প্রথম ম্যাচে ফিরেছিলেন শূন্য রানে। এরপরই তার জায়গা হয় ডাগ আউটে। সুযোগের অপেক্ষা ছিলেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। সেই সুযোগটা পেয়ে গেলেন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে। দু’হাত ভরে লুফে নিয়েছেন প্রাপ্ত সুযোগ। তবে তাতে করে যেন দলেরই কপাল পুড়েছে।
আগের ম্যাচ শেষে কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কণ্ঠে ঝড়েছিল আফসোসের সুর। তিনি মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে খেলাতে চান। তবে টিম কম্বিনেশনের জন্য খেলাতে পারছিলেন না। কোচ সালাউদ্দিনের তার প্রতি আস্থা ছিল। সে আস্থা অবশ্য অঙ্কন নিজেই তৈরি করেছিলেন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের ওয়ানডে ফরম্যাটে দুর্দান্ত সময় পার করেছিলেন তিনি। সেন্ট্রাল জোনের হয়ে টানা তিনটি অর্ধ-শতকের দেখা পেয়েছিলেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার। একটি ম্যাচে তাকে থামতে হয়েছিল ৯৭ রানে।
ধারাবাহিকভাবেই ব্যাটে রান ছিল তার। কিন্তু বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচে খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল অঙ্কনকে। সেটাকেই অবশ্য মুখ্য বিষয় বিবেচনা করা হয়নি তাকে একাদশ থেকে বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে। টিম কম্বিনেশনের জন্যই অঙ্কন দুই ম্যাচে একাদশের বাইরে ছিলেন। তবে রংপুরের জন্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে তার উপরই ভরসা রেখেছিলেন কোচ সালাউদ্দিন।
একাদশে তিনি সুযোগটা পান ইনফর্ম ব্যাটার ইমরুল কায়েসের পরিবর্তে। অপেক্ষার পর পাওয়া সুযোগটা হাতছাড়া করেননি তিনি। দারুণ একটি ফিফটি তুলে নিয়েছেন বটে। তবে বিপত্তি বেঁধেছে অন্যক্ষেত্রে। বেশ ধীর লয়ে নিজের অর্ধ-শতক পূরণ করেছেন অঙ্কন। শুরুটা রয়েসয়েই করতে হয়েছে তাকে। কেননা প্রথম ওভারেই অধিনায়ক লিটন দাস ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে।
কিছু সময় অতিক্রান্ত হতে না হতেই মোহাম্মদ রিজওয়ানও হেঁটেছেন সাজ ঘরের দিকে। সেখানেই বরং চাপটা এসে পড়ে অঙ্কনের কাঁধে। সেই চাপটা সামলে নিতে একটু ধীর হতেই হত তাকে। সে কাজটাই করেছেন তিনি। তিনি দলকে জয়ের পথে পরিচালিত করার ভিত গড়ায় মনোনিবেশ করেন। সঙ্গী হিসেবে পান তাওহীদ হৃদয়কে।
নিজের ইনিংসের ৪২ তম বলে গিয়ে অর্ধ-শতক পূর্ণ করেন। এরপর নিশ্চিতরূপেই হাত খুলে খেলতে হতো তাকে। তবে তিনি বরং দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন হৃদয়ের উপর। নিজের ইনিংসের ৫৫ তম বলে হাসান মাহমুদের উইকেটে পরিণত হন তিনি। অর্থাৎ পরবর্তী ১৩ বলে অঙ্কনের সংগ্রহ ১৩ রান। এই বিষয়টিই কাল হয়ে দাঁড়ায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জন্য।
একজন সেট ব্যাটার হয়েও ঠিকঠাক মেরে খেলতে যেন অস্বস্তি বোধ করেন তিনি। সে সময় যে তাকে উইকেট নিয়েও ভাবতে হতো বিষয়টি তেমন নয়। হাতে ছিল আট উইকেট। হৃদয়ের সাথে তার পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে ভর করে জয়ের সুবাতাস পেতে শুরু করেছিল কুমিল্লা। কিন্তু প্রয়োজনের সময় অঙ্কন ব্যর্থ হয়েছেন নিজের ব্যাটিং গিয়ার পরিবর্তন করতে।
ইনিংসের ১৭ তম ওভারে গিয়ে আউট হয়েছেন অঙ্কন। দলের জয়ের জন্য তখনও প্রয়োজন ছিল ৫৩ রান। অঙ্কন একটু আগ্রাসী হতে পারলেই চিত্রটা হতে পারত ভিন্ন। তবে তেমনটি আর হয়নি শেষ মেশ। আস্কিং রান রেট আকাশ ছুঁয়েছে। পরবর্তী ব্যাটাররা তা ছুঁয়ে দেখতে চেয়ে আউট হয়েছেন। শেষ অবধি ম্যাচ হারতে হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে।
এখানেই আসলে মূল সমস্যার শুরুটা হয়। দেশীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে কার্যকর ইনিংস খেলার প্রবণতা নেই বললেই চলে। অঙ্কন ইনিংসের শুরুতে ‘অ্যাঙ্কর রোল’ পালন করেছেন। সে বিষয়ে তিনি বাহবা পেতেই পারেন। তবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে রানের ধারা বাড়িতে নিতে অপারগ হয়েছেন তিনি। তাতে করে দল শেষ অবধি হেরেছে, তা বলাই যায়।