সাকিব, রহস্যাবৃত যার অধিনায়কত্ব

ক্রিকেট মাঠে অধিনায়কদের সকল চাপ নেওয়ার একটা প্রবল ক্ষমতা থাকতে হয়। দল খাদের কিনারায়, সমস্ত উপায় অবলম্বন বদ্ধ। তাঁর মাঝেও অধিনায়কদের নিজের কৌশল বের করে নিতে হয়। দলের প্রয়োজনে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া জানতে হয়। সফল অধিনায়ক কিংবা কৌশলী অধিনায়ক, যেটাই বলুন, একজন অধিনায়ককে ঠিক এভাবেই দল পরিচালনা করতে হয়।

ক্রিকেট মাঠে অধিনায়কদের সকল চাপ নেওয়ার একটা প্রবল ক্ষমতা থাকতে হয়। দল খাদের কিনারায়, সমস্ত উপায় অবলম্বন বদ্ধ। তাঁর মাঝেও অধিনায়কদের নিজের কৌশল বের করে নিতে হয়। দলের প্রয়োজনে সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া জানতে হয়। সফল অধিনায়ক কিংবা কৌশলী অধিনায়ক, যেটাই বলুন, একজন অধিনায়ককে ঠিক এভাবেই দল পরিচালনা করতে হয়।

যদিও দিনশেষে অধিনায়কের সব পরিকল্পনা কতটা ফলপ্রসূ তা ঐ ম্যাচ জয়-পরাজয়ের উপরই নির্ধারণ করে। সে বিবেচনাতে সাকিব এখন পর্যন্ত তাঁর অধিনায়কত্বে সফল। দুই ম্যাচেই ১৫০ এর নিচে রান রেখেও বোলারদের ঠিকঠাক প্লেসমেন্টে ডিফেন্ড করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, সাকিব কি বোলিং সেটাপে একটু বেশিই ঝুঁকি নিয়ে ফেলছেন? 

আপাতত দুই জেতা ম্যাচের দিকে নজর দেওয়া যাক। সাকিব এই দুই ম্যাচেই বোলিং সাজিয়েছেন স্বীকৃত পঞ্চম বোলার ছাড়া। আর এই দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ভুক্তভোগী হয়েছে ঐ একজন স্বীকৃত বোলারের অনুপস্থিতিতেই।

শেষ পর্যন্ত জয়ের দেখা মিলেছে বটে, তবে তার জন্য চোখ রাখতে হয়েছে ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত। তাই গৎবাঁধা সূত্র মেনে সাকিবকে অন্তত এই দুই ম্যাচে ক্যাপ্টেন্সি করতে দেখা যায়নি। ম্যাচের পরিস্থতি অনুযায়ী যেটা মনে হয়েছে সেটিই তিনি করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটু বেশিই ঝুঁকিই নিয়ে ফেলেছেন। তবে ম্যাচের ফলটা পক্ষে চলে যাওয়ায় কোনো কিছু বলার আসলে অবকাশ থাকে না। 

কিন্তু সাকিবের অধিনায়কত্বের ধরণে আবার আরেকটা জিনিস পর্যবেক্ষণ করা যায়। ম্যাচ জেতার ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্তগুলো ট্যাকটিক্যালি সেরা মনে হবে। আবার তার বিপরীত ঘটলে পুরো দায়টাও সাকিবের কাঁধে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

যেমন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচেই যদি শেষ ওভারে মোসাদ্দেক ১৬ দিয়ে আসতো তাহলে এতক্ষণে সাকিবের অধিনায়কত্ব নিয়ে মুণ্ডুপাত শুরু হয়ে যেত। একই কথা প্রযোজ্য ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচেও। তাহলে কি অধিনায়কত্বের মুনশিয়ানায় সাকিবের জয়/পরাজয়টা ভাগ্যের শিকেই ঝুলছে?

