ইতিহাদে কখনো শেষ হাসি হাসতে পারেনি রিয়াল মাদ্রিদ, এমন অতীত পরিসংখ্যান মাথায় রেখেই ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল। যদিও পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জয়ের আনন্দে ভেসেছে তাঁরা।
১২০ মিনিটের স্নায়ু ক্ষয়ী লড়াই শেষে হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে। ম্যাচসেরা ফেদেরিকো ভালভার্দে কিংবা গোলদাতা রদ্রিগোকে ছাপিয়ে এই জয়ের নায়ক অবশ্য ইউক্রেনের গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিন।
টাইব্রেকারে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ শট ঠেকিয়েছেন তিনি, মাঠের খেলায় ম্যানসিটির অজস্র গোলের সুযোগ নষ্ট করে দিয়েছেন। পুরোটা সময় জুড়ে আক্রমণ করেও সিটিজেনরা সফরকারীদের ছাড়িয়ে যেতে পারেনি সেটার কৃতিত্ব তাঁরই।
অথচ এক বছর আগেও লুনিনকে রিয়াল ভক্তরাও ঠিকঠাক চিনতেন না। চিনবেন-ই বা কিভাবে; থিবো কোর্তায়ার অবিশ্বাস্য গোলকিপিংয়ের কারণে স্কোয়াডের দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষকের দিকে তাকানোর সময় ছিল না কারো কাছেই।
এসবে অবশ্য এই তরুণের কিছু আসে যায়নি। গেমটাইম নিয়ে অভিযোগ না করে বরং নিজেকে শাণিত করেছেন, অপেক্ষা করেছেন সময়ের জন্য।
২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেয়ার পর খুব বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। ধারে একাধিক ক্লাবে গেলেও চিত্রটা একইরকম ছিল। তবে রিয়াল ওভেইদা নামের একটি ক্লাবে যাওয়ার পর ভাগ্যে বদল আসে, নিয়মিত মাঠে নামার সুযোগ দেয়া হয় তাঁকে।
তাই তো অনুশীলনেও বাড়তি পরিশ্রমী হতে শুরু করেন এই গোলরক্ষক। এমনকি করোনার সময় লিভিং রুমেই অনুশীলনের কাজ চালিয়ে যান তিনি। ওভেইদার তৎকালীন কোচ সার্জিও সেগুরা বলেন, ‘সে ছোট একটা বাসায় থাকতো, ৪৫ বর্গমিটারের মত। করোনার সময় রুমের আসবাব বাইরে রেখে ম্যাট্রেস বিছিয়ে ওখানেই অনুশীলন করতে শুরু করে।’
গোল ঠেকানোর কাজটা নি:সন্দেহে সবচেয়ে কঠিন, গোলরক্ষকরা তাই মাঝে মাঝে ভুল করে ফেলেন। এই তারকাও সেটার ব্যতিক্রম নয়, তবে ব্যতিক্রমী তাঁর মানসিকতা। ভুল হয়ে গেলেও আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরতে দেন না তিনি।
এ নিয়ে সেগুরা বলেন, ‘লুনিন তখন একেবারে নতুন, এক ম্যাচে ডিফেন্ডারের সঙ্গে তাঁর ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটা গোল হয়ে যায়। কিন্তু তাঁকে দেখে মনে হয়েছিল কিছুই হয়নি। আসলে সে চাপ খুব ভালভাবে সামলাতে পারে৷’
আন্দ্রে লুনিন সবসময়ই স্বপ্ন দেখেছেন ইকার ক্যাসিয়াস, কোর্তোয়াদের উত্তরসূরী হওয়ার; স্বপ্ন দেখেছেন অল হোয়াইটদের দূর্গ প্রহরী হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, তাঁর ওপর ভর করেই মৌসুমের পুরোটা সময় ছুটে চলছে রয়্যাল মাদ্রিদ।
লা লিগায় টেবিলের শীর্ষে অবস্থান কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে জায়গা পাওয়া – এসবের জন্য তাঁকে সর্বোচ্চ কৃতিত্ব না দিলে অন্যায় হবে।