আল্যান নট আর তিনি, দুজনের মধ্যে বেশি ভালো কে-এই নিয়ে তর্কের শেষ নেই। কিন্তু একটি জায়গায় নট খানিক এগিয়ে থেকেছেন চিরকাল। ডেরেক আন্ডারউড এর মতো স্পিনারকে দীর্ঘদিন সফল ভাবে উইকেটরক্ষণ করে যাওয়া যাঁর সিভিতে রয়েছে, তাঁকে একটু হলেও বেশি নম্বর তো দিতেই হয়।
তিনি তো সারাজীবনে সেরকম ভাবে খুব ভালো স্পিনারকে কিপ করার সুযোগই পাননি। উপমহাদেশে টেস্ট খেলেছেন মাত্র ছয়টি। বলার মতো ওই একটু আধটু অ্যাশলি ম্যালে। কিন্তু নিয়তি যে তাঁর, রড মার্শের, শাপ মোচনের এইভাবে ব্যবস্থা করবে কে জানতো?
স্বর্গের ঘূর্ণি পিচে আজকের ম্যাচে রড মার্শের মুখোমুখি নিয়তি যে মার্শের দেশেরই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ স্পিন শিল্পীকে দাঁড় করিয়ে দেবে, এই প্ল্যান সম্ভবত নিয়তি নিজেও করেননি। অবশ্য লোকটাই তো সেরকম। তামাম দুনিয়ার ব্যাটারকে বরাবর যিনি ছেলেখেলা করার মতো চমকে দিয়ে এসেছেন, স্বয়ং নিয়তিও কি তাঁর হাত থেকে পার পাবে?
চার মার্চ, ২০২২ – দিনটা বিশ্ব ক্রিকেটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই যুগের সবচেয়ে ক্যারিশমা ওয়ালা ব্যাটার তাঁর শততম টেস্ট খেলছেন। মেয়েদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া ২৪ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট খেলতে নামছে। কোথায় আজ এইসব নিয়ে কত চর্চা হবার কথা। তা না, তিনি এখানেও সবার বাজার খেয়ে বসে আছেন। না থেকেও। যেমন ২০০৩ বিশ্বকাপে খেয়েছিলেন।
আবার একই দিনে যেমন এই অকস্মাৎ খবরে দুনিয়ার মাথা চরকি ঘুরে গেলো, এরকমটাও করতে তিনি অভ্যস্ত। ১৯৯৩ এশেজে তাঁর করা প্রথম বলটা তো আর ক্রিকেট মোদিকে মনে করিয়ে দিতে হবে না। প্রসঙ্গান্তরে বলে রাখি, আজ তাঁর, শেন কিথ ওয়ার্নের চিরকালীন ‘বানি’ ড্যারিল কালিনানের জন্মদিন। কালিনানকে মাঠে এতো জ্বালিয়েছেন, ওয়ার্ন যাবার আগে বোধহয় এটাই তাঁকে পার্টিং গিফট দিয়ে গেলেন।
‘চললাম হে। তোমার জন্মদিনেই। ওপরের মাঠ টায় আবার দেখা হবে পরে কখনও। ততদিন ওয়ার্ন বিহীন পৃথিবীর মজাটা উপভোগ করে নাও।’ – এই পার্টিং গিফটে অবশ্য কালিনান খুব একটা খুশি হবেন কিনা জানি না। তিনি সমাজ মাধ্যমে সেভাবে নেই। থাকলে জানতে পারতাম।
আমার জানা নেই ডেনিস লিলি এখন কি করছেন বা বলছেন। হয়তো স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এতকালের বিশ্বস্ত সঙ্গীকে হালকা স্লেজ করছেন মনে মনে। ‘কট মার্শ বোল্ড লিলির আয়েশ তো অনেক হলো। এবার ওয়ার্ন সামলাও। তবে তো বুঝবো হে তুমি একটি কেউকেটা কিপার।’
মার্শ হয়তো উত্তরে বলছেন, ‘ব্যাটাচ্ছেলে ভিকটোরিয়ানটাকে তোমরা বেশিই ভাও দাও। আজ নিজেই দেখি কেমন বোলার।’ কিন্তু ব্যাটার কে? কেন মৃত্যু। ওয়ার্ন বা মার্শের মৃত্যু হয় না। শরীরটা হয়তো কবরস্থ হয়। কিন্তু কীর্তি? যদ্দিন টেস্ট ক্রিকেট থাকবে, তদ্দিন তো ওয়ার্ন-মার্শ থেকেই যাবেন।
পার্থিব বাস্তবে তাই যেটা কখনও হয়নি, আজ সেটাই হতে চলেছে। আজ আর ‘কট মার্শ বোল্ড লিলি’ নয়। আজকের স্কোরকার্ডে লেখা থাকবে, ‘মৃত্যু – কট মার্শ বোল্ড ওয়ার্ন’। নিশ্চয়ই এমন একটা দিনের প্রত্যাশা কেউ করেনি, কে জানতো নিয়তিতে এমন একটা অভিশপ্ত দিন লেখা হয়ে ছিল।