাভিদ নেওয়াজও খুব ভালো করেই জানেন তাঁর এই দুই শিষ্য কতটা ভয়ংকর হতে পারে। তাই শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের নিশ্চিয়ই আলাদা ভাবে সচেতন করে দিচ্ছেন এই দুইজনের ব্যাপারে। এছাড়া লম্বা সময় বাংলাদেশে কাজ করায় এখানকার সবকিছুই খুব ভালো করেই জানেন তিনি। ফলে নাভিদ নেওয়াজের পরামর্শ শ্রীলঙ্কাকে খানিকটা সুবিধা তো দিবেই।

নিজের এই দুই শিষ্যকে নিয়ে তাঁর আশার কথাও গণমাধ্যমকে বলেছেন এই কোচ। শরিফুল ও জয়কে নিয়ে নাভিদ নেওয়াজ বলেন, ‘আশা করি তারা একদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিংবদন্তি হবে। তারা অবশ্যই আমাকে দেখে খুশি হবে, বেশ কিছুদিন দেখা হয় না। সব মিলিয়ে সেটি হয়তো ইতিবাচকই হবে। এছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি সামলানোর মতো স্কিল তাঁদের আছে। আমি থাকা না-থাকায় কিছু যায়-আসে না। তাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্য পেয়েছে। ভবিষ্যতেও বিভিন্ন দেশে গিয়ে মানিয়ে নিতে হবে। কোচ হিসেবে আমাদের কাজ খেলোয়াড়দের প্রস্তুত করা, যাতে তাঁরা যেকোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে পারফর্ম করতে পারে।’

ওদিকে গত মাসেই দুই বছরের জন্য শ্রীলঙ্কার সহকারী কোচের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন নাভিদ নেওয়াজ। এবার শ্রীলঙ্কার তরুণ দলটাকেও গুছিয়ে ফেলতে চান এই কোচ। তাঁর হাত ধরে হয়তো শ্রীলঙ্কাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্য পেতে শুরু করবে।

এর আগে অবশ্য বাংলাদেশে প্রায় চার বছর বয়সভিত্তিক দলের হয়ে কাজ করেছেন নাভিদ নেওয়াজ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে বিশ্বকাপ জেতানোই তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। এবার তাঁর শিষ্য শরিফুল, জয়রাই তাঁর প্রতিপক্ষ। দেখা অপেক্ষা মাঠের লড়াইয়ে জয়টা কাদের পক্ষে আসে।

শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট আবারও নাভিদ নেওয়াজদের হাত ধরে ফিরুক তাঁর সুদিনে। তবে, প্রত্যাশা থাকবে সেই সুদিনের শুরুটা যেন বাংলাদেশের বিপক্ষে না হয়!

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link