ব্যাক টু ব্যাক সাকিব

লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকলে, সততার সাথে পরিশ্রম করে গেলে সফলতা আসতে বাধ্য। যোগ্য একজন মানুষ পরিশ্রমী হলে সুরঙ্গের শেষে তাঁকে আলো ধরা দিতে বাধ্য। আর সেই মানুষটা যদি হন – সাকিব আল হাসান, তাহলে তাঁর ওপর সহজেই ভরসা হারানো ঠিক না।

ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) এবারে তাঁর শুরুটা ভাল হয়নি। বল হাতে উইকেট পেলেও ছিলেন একটু খরুচে। সাথে ব্যাট হাতে টানা দু’টি ডাক। সাকিবকে এই সময় গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্স একাদশের বাইরে পাঠিয়ে দিলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না।

কিন্তু, সাকিবের অলরাউন্ড অভিজ্ঞতা কিংবা তাঁর সামর্থ্যটা জানে গায়ানা। তাইতো পরের দু’টি ম্যাচও তিনি খেললেন। আর যথারীতি টানা দু’টি ম্যাচ সেরার পুরস্কার। শুরুটা হয় ২৫ বলে ৩৫ রান ও ২০ রান হজম করে পাওয়া তিনটি উইকেটের সুবাদে। এর সাথে তুখোড় একটা রান আউট যোগ করে নিন। তাতে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে নিশ্চিত হয় বড় জয়।

পরের ম্যাচে সাকিব যেন আরও দানবীয়, আরও কার্যকর – বিশেষ করে ব্যাট হাতে। চার নম্বরে নামা সাকিব এবার ৩০ বলে করেছেন ৫৩ রান। ইনিংসে পাঁচটি চারের সাথে ছিল তিনটি ছক্কা। স্ট্রাইক রেট ১৭৬.৬৬। পরিপূর্ণ এক টি-টোয়েন্টি ইনিংস।

এর আগে বল হাতেও ২.৩ ওভার বোলিং করে ১২ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। ইকোনমি ৪.৮। টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং ও বোলিং এর এই কম্বিনেশনটাই তো সাকিবের ইউনিক সেলিং পয়েন্ট।

গায়ানার ‘হোম ভেন্যু’ প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বার্বাডোজ রয়্যালস প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১২৫ রানে অলরাউট হয়। জবাবে সেই লক্ষ্যে মাত্র ১৪.৩ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গায়ানা। থ্যাঙ্কস টু সাকিব। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচনে তাই এবারও বেগ পেতে হল না।

বাংলাদেশ দল যখন বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ক্যাম্প করতে ব্যস্ত তখন সাকিব উড়াল দিয়েছিলেন সিপিএলে। বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের দলের সাথেই থাকা উচিৎ। এমন সময় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে সাকিবের চলে যাওয়ায় সমালোচনাও হয়েছিল।

এরপর প্রথম দুই ম্যাচে তাঁর ব্যর্থতা সেই সমালোচনার আগুনে নতুন করে ঘিঁ ঢালে। কিন্তু, মনে রাখতে হবে নামটা যে সাকিব। তিনি জানেন কিভাবে সমালোচনার জবাব দিতে হয়! কিভাবে ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়েও জীবনের জয়গান গাইতে হয়। টানা দু’টো ম্যাচ সেরার পুরস্কার সেটাই তো প্রমাণ করে।

অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলের হাতে খুব বেশি সময় নেই। এই সময়ে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সেরা ক্রিকেটারের সেরা ফর্মে থাকটা জরুরী। ফলে, সাকিবের ব্যাটে, বলে ও ফিল্ডিংয়ে উজ্জ্বল থাকাটা আদতে টিম বাংলাদেশের জন্যই উপকারী।

সাকিব বড় খেলোয়াড়, বড় আসরের খেলোয়াড়। ফলে, নিশ্চয়ই তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকেই নজর রাখছেন, নিজেকে আরও  একটাবার মেলে ধরার জন্য নেটে, অনুশীলনে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছেন। আর সেই চেষ্টার একটা ট্রেলার হোক এই সিপিএলের পারফরম্যান্স। মূল ‘পিকচার’টা জমা থাকুক বিশ্বকাপের জন্য। তাহলেও অন্তত কিছুটা হলেও আশা থাকে বাংলাদেশ দলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link