সম্রাটের হারানো বিজ্ঞপ্তি

সম্রাট হয়েই তো তিনি পদার্পণ করেছিলেন বিশ্বকাপের মহামঞ্চে। তবে নিজের সাম্রাজ্য আর দখলে রাখতে পারছেন কই! গোধুলি লগ্নে যেমন দিন মিলিয়ে যায় ঠিক তেমনি যেন মিলিয়ে যাচ্ছেন বাবর আজম। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের কাণ্ডারি তিনি। সেনাপতিও তিনি। তাঁর উপরেই তো ন্যাস্ত কত দায়িত্ব। তবে সেসবের যথার্থ মূল্যায়ন ঠিক করতে পারছেন না ব্যাটিংয়ের সম্রাট বাবর।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের একবারের চ্যাম্পিয়ন দল পাকিস্তান। স্বাভাবিকভাবেই সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রিকেট দর্শকদের প্রত্যাশা থাকে পাকিস্তানকে ঘিরে। তাঁরাও হয়ত চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে সামিল হবে। যেমনটা হয়েছিল গেল আসরে। রীতিমত অপ্রতিরোধ্য এক দল ছিল পাকিস্তান সেবার। তবুও বিশ্বকাপটা জেতা হয়নি। আরও একটা বিশ্বকাপ জয়ে স্বপ্ন বিভোর পাকিস্তান ক্রিকেট দল বাবর আজমের কাঁধে ভর করেই হাজির হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে।

এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তান ব্যাটিং দূর্বলতা নিয়েই পারি জমিয়েছিল তাসমান পারে। সেখানে আস্থার একটা বড় অংশ জুড়েই ছিলেন অধিনায়ক বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে সেনাপতি যেন মুখ ঘুরিয়ে নিলেন অথবা তাঁর ভাগ্য। অফফর্মের গ্যাড়াকলে পড়ে গেছেন বাবর। তিনি নেই স্বস্তিতে, সেই সাথে স্বস্তি নেই পাকিস্তান শিবিরেও। ব্যাটিংয়ে তাঁর ব্যাট যেন হাসতেই ভুলে গেছে। আর সেটার প্রভাব পড়ছে পাকিস্তানের গোটা বিশ্বকাপ যাত্রায়। এটা অবশ্য অনুমেয়ই ছিল।

এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে পাকিস্তান খেলেছে তিন ম্যাচ। সেই তিন ম্যাচেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ বাবর আজম। হাইভোল্টেজ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে তিনি ফিরেছেন শূন্য রানে। এরপর অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সুযোগ ছিল ফর্মে ফেরার। পাকিস্তান শিবিরে খানিক স্বস্তি ফেরাবার। তবে সেটা আর করতে পারেননি। দুই ম্যাচে তাঁর রান যথাক্রমে চার এবং চার। কিন্তু কথা ছিল তাঁরই পারফরম করবার। সে আশাটুকু তো তিনিই দেখিয়েছিলেন।

বিশ্বকাপের আগে দুই ভিন্ন সিরিজে ১২ ম্যাচ খেলেছিলেন বাবর আজম। সেই ১২ ম্যাচে তিনি তাঁর স্বভাবচারিত রুপেই আবির্ভূত হয়েছিলেন। একখানা শতক ছাড়াও তিন খানা অর্ধশতক এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। প্রতিপক্ষও ছিল তুলনামূলক শক্ত, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শতক আর অর্ধশতকের পাশাপাশি একটা করে অর্ধশতক করেছেন তিনি নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিপক্ষে। এসবকিছুই প্রমাণ করে বিশ্বকাপের আগেও তিনি ছিলেন রানে।

এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, বিশ্বকাপে তবে কেন এত মলিন তিনি? সেটার একটা সোজসাপ্টা উত্তর হতে পারে, তিনি চাপ সামলে উঠতে পারছেন না। এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার দূর্বলতা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে।

বাবরের উপরে নানা কারণে আঙুল উঠেছে। তাছাড়া এই সময়ের সেরা ব্যাটার হিসেবে বাবরের কাছ থেকে প্রত্যাশাও থাকে দর্শক-সমর্থক থেকে শুরু করে দলের। এত কিছুর চাপ সামলে বাইশ গজে ঠিক মনোযোগ দিতে পারছেন না বাবর আজম।

বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে পারফরম করাটাও খুব একটা সহজ নয়। এখানে খেলা প্রতিটা খেলোয়াড় নিজেদের ছাপ ফেলে রেখে যেতে চায়। নিজের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে চায় দলের জন্যে। ঠিক সে জায়গায় কোথাও একটা পিছিয়ে যাচ্ছেন বাবর আজম। তবে এমনটা তো হবার কথা ছিল না। বরং তিনি তো চ্যাম্পিয়ন ব্যাটার। তিনি তো টর্নেডোর মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন বহুবার। সেই বাবরকে যেন হারিয়ে খুঁজছেন বাবর নিজেই।

সময়টা অবশ্য বাকি নেই খুব একটা। বিশ্বকাপ যাত্রায় পাকিস্তানের সমীকরণটা বেশ রুদ্ধ। সংকীর্ণ এক পথ খোলা সেমিফাইনালের। সে পথেও আবার ভাগ্যের সহয়তা চাই পাকিস্তানের। তবুও বাবর আজমের ব্যাটে রান ফিরুক তেমনটাই হয়ত প্রত্যাশা গোটা বিশ্ব ক্রিকেটের। দৃষ্টিনন্দন সব শটের পসরা বসুক আরও একবার। নান্দনিকতার চর্চা হোক আবারও। সেই সুযোগ কি দেবেন বাবার? সময়ের অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link