বাবর আজম: ব্যাটিংয়ে টপ, অধিনায়কত্বে ফ্লপ

ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিংয়ের বাইরেও ক্রিকেটের আরেকটি শৈল্পিক দিক রয়েছে, সেটি হলো অধিনায়কত্ব। দলকে নেতৃত্ব দেয়ার গুণ সবার থাকে না, সবাই পারে না চাপের মুখে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের পথ দেখিয়ে দিতে। তবে কেউ কেউ পারেন, নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতা তাদের শিরা-উপশিরায় মিশে থাকে। কপিল দেব, রিকি পন্টিং কিংবা মহেন্দ্র সিং ধোনিরা এমনই কয়েকজন।

ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়কের তালিকায় সবার উপরে তাদের নাম থাকবেই। আর এদের সবারই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। দুর্দান্ত অধিনায়কত্বের পাশাপাশি এরা সবাই পারফর্মও করেছেন সমান তালে। ধোনি, পন্টিংদের মতই দলের সেরা পারফর্মার পাকিস্তানের বর্তমান অধিনায়ক বাবর আজম; কিন্তু ব্যাট হাতে যতটা সফল তিনি, অধিনায়ক হিসেবে ততটাই ফ্লপ।

২০১৫ সালে অভিষেকের পর থেকে ক্রিকেট দুনিয়ায় ধীরে ধীরে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন বাবর আজম। ঝিমিয়ে পড়া পাকিস্তান ক্রিকেট জেগে উঠে বাবরের ব্যাটে ভর করে। গত কয়েক বছর ধরে তিন ফরম্যাটেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে চলছেন এই ডানহাতি। প্রজন্মের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেও দেখা হয় তাঁকে।

কিন্তু অধিনায়ক বাবর আজমের চিত্র আঁকতে গেলেই সেই ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যায়। অধিনায়ক বাবর মাঠে যেন দিশাহীন নাবিকে পরিণত হয়ে যান। দল নির্বাচন, ব্যক্তিত্ব, খেলা চলাকালীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ – কোথাও অধিনায়ক সুলভ আচরণ করতেন পারছেন না তিনি।

সর্বোপরি পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে ততটা খারাপ অবস্থায় নেই বাবর আজম। ২০১৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মোট ৬৬ ম্যাচে টস করতে নেমেছিলেন তিনি। এর মাঝে ৪০ ম্যাচের শেষ হাসি হেসেছে তাঁর দল; বাকি ২১ ম্যাচে দেখেছেন পরাজয়ের মুখ আর পাঁচ ম্যাচে হয়নি কোন ফলাফল।

আবার ওয়ানডে ফরম্যাটে ১৮ ম্যাচ অধিনায়কত্ব করা বাবর আজম জিতেছেন বারো ম্যাচে। যদিও বাকি ছয় ম্যাচে হেরেছে তাঁর দল। সাদা পোশাকে এখন পর্যন্ত ১৭ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ১২ বারই জয় পেয়েছেন বাবর আজম। ৫ ম্যাচে হেরেছেন আর বাকি দুই ম্যাচ নিষ্পত্তি হয়েছে ড্র-তে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ের হিসেবে বাবর আজম রয়েছেন অস্বস্তিতে। সর্বশেষ ইংল্যান্ড সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে ধবল ধোলাই হয়েছে বাবর আজমের পাকিস্তান। অথচ ব্যাট হাতে সেই সিরিজের সেরা তিন রান সংগ্রাহকদের একজন ছিলেন পাক কাপ্তান। ইংলিশদের বিপক্ষে ঠিকঠাক রানটা করলেও বল হাতে নখদন্তহীন ছিল স্বাগতিকরা; ফিল্ড সেটআপও ছিল খুঁত। স্বাভাবিকভাবেই এসবের দায় ভার আসে বাবর আজমের উপরেই।

এর আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকেও টেস্টে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুই দেখায় হয়েছে ড্র, আর শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে সফরকারী অজিরা। নিজেদের দেশে খেলা তবু ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়াকে অন্তত একবার পরাজয়ের স্বাদ দিতে না পারার ব্যর্থতা বাবরের কাঁধেই বর্তায়।

অবশ্য ব্যাটার বাবর আজম ঠিকই পারফর্ম করেছেন। তাঁর শাণিত ব্যাট থেকে ফোয়ারার ন্যায় এসেছে রান; ২০২২ সালে সব ফরম্যাট মিলিয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন তিনি। কিন্তু অধিনায়কের আসনে এই পাকিস্তানি ঠিক যেন উল্টো। ভুলে ভরা কাপ্তানিতে প্রতিপক্ষের কাজ সহজ করে দিয়েছেন তিনি। শোয়েব আক্তার, মোহাম্মদ হাফিজদের মত পাক কিংবদন্তিরাও বাবরের নেতৃত্ব গুণের সমালোচনা করেছন।

ব্যাট হাতে বাবর আজম যথেষ্ট পরিপক্ব হলেও অধিনায়ক হিসেবে তিনি যে এখনো প্রায় নবিশ সেটি পরিষ্কার। অবশ্য অধিনায়কত্ব শেখার বিষয় না, এটা অনেকটাই স্রষ্টা প্রদত্ত আশীর্বাদের মতই। সবাই চাইলেই সেরা নেতা হতে পারবেন না। তবু সঠিক সময়ে সতীর্থরা এগিয়ে আসলে দলকে এগিয়ে নেওয়াটা সহজ হবে বাবর আজমের জন্য। আপাতত হয়তো এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এই সুপারস্টার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link