আরিফুল ইসলাম, জুনিয়র টাইগারদের মহাতারকা

উনিশের জয়ধ্বনি এখন চারদিকে। এই উনিশের হাত ধরেই বিশে বিশ্বজয় করেছিল বাংলাদেশ। তবে জুনিয়র টাইগারদের আক্ষেপ হয়ে ছিল যুব এশিয়া কাপের শিরোপাশূন্যতায়। সেই শূন্যতা অবশেষে পূর্ণতায় রূপ নিল তেইশে এসে। সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানে হারিয়ে মহাদেশীয় এ আসরের এখন নতুন চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।

জুনিয়র টাইগারদের এ শিরোপা জয়ের অন্যতম সারথি আরিফুল ইসলাম। এই আরিফুল, সেই আরিফুল, যিনি খেলেছিলেন গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও। চেনা প্রাঙ্গনে অবশ্য প্রত্যাশার চাপে নুয়ে পড়েননি এ ব্যাটার। পুরো টুর্নামেন্টেই পারফর্ম করেছেন সকল চাপকে জয় করে। ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে খেলেছিলেন ৯৪ রানের ইনিংস। এবার ফাইনালের মঞ্চে এসেও ৫০ রানে ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন তিনি।

দুবাইয়ের ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে অবশ্য শুরুটা খুব বেশি ভাল হয়নি জুনিয়র টাইগারদের। শুরুতে রান উঠেছে ধীরগতিতে। তার উপর ১৪ রানের মাথায় জিশানের উইকেট বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি খানিক কঠিনই করে তুলেছিল।

তবে সেখান থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন আশিকুর রহমান শিবলী। আর ক্রিজে এসেই ঝড় তুলেছিলেন আরিফুল ইসলাম। শিবলীর সঙ্গে গড়েছেন ৮৬ রানের জুটি। তার মধ্যে ৫০ রান একাই করেন আরিফুল। ৩৯ বলেই  দেখা পান অর্ধশতকের। আর এমন ঝড়ো ইনিংসেই বড় সংগ্রহের ভিত্তি পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

অবশ্য আরিফুল ইসলাম নামটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে আগে থেকেই বেশ পরিচিত। সুদর্শন কাভার ড্রাইভ পুল শট সহ সব শটই যেন আছে এই ব্যাটারের ঝুলিতে। দারুণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নজরও কাড়েন দ্রুতই। ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছিলেন। সেবারের আসরে ব্যর্থ বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি ছিল এই আরিফুল ইসলামের ব্যাটিং।

সে বিশ্বকাপ পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। আর এরপরেই বিশ্ব ক্রিকেটেও নজরে পড়েন এ ক্রিকেটার। সুযোগ পান পাকিস্তান জুনিয়র লিগে। খেলেন গুজরানওয়ালা জায়ান্টসের হয়ে।

যে দলের আবার টিম মেন্টর ছিলেন পাকিস্তানের তারকা ক্রিকেটার শোয়েব মালিক। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই তাই আন্তর্জাতিক মঞ্চে ধাতস্থ হয়ে পড়েন আরিফুল। আর এ কারণেই এবারের এশিয়া কাপে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন মোক্ষম সময়ে।

ভারতের বিপক্ষে সেমিই টেনে আনা যাক। ভারতের দেওয়া ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল বাংলাদেশ। ৩৪ রানেই তিন উইকেট হারিয়েছিল তাঁরা। কিন্তু সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথটা তৈরি করেন এই আরিফুলই।

আহরার আমিনের সাথে চতুর্থ উইকেটে ১৩৪ রানে জুটি গড়েন এই ব্যাটার। যদিও মাঠ ছেড়েছিলেন সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে। কিন্তু ফাইনালে ওঠার দ্বারটা উন্মুক্ত হয়েছিল আরিফুলের সেই ৯৪ রানের ইনিংসের বদৌলতেই।

সেমির পর এবার ফাইনাল ম্যাচেও তিনি খেলেছেন ৫০ রানের কার্যকরী ইনিংস। শিবলীর শতকে হয়তো এই ইনিংস কিছুটা আড়ালেই থেকে যাবে। আরিফুলের যেমন ব্যাটিং এলেগেন্স, ফুটওয়ার্ক, কব্জির ব্যবহার, তাতে তরুণ এ ব্যাটার বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হওয়ার পথেই হাটছেন। আগামীর গল্পে হয়তো এই আরিফুলই বাংলাদেশের সহস্র জনতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হবেন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link