বাবর ছুটছেন বাদশাহী গতিতে

কিভাবে সমালোচনার জবাব দিতে হয়? – আরো একবার জানিয়ে দিলেন বাবর আজম। এমনিতে তিনি সময়ের সেরা ব্যাটারদের একজন, কোনো সন্দেহ ছাড়াই। তবে, স্ট্রাইক রেট নিয়ে তিনি বরাবরই সমালোচিত। ধীর গতির ব্যাটিংয়ের কারণে অনেকে তাঁকে সেরা মানতেও নারাজ। এইতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরির পরও তাঁর ইনিংস নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। অবশ্য সমালোচনাটাও স্বাভাবিক।

সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩১৪ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ৭২ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন বাবর! বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে মাত্র ৭৯ স্ট্রাইক রেটে পাকিস্তান অধিনায়কের কাছ থেকে এমন ইনিংস মেনে নিতে পারেনি সমর্থকরা। যদিও মিডল অর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতায় জয়ের আশা জাগাতে পারেনি পাকিস্তান।

কিন্তু ঠিক পরের ম্যাচেই মানে দ্বিতীয় ম্যাচে দেখা গেল উলটো চিত্র! রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা বাবরের আগ্রাসী রূপ দেখলো ক্রিকেটবিশ্ব। প্রথম ওয়ানডেতে হারের পর স্বাভাবিকভাবেই ব্যাকফুটে ছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় ম্যাচে হারলেই সিরিজ হাতছাড়া হবে স্বাগতিকদের। টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজ হারলে সমালোচকদের তোপের মুখে পড়তে হবে বাবরকে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না।

অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৪৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে হলে গড়তে হবে রেকর্ড। ম্যাচে পাকিস্তানের জয়ের আশা নেই বললেই চলে। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণের সামনে এই রান পাকিস্তানের জন্য হিমালয়ে চড়ার মতোই ব্যাপার। তবে বাবর ও ইমামের সেঞ্চুরিতে সেই অসাধ্য সাধন করে ফেলে পাকিস্তান। ফখর জামানের ৬৪ বলে ৬৭, ইমামের ৯৭ বলে ১০৬ ছাড়া বাবরের ৮৩ বলে ১১৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে রেকর্ডগড়া এক রান তাড়া করার ম্যাচে জয় পায় পাকিস্তান।

১১ চার ও ১ ছক্কায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দেখা গেল বাবর মুদ্রার উল্টোপিঠ। এক ইনিংসে যেন বন্ধ করে দিয়েছেন সমালোচকদের মুখ। স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ের বাইরে গিয়ে এক আগ্রাসী বাবরকেই দেখা গেল দ্বিতীয় ম্যাচে।

এরপর সিরিজের শেষ ওয়ানডেতেও বাবর ধরে রাখলেন ধারাবাহিকতা। অজিদের দেওয়া মাত্র ২১১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে আবারও সেঞ্চুরি করেন বাবর! ১১৫ বলস ১২ চারে বাবরের ১০৫ ও ইমামের অপরাজিত ৮৯ রানের সুবাদে ৯ উইকেটের বড় জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয় পাকিস্তান। টেস্টে দুর্দান্ত সময় কাটানোর পর ওয়ানডেতেও ধারাবাহিক রানে ছিলেন বাবর।

সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৫৭ রানের ইনিংসের মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে চার হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন বাবর। পরের ম্যাচেই ১১৪ রানের ঝড়ো ইনিংসের পথে আরেক রেকর্ডে নাম লেখান এই পাকিস্তানি তারকা। দ্রুততম ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ১৫ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন বাবর।

৮৩ ইনিংসে ১৫ সেঞ্চুরি করা বাবর টপকে গেছেন সাবেক প্রোটিয়া তারকা হাশিম আমলাকে। ৮৬ ইনিংসে ১৫ সেঞ্চুরি করে এই রেকর্ড নিজের নামে করেছিলেন আমলা। একই সাথে পাকিস্তানের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির করলেন বাবর।

১৯৯০ সালে ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৮২ রানের ইনিংস খেলেন ইমরান খান। এটাই ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে কোনো পাকিস্তানি অধিনায়কের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। ৩২ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে অজিদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের মালিক এখন বাবর!

সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির মধ্যে দিয়ে আরও এক রেকর্ডে নাম তুলেন এই পাকিস্তানি অধিনায়ক! নিজের ১৬তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির ম্যাচে মোহাম্মদ ইউসুফকে টপকে পাকিস্তানের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক বনে যান বাবর।

২০ সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ডটি পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওপেনার সাঈদ আনোয়ারের দখলে। শুধু তাই নয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচটি সেঞ্চুরির মালিক এখন বাবর। তিন সেঞ্চুরি নিয়ে এই রেকর্ডটি ছিল আজহার আলীর দখলে।

রানের ধারাবাহিকতা আর পরিসংখ্যানই যথেষ্ট বাবরকে সময়ের অন্যতম সেরা একজন প্রমাণ করতে। সমালোচনা পাশ কাটিয়ে একের পর এক রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়ে ছুঁটছেন বাবর। রঙিন জার্সিতে এই আগ্রাসী বাবরকেই দেখতে চায় ভক্ত-সমর্থকরাও। অন্যথায় বাবরের সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ থাকার কোনো কারণ নেই। বাবর খেলছেন, রান করছেন, বাবর ছুঁটছেন আপন গতিতে। আর বাবর মানেই তো বাদশাহ, গতিটাও তাই বাদশাহী-ই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link