ব্যাপারটা আসলে তেমনও না। কারণ আপনি যখন স্কোরবোর্ডে গড়পড়তা রান তুলবেন বোলিং সেটাপেও আপনাকে আউট অব দ্য বক্স চিন্তাভাবনা করতে হবে। আপনাকে কিছু সাহসী সিদ্ধান্তও নিতে হবে। সাকিবও সেটাই করেছেন, একদম তার নিজের মতো করে।

আর এমন ধরনে সাকিব যে ধারাবাহিক সাফল্য পাবেন সেটাও নয়। ভবিষ্যতে এটার চড়া মাশুলও তাঁকে দিতে হতে পারে। যেমন আজকের ম্যাচেই সেরা বোলারদের ওভার তিনি শেষ করে ফেলেছেন ডেথ ওভারের আগেই। ডেথ ওভারে বল করার মতো তেমন কোনো বোলার নেই। নিজে এসেছেন ১৯ তম ওভারে। ২০ তম ওভারে গিয়েছেন পার্ট টাইম বোলার। সব মিলিয়ে শেষ ২ ওভারে ২৬ রান ডিফেন্ড করার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ভাগ্যটা আজ সুপ্রসন্ন ছিল। কারণ একটু এদিক ওদিক হলেই কিন্তু ম্যাচের ফলটা বদলে যেত। 

সাকিবের অধিনায়কত্বে আরেকটা দিক হলো, উইকেটে তিনি কখনোই প্রতিপক্ষ দলের কোনো জুটিকে থিতু হতে দিতে নারাজ। অর্থাৎ শুরুতেই চাপে ফেলে প্রতিপক্ষকে ব্যাকফুটে ফেলে দেওয়ার দিকেই লক্ষ্য তাঁর। জিম্বাবুয়েকে ৩৫ রানে ৪ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরও শেন উইলিয়ামস আর চাকাভার জুটি যখন একটু দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই তিনি তাসকিনকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন। ফলও মিলে তাতে। সেই তাসকিনের বলেই আউট হন চাকাভা। 

তবে এমন স্ট্র্যাটেজিতে ঝুঁকিও রয়েছে। শেষ দিকে এসে অনেকটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েই অন্যদের হাতে বল তুলে দিতে হচ্ছে। মূলত ৫ বোলার না খেলানোর সীমাবদ্ধতা এটাই। এমনিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অনেক স্বীকৃত বোলার যে কোনো দিনে খারাপ করে বসেন। এ জন্য অন্য দলগুলো মূল বোলার ছাড়াও একাদশে অতিরিক্ত অপশন রাখেন। কিন্তু বাংলাদেশ সেখানে এক জন কম বোলার নিয়েই খেলেছে। ম্যাচ পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়ে যায় এখানেই। 

২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ধোনি পাকিস্তানের বিপক্ষে বলে এনেছিলেন যোগিন্দার শর্মাকে। অথচ তার আগে ইনিংসের সবচেয়ে খরুচে বোলার ছিলেন তিনি। তবে দিনশেষে ধোনির সেই সিদ্ধান্ত কাজে দিয়েছিল। আবার ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালেও তিনি একই কাজ করলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওভারে ১০ রান ডিফেন্ড করতে বল হাতে তুলে দিয়েছিলেন আশ্বিনকে।

একবার ভাবুন, ফাইনাল ম্যাচের এমন সময়ে তিনি বল করতে পাঠিয়েছিলেন একজন স্পিনারকে। যেখানে সাধারণ ম্যাচেই শেষ ওভারগুলোতে স্পিনারদের সাধারণত দেখা যায় না। অথচ ধোনির সেই সিদ্ধান্তও অনুকূলে গিয়েছিল। সে বার আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছিল ভারত। 

অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রে তাই একটু স্বকীয়তাই থাকতে হয়। সাকিবের মাঝেও সেই স্বকীয়তা প্রতীয়মান। তবে সাকিব কেন যেন ধাঁধাই ফেলে দেন। কিভাবে প্লান করছেন, আর কিভাবে এক্সিকিউট করছেন, সেটাই যেন একটা রহস্যের বিষয়। প্রতিপক্ষদের কাছে সেই রহস্য এখন উন্মোচন না হলেই হলো। সাকিবীয় অধিনায়কত্বের রহস্যাবৃতে আটকে থাকুক প্রতিপক্ষরা। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...