নতুন মুকুটে পুরনো বাদশাহ

ইনিংসের শেষ দুই বল। তখনও সেঞ্চুরি থেকে সাত রান দূরে বাবর আজম। জিমি নিশামের শেষ দুই বল তখন মহা গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত বাবরের ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য। তবে সেটা ছাপিয়ে বাবরের সেঞ্চুরি মানেই তো পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে আরও সাতটি রান যোগ হওয়া। খানিকটা চিন্তার বাইরে গিয়ে বাবর ঠিকই তুলে নিয়েছেন নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি।

এদিন যেন নিজের ধীর-স্থির সত্ত্বা থেকে বেড়িয়ে আসার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বাবর। সে প্রচেষ্টায় শতভাগ সফল তিনি। তিনিও হাত খুলে, ব্যাট চালিয়ে দ্রুত রান তুলতে জানেন সেই সাক্ষর রেখে গেলেন। লাহোরের দর্শকদের চার ছক্কার আনন্দ বন্যায় ভাসিয়েছেন তিনি।

এদিন যেন আবারও সেই বাবর-রিজওয়ান জুটির দুর্দান্ত পারফরমেন্সের দিন। দুই জনে মিলে আরও একবার পাকিস্তানকে এনে দিয়েছেন শুভ সূচনা। দুইজনে মিলে ৯৯ রানের জুটি গড়েন। তবে বহু সমালোচিত ধীর গতিতে নয়। বরং বেশ দ্রুতই রান এসেছে এই দুই ব্যাটারের ব্যাট থেকে।

আগ্রাসনটা স্বাভাবিকভাবেই বাবরের মধ্যেই বেশি দেখা গেছে। তিনি ইনিংসের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি আদায় করেন। এই পুরো যাত্রায় প্রায় ১৭৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন। মাত্র ৫৮ বলে তিনি পৌঁছে যান তিন অংকের সেই ম্যাজিক ফিগারে।

১১টি চার ও দুইটি ছক্কার মারের মাতিয়েছেন লাহোরের ক্রিকেট সমর্থকদের। এদিন ঠিক কতটা বিধ্বংসী মনোভাবে ছিলেন তার প্রমাণ যেন জিমি নিশামের করা শেষ ওভারটি। সেই ওভারের শেষ চার বলে বাবর তুলে নিয়েছেন ১৬ রান।

প্রথমে মিড অফ অঞ্চল দিয়ে বিশাল ছক্কা।  তখনও সেঞ্চুরি থেকে নয় রান দূরে ছিলেন। এরপর দুরন্ত রানিং বিটুইন উইকেটের বদৌলতে দুই রান। তারপর টানা দুই বলে দুই বাউন্ডারি আদায় করেন। তাতেই নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি আদায় করে ফেলেন বাবর আজম।

একটা জায়াগায় এই সেঞ্চুরি দিয়ে নিজের ধারাবাহিকতার ধারা অব্যাহত রাখলেন বাবর আজম। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে টানা তিন বছরে তিন সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাবর আজম। তার থেকেও বড় বিষয় এই তিনটি সেঞ্চুরি এসেছে সেনা দলগুলোর বিপক্ষে। ক্রিকেটের পরাশক্তি দলগুলোর বিপক্ষে বরাবরই পাকিস্তানের অন্যতম আস্থার নাম বাবর।

প্রথম সেঞ্চুরিটা তিনি করেছিলেন ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। পরেরটা ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করলেন তৃতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম সেঞ্চুরিটা পেয়েছিলেন ১৪ এপ্রিল। আর তৃতীয় সেঞ্চুরি এসে ধরা দিল ১৫ এপ্রিল। মাঝেরটা ছিল ২২ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় সেঞ্চুরি পেতে খুব বেশি সময় নেননি বাবর।

তাছাড়া এই ইনিংসের মধ্য দিয়ে লাগাতার চলে আসা সমালোচনার একটা জবাব দিলেন বাবর। বাবরের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে বেশ নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তান ক্রিকেটে। তাকে বাদ দেওয়ার গুঞ্জনও ছিল বেশ প্রবল। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট নিজেদের পরীক্ষিত সেনানীর উপর রেখেছিলেন ভরসা। তাতেই মিলেছে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসা বাবর আজমের দেখা।

এই বিধ্বংসী রুপটাই বয়ে নিয়ে যেতে চাইবেন বাবর আজম। নিজের আলাদা একটা সাম্রাজ্য তৈরি করেই ক্ষান্ত হবেন তিনি। যেখানে থাকবে না কোন সমালোচনার কিংবা নিন্দার বালাই। কেবলই ‘দ্য গ্রেটনেস অব বাবর’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link