একটু আক্ষেপ, একটু বার্তা

সেই চাওয়ার কতটা সোহান পূরণ করতে পেরেছিলেন তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। আবার সোহান কতটুকু সুযোগ পেয়েছেন সেটা নিয়েও হতে পারে আলোচনা। তবে এটা ঠিক যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে গতবছর বাংলাদেশের হয়ে বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছেন সোহান, সেগুলো ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যর্থ হবার তাঁর দল থেকে বাদ পড়াটা তাই অবধারিতই ছিল।

২৪৯ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে শেখ জামাল মাত্র ৮০ রানেই হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। মিরপুরের উইকেটে সেখান থেকে ফিরে আসাটা প্রায় অসম্ভবই ছিল। তবে শেখ জামালের হয়ে এক নায়ক মাঠে নামলেন। নিজে সেঞ্চুরি করলেন, দলকে জেতালেন প্রায় একা হাতে। ঠিক এই কাজটাই নুরুল হাসান সোহানের বাংলাদেশের হয়ে করার কথা ছিল। ঠিক এতটুকুই চাওয়া ছিল।

সেই চাওয়ার কতটা সোহান পূরণ করতে পেরেছিলেন তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। আবার সোহান কতটুকু সুযোগ পেয়েছেন সেটা নিয়েও হতে পারে আলোচনা। তবে এটা ঠিক যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে গত বছর বাংলাদেশের হয়ে বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছেন সোহান, সেগুলো ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারেননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যর্থ হবার তাঁর দল থেকে বাদ পড়াটা তাই অবধারিতই ছিল।

তবে প্রশ্ন তোলা যায় ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে তাঁকে বাদ দেয়া নিয়ে। এমনকি ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডে দুই ম্যাচ খেলার পর যখন বাদ পড়েছিলেন প্রশ্ন তোলা যায় সেটি নিয়েও। কেননা ওয়ানডে ফরম্যাটে সোহানের সংখ্যাগুলো রীতিমত অবিশ্বাস্য।

প্রথম সোহান ওয়ানডে দলে আসেন ২০১৬ সালে। সেখানে দলের প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যান যখন ব্যর্থ হয়েছেন তখন একাই দলের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। দুই ম্যাচে যথাক্রমে ২৪ ও ৪৪ রান। বলা ভালো ইনিংসগুলো সোহান খেলেছিলেন যথাক্রমে ৮ ও ৭ নাম্বারে নেমে। ফলে এরথেকে বেশি কিছুও তাঁর করার ছিল না।

মূলত সেই সিরিজে মুশফিকের প্রক্সি দেয়ার জন্যই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁকে। মুশফিক আবার ফিরে এলে আট নম্বরে নেমে নিউজিল্যান্ডে অমন ইনিংস খেলা ছেলেটাকে আর কখনো মনেও করেনি বাংলাদেশের ক্রিকেট। ঠিক পাঁচ বছর ছিলেন জাতীয় দলের বাইরে।

তবে সোহান আবার ফিরে এসেছিলেন গতবছর ডিপিএল দিয়ে। গতবার ব্যাট হাতে শেষ দিকে নেমে প্রায় প্রতি ম্যাচেই ঝড় তুলেছেন। মনে করা হচ্ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা ফিনিশারের অভাব বুঝি তিনিই মেটাবেন। সাথে তাঁর দারুণ উইকেট কিপিং স্কিল তো ছিলই। ওয়ানডে দলে পাঁচ বছর পর ফিরে এসে কাজটা করেও দেখিয়েছিলেন সোহান।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গতবছর ছয় নাম্বারে নেমে ৩৯ বলে ৪৫ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। অথচ এরপর আবার ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়ে গেলেন সোহান। মূলত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বাজে পারফর্মেন্সের কারণেই সোহানের প্রতি এমন অবিচার। অথচ তিন ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সোহানের ঝুলিতে আছে ১১৩ রান। ব্যাটিং গড় ৫৬.৫০ এবং স্ট্রাইকরেট ১০৩.৬৬। এই সংখ্যা গুলোই প্রমাণ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে কত বড় পারফর্মার হতে পারতেন সোহান।

বাংলাদেশের হয়ে সুযোগ না পেলেও এবার ডিপিএলে তা প্রমাণ করে চলেছেন সোহান। টেস্ট দলে থাকায় পুরো আসর খেলতে পারেননি। তবে ফিরে এসে এখন পর্যন্ত শেখ জামালের হয়ে পাঁচটি ম্যাচ খেললেন। এরমধ্যে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে ৬৪ ও গাজী গ্রুপের বিপক্ষে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। তবে আজ ছাপিয়ে গেলেন সবকিছুকেই।

হারতে থাকা শেখ জামালকে জয় এনে দিলেন একা হাতেই। সাত নাম্বারে নেমে ১১৮ বলে ১৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস। ১০ টি চার ও ৫ টি ছয়ে সাজানো এই ইনিংসটি খেলেছেন ১১১.৮৬ স্ট্রাইকরেটে। এছাড়া ৪৯ তম ওভারে ৩ টি ছয় ও ২ টি চার মেরে তুলে নিয়েছিলেন ২৬ রান। নিশ্চিত করেছেন দলের জয়। আরেকটু আক্ষেপও বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন, এই সোহানকে যদি বাংলাদেশ দল পেত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...