আইপিএলের দ্বিতীয় টেন্ডুলকার

একটা দীর্ঘ অপেক্ষার ফসলই বলা চলে! সেই দু’বছর আগে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস শিবিরে নাম লিখিয়েছিলেন শচীনপুত্র অর্জুন টেন্ডুলকার। কিন্তু এ সময়কালে মুম্বাইয়ের একাদশে সুযোগ মেলেনি একটি ম্যাচেও।

বাবা শচীন টেন্ডুলকার মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মেন্টর। তারপরও অগ্রাধিকার সূত্রে তথাকথিত প্রচলিত ‘ক্রিকেটার বাবার সন্তান’ হিসেবে তেমন একটা সুবিধা পাননি। তবে এবার আর অর্জুন টেন্ডুলকারকে অ-গ্রাহ্য করা গেল না। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে অবশেষে মাঠে নেমেছেন শচীনপুত্র অর্জুন টেন্ডুলকার।

বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সন্তানের বাইশ গজে বিচরণ— ক্রিকেট ইতিহাসে এমন উদাহরণ মোটেই কম নয়। ক্রিকেটের আদি পিতা বলে যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, সেই ডব্লিউ জি গ্রেসের সব ছেলেই ক্রিকেট খেলেছেন। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে লালা অমরনাথের ছেলে মহিন্দার অমরনাথ কীর্তিতে স্বয়ং বাবাকেই ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া সিনিয়র পতৌদি-জুনিয়র পতৌদি, পিটার পোলক-শন পোলক, ল্যান্স কেয়ার্ন্স-ক্রিস কেয়ার্ন্স, রড মার্শ-মিশেল মার্শ— ক্রিকেটার পিতা-পুত্রের ইতিহাসে এমন অসংখ্য নাম রয়েছে।

এ তো অনেক আগের কথা। এই কিছুদিন আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটার শিবনারায়ণ চন্দরপলের ছেলে তেজনারায়ণ চন্দরপলের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হলো। সে হিসেবে শচীনপুত্র অর্জুন টেন্ডুলকার বরাবরই আলোচনায় থাকলেও বাবার মতো ক্রিকেট মাঠে দৃশ্যপটে এসেছেন খুব কমই।

অর্জুন অবশ্য দৃশ্যপটে আসার মতো তেমন কিছু করেও দেখাতে পারেননি। বয়স ২৩। যে বয়সে শচীন দিব্যি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে বেড়িয়েছেন। কিন্তু শচীনপুত্র অর্জুনের স্বীকৃত ক্রিকেট শুরুটাই হয় ২২ বছর বয়সে। গত বছরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। আর ঐ একই বছরে লিস্ট এ ক্রিকেট আর টি-টোয়েন্টিতে পথচলা শুরু। অবশ্য টি-টোয়েন্টি সংস্করণ বাদে তেমন চোখে পড়ার মতো কিছু করেও দেখাতে পারেননি।

তবে এবারের আইপিএলের আগে গোয়াতে অনুষ্ঠেয় এক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ব্যাটে বলে বেশ দারুণ পারফর্ম করেছিলেন অর্জুন টেন্ডুলকার। আর এতেই এবার মুম্বাইয়ের একাদশে সুযোগ পাওয়ার একটা ইঙ্গিত মিলেছিল। যদিও প্রথম তিন  ম্যাচে একাদশের বাইরেই ছিলেন। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচে এসে হঠাতই চমক। মুম্বাইয়ের একাদশের শচীনপুত্র অর্জুন টেন্ডুলকার!

ক্রিকেট ক্যারিয়ারে শচীনের একদম বিপরীত পথে হেঁটেছেন তাঁর ছেলে অর্জুন। বাবা শচীন টেন্ডুলকার ছিলেন তাঁর সময়ের বোলারদের জন্য এক  ত্রাসের নাম। আর পুত্র অর্জুন টেন্ডুলকার হতে চেয়েছেন ব্যাটারদের ত্রাস। এ ছাড়া বাবা ব্যাটিং বোলিং- দুটিই করতেন ডান হাতে। কিন্তু পুত্র আবার পুরোই উল্টো। অর্জুনের প্রধান অস্ত্র বাম হাতের পেস বোলিং। আর এর পাশাপাশি বাম হাতে টুকটাক ব্যাটিং। তবে টুকটাক ব্যাটিং করলে কী হবে! এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ঠিকই তুলে নিয়েছেন একটি সেঞ্চুরি।

২০০৮ সালে ১৪ মে’তে মুম্বাইয়ের হয়ে প্রথম আইপিএল ম্যাচ খেলেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। এর ঠিক ১৫ বছর ২ দিন ঐ একই দলে একাদশে সুযোগ পেলেন তাঁরই ছেলে অর্জুন টেন্ডুলকার। আর এতেই আইপিএলেত ইতিহাসে নাম উঠে গেল এই পিতা-পুত্রের। কারণ তারাই যে প্রথম পিতা-পুত্র যারা আইপিএলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।

নিজের প্রথম আইপিএল ম্যাচে ১৬ বলে ১২ রান করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার।  এবার দেখার পালা তাঁর পুত্র অর্জুন টেন্ডুলকার নিজের আইপিএল অভিষেকে কেমন করেন? তবে ব্যাটার শচীনের পুত্র অর্জুন তো একজন মূলত বোলার। তাই বোলার অর্জুন টেন্ডুলকারের দিকেই এ দিন চোখ থাকার কথা সবার।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link