মুঘল সম্রাট বাবরের প্রথম সিংহাসন চ্যুতি হয়েছিল তাঁরই চাচার কারণে। প্রায় অর্ধ সহস্র বছর সেই একই নামের ঘটনায় সাদৃশ্যতা। যদিও প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন। ঘটনা হলো, বাইশ গজের এ কালের বাবর আজম এবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সিংহাসন হারালেন তাঁরই ওপেনিং পার্টনার মোহাম্মদ রিজওয়ানের কাছে। এর মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সেরা ব্যাটারের সিংহাসনে দীর্ঘ ১১৫৫ দিনের রাজত্ব শেষ হলো তাঁর।
এশিয়া কাপে হংকংয়ের বিপক্ষে ৫৭ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলার পর সুপার ফোরের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৭১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন রিজওয়ান। অপরদিকে এ দুই ম্যাচে বাবর আজম যেন ছিলেন নিজের ছায়ার মতো। দুই ম্যাচ মিলিয়ে করেছিলেন মোটে ২৩ রান।
এশিয়া কাপে টানা ব্যর্থতার ফল পেয়েছেন নিজেও। সবশেষ আইসিসি’র টি-টোয়েন্টি সেরা ব্যাটার র্যাংকিংয়ে হারিয়েছেন নিজের শীর্ষস্থান। ১ থেকে নেমে গিয়েছেন ২ এ। আর দলের সতীর্থ এবং ওপেনিং পার্টনার মোহাম্মদ রিজওয়ান উঠে গিয়েছেন এক লাফে এক নম্বরে। ৭৯৬ রেটিং পয়েন্ট থেকে ক্যারিয়ার সেরা ৮১৫ রেটিং পয়েন্টে উন্নীত হওয়া মোহাম্মদ রিজওয়ান ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো আইসিসি’র টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে শীর্ষ জায়গা দখল করলেন।
পাকিস্তানের হয়ে প্রথম ব্যাটার হিসেবে আইসিসি’র টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে এর আগে শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন মিসবাহ উল হক। ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল থেকে ২০০৯ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ৩১৩ দিন তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা ব্যাটার ছিলেন। এখন রিজওয়ান কতদিন এ সিংহাসনের মুকুট ধরে রাখবেন সেটাই দেখার বিষয়।
তবে র্যাংকিংয়ে শুধু শীর্ষ জায়গাতেই রদবদল ঘটেনি। এশিয়া কাপে দারুণ পারফরম্যান্সে কেউ এক লাফে উঠে এসেছেন আবার বাজে পারফরম্যান্সে কারোর অবনমনও হয়েছে।ভারতের বিপক্ষে দারুণ অর্ধশতক করায় র্যাংকিংয়ে এক ধাপ এগিয়ে ৮ এ উঠে এসেছেন শ্রীলঙ্কার ওপেনার পাথুক নিশানকা। এছাড়া আরেক ওপেনার কুশাল মেন্ডিস ২২ ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছেন ৪১ এ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭২ রানের ইনিংস খেলায় র্যাংকিংয়ে উন্নতি হয়েছে রোহিত শর্মারও। ১৭ থেকে উঠে এসেছেন ১৩ তে। একইভাবে বিরাট কোহলি ৩৩ থেকে ৪ ধাপ এগিয়ে রয়েছেন ২৯ নম্বরে। সুরিয়াকুমার যাদব রয়েছেন ৪ নম্বরে।
সুপার ফোরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৪ রানে ইনিংস খেলেছিলেন আফগানিস্তানের রহমানুল্লাহ গুরবাজ। এর ফল মিলেছে র্যাংকিংয়েও। ২৯ নম্বর থেকে ১৪ ধাপ এগিয়ে আছেন ১৫ তে। আর আরেক ব্যাটার নাজিবুল্লাহ জাদরান ১৫ ধাপ এগিয়ে ৪৩ থেকে উঠে এসেছেন ২৮ নম্বরে।
বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্য ৫০৫ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ রয়েছেন ৩৬ নম্বরে। ২ ধাপ অবনমনে নাইম শেখের অবস্থান এখন ৪৭ এ। অবনমন হয়েছে লিটন দাশ আর আফিফ হোসেনেরও। আফিফ ১ ধাপ পিছিয়ে আছেন ৫০ এ আর লিটন দাশ রয়েছেন ৫৪ তে। অবশ্য এক ধাপ এগিয়ে র্যাংকিংয়ের ৬৭ নম্বরে রয়েছেন সাকিব আল হাসান।
চাচার কাছে সিংহাসনচ্যুত হলেও সম্রাট বাবর পরবর্তীতে আবারো তাঁর সিংহাসনে বসেছিলেন। ফিরে পেয়েছিলেন রাজত্ব। এখন দেখার পালা, টি-টোয়েন্টিতে বাবর আজম তাঁর সেরা ব্যাটারের পুরনো মুকুটটি সামনে ফিরিয়ে আনতে পারেন কিনা। সে সুযোগ তাঁর সামনে রয়েছে। একই ভাবে রিজওয়ানেরও সুযোগ রয়েছে নিজেকে আরো অনেক দূর নিয়ে যাওয়ার। সবাইকে ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা যে তাঁর আছে সেটা তো এখন প্রমাণিতই।
তবে, সামনে প্রত্যাশার চাপে নুয়ে না পড়লেই হলো। অবশ্য বাবর-রিজওয়ানদের এমন সুস্থ প্রতিযোগিতায় লাভটা হচ্ছে পাকিস্তানেরই। বিশ্বের সেরা দুই ব্যাটারকে নিয়ে বিশ্বজয় না হোক মহাদেশীয় ট্রফিজয়ের আশায় তারা বুঁদ হয়ে থাকতেই পারে।