সবকিছু আসলে সময়ের হাতে। মানুষ চাইলেই যে তাঁর ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে তা নয়। তবে চেষ্টাটা থামিয়ে যেতে নেই। এই যে ধরুণ স্যাম কারেন। তিনি যদি হাল ছেড়ে দিয়ে বসে রইতেন ঘরে, তবে কি আজ হতে পারতেন শিরোপা জয়ী দলের সদস্য? পারতেন না। এই তো গেল বিশ্বকাপের আগেই স্যাম কারেন ছিটকে যান বিশ্বকাপ দল থেকে। আর এবার তো রীতিমত বাজিমাত!
উদীয়মান খেলোয়াড়দের মধ্যে বাঁ-হাতি পেসার স্যাম কারেন দুনিয়াব্যাপী বেশ প্রসিদ্ধ। যদিও একজন অলরাউন্ডার হিসেবেই বিবেচিত হন তিনি। তবুও ইংল্যান্ড দলে মূলত একজন পেসার হিসেবেই স্বীকৃত কারেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দুর্দান্ত পারফরম করেই তিনি কেড়েছিলেন নজর। আর সেই আইপিএল ছিনিয়ে নিয়েছিল বিশ্বকাপ খেলবার দারুণ সুযোগ।
২০২১ সালে ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের সদস্য হওয়াটা রীতিমত অবধারিত ছিল কারেনের জন্যে। তবে সেবার বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্ত অবধি চলেছিল আইপিএল। আর আইপিএলে তিনি নিয়মিত মুখ। খেলেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। সেখানেই পিঠের ইনজুরিতে আক্রান্ত হন কারেন। ব্যাস! বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান কারেন। এই বছরের প্রথম ভাগেও তিনি ছিলেন মাঠের বাইরে। এরপর ফিরে রীতিমত নিজের আলাদা একটা জায়গা তৈরি করে ফেলেন ইংল্যান্ড দলে।
২৪ বছর বয়সী কারানকে নিশ্চয়ই আবেগ ঘিরে ধরে প্রায়শই। তাঁর কাছে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়াটা নিশ্চয়ই স্বপ্নের মত। সে স্বপ্নের পথে ইনজুরির বাঁধা নিশ্চয়ই প্রচণ্ড পীড়া দিয়েছে। তবে সে পীড়াগুলো কারানদের বিশ্বসেরা বানায়। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুবরাজ সিংয়ের কাছে ছয়টি ছক্কা হজম করবার পর দারুণভাবে ফিরে আসেন স্টুয়ার্ড ব্রড। ২০১৬ সালে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের হাতে শিরোপা তুলে দেওয়া বেন স্টোকসও পরবর্তী সময়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক বনে গেছেন।
এসব কিছুই নিশ্চয়ই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে কারানকে। তিনি নতুন উদ্দ্যমে উজ্জীবিত হয়েছেন। ইনজুরি পরবর্তী সময়ে নিজেকে পরিণত করেছেন অন্যতম সেরা হিসেবে। তাইতো, মাত্র ২৪ বছর বয়সে বাঘা-বাঘা সব ক্রিকেটারদের পেছনে ফেলে বনে গেছেন টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট স্যাম কারেন। টুর্নামেন্ট শুরু হবার আগেই বল হাতে দারুণ ছন্দে ছিলেন কারান। সেটা বয়ে নিয়ে আসেন বিশ্বকাপের মঞ্চেও।
প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট শিকার করেন কারেন। এরপর থেকেই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হবার দৌড়ে ভালভাবেই ছিলেন তিনি। উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের রান আটকে রাখাতেও দারুণভাবে ভূমিকা রেখেছেন কারেন। দলের ব্যাটারদের স্বস্তির জায়গাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট তুলে নিয়েছেন। প্রতিপক্ষকে প্রচণ্ড চাপে রেখেছেন টুর্নামেন্ট জুড়ে। ফাইনালেও ঘটেনি তার ব্যতিক্রম।
ফাইনালে তো রীতিমত রেকর্ড গড়া বোলিং করেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের সেরা বোলিং ফিগারের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন স্যাম কারেন। তাঁর উপরে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিস ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইন। দুইটি ফিগারই অবশ্য ২০১২ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে গড়া। কারেন রয়েছেন তাদের পেছনে। মাত্র ১২ রান খরচ করে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিজের পকেটে পুরেছেন তরুণ এই ইংলিশ ক্রিকেটার।
ইন ফর্ম মোহাম্মদ রেজওয়ানকে প্রথমে বোল্ড আউট করেন। এরপর দারুণভাবে খেলতে থাকা শান মাসুদের উইকেট শিকার করেন কারেন। মোহাম্মদ নওয়াজের উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানের বড় সংগ্রহের সকল আশা চুরমার করে দেন স্যাম কারান। চার ওভারে তিন ইকোনমি রেটে করা দুর্দান্ত বোলিংয়ের সুবাদে ফাইনালের ম্যাচ সেরাও বনে যান স্যাম কারেন।
কারান কিংবা স্টোকস অথবা ব্রডদের মত ক্রিকেটাররা উচ্চস্বরে বলে যান ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’।
১৯৮৩ বিশ্বকাপে এই স্যাম কারেনের বাবা কেভিন কারেন বেদম মার খেয়েছিলেন কপিল দেবের কাছে, ১৯৮৩ বিশ্বকাপে। সেই ম্যাচেই ১৭৫ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলেছিলেন। জিম্বাবুয়ে তখন তো বটেই, কখনওই বিশ্বকাপের মঞ্চে সমীহ জাগানোর মত দল হতে পারেননি। তবে, স্যাম ঠিকই সমীহ আদায় করতে পারছেন – যদিও, তাতে বদলে গেছে দেশের নামটা